সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ অপরাহ্ন

মেয়ের বিয়েতে ‘থাকতে পারেন’ মৃত বাবা-মা!

আইটি ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আমরা এখন পৌঁছেছি তথ্য প্রযুক্তির এক চরম উন্নতির যুগে। যেখানে প্রতিনিয়তই কিছু কিছু না কিছু নতুন প্রযুক্তির সাক্ষাত মেলে আমাদের সাথে। স¤প্রতি ভারতের তামিলনাড়ুর দীনেশ এসপি ও জনগানন্দিনী পারিবারিক ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তির মিশেলে এক অভিনব বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। সৌজন্যে ‘মেটাভার্স’। মেয়ে-জামাইকে আশীর্বাদ করলেন মৃত বাবাও। যে বিয়ে নিয়ে এখন চলাছে আলোচনা। কারণ, পশ্চিমের দেশগুলিতে মেটাভার্সে নানা সামাজিক উৎসব আয়োজিত হলেও ভারতে এটাই প্রথম। ১৯৯২ সালে লেখক নীল স্টিফেনসন তার বই ‘স্নো ক্র্যাশ’এ প্রথম মেটাভার্সের উল্লেখ করেন, যা কি না এক ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল দুনিয়া। গত বছর ২৮ অক্টোবর ফেসবুক অধিকর্তা মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুকের নাম বদলে ‘মেটা’ ঘোষণা করেন। এই ‘মেটা’-রই নতুন অবতার মেটাভার্স।
মেটাভার্স এমন এক ভার্চুয়াল দুনিয়া, যেখানে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, হলোগ্রামের থ্রি-ডি অবতার, ভিডিয়ো এবং জনসংযোগের মিলন ঘটেছে। এই দুনিয়ায় যে কেউ ভার্চুয়াল কনসার্টে যোগ দিতে পারবেন। কেউ চাইলেই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় দেশ বিদেশে ঘুরতে যেতে পারবেন। ভার্চুয়াল শিল্পকলাও তৈরি করতে পারবেন বা শপিংও করতে পারবেন। এমন কি ভার্চুয়াল জমি কেনাবেচাও করতে পারবেন। অনেকে সেখানে টাকা ঢালতেও শুরু করেছেন। এখানে ব্যবহারকারীদের প্রত্যেকের একটি করে ‘থ্রিডি ভার্চুয়াল’ রূপ থাকবে। সেই ভার্চুয়াল রূপ বাস্তবের মানুষটির প্রতিনিধিত্ব করবে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। সেখানেই ওই থ্রিডি রূপটির মাধ্যমে সংযোগ তৈরি হবে বাস্তবের ব্যবহারকারীর। সেখানে তার মতো আরও অন্য মানুষ থাকবেন। তাদের সঙ্গে সেই দুনিয়াতে সম্পর্ক গড়ে উঠবে, কথা চলবে, আড্ডাও হবে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ধারণাও বদলে দিতে পারে এই মেটাভার্স। মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে এক ঘেয়ে মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে আর তাকাতে না-ও হতে পারে। মূলত ব্লকচেন প্রযুক্তির সাহায্যে কাজ করে এই দুনিয়া। এই প্রযুক্তির সাহায্যেই কাজ করে বিটকয়েন, ইথেরিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি।
ফেসবুক স¤প্রতি হরাইজন ওয়ার্করুম নামে একটি সফ্টওয়্যার প্রকাশ করেছে। যার মাধ্যমে কোনও সংস্থা কোনও মিটিং মেটাভার্সে অনুষ্ঠিত করতে পারবেন এবং এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উপভোগ করতে পারবেন। এত দিন গেম খেলার ক্ষেত্রে কম্পিউটারে পর্দায় ভার্চুয়াল দুনিয়া দেখে তাতে অংশ নিতে হত। কিন্তু ‘মেটাভার্স’ এমন একটি পরিবেশ, যেখানে সেই পরিবেশের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন ব্যবহারকারী। শুধু প্রবেশ করতে পারবেন না, সেখানে এক কল্পনার দুনিয়া বা সমান্তরাল দুনিয়াও তৈরি হবে তার পরিচয়ে। সেই থ্রিডি রূপটির জন্য জামাকাপড় কেনা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় সব কাজ করতে হবে ব্যবহারকারীকে। নিজেকে গড়ে তুলতে হবে ‘মেটাভার্স’-এর মতো করে।
করোনা মহামারির ফলে বড় থেকে ছোট সকলেই মোবাইলের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে বহু পরিমাণে। অভিভাবকরা অনেকেই তাদের সন্তানদের মোবাইল আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। মেটাভার্স সেই আসক্তি আরও বাড়িয়ে তুলবে কি না, সেই প্রশ্ন জেগে উঠছে। অভিভাবকরা চান যে, তাদের সন্তানরা আসল দুনিয়া উপভোগ করুক, ভার্চুয়াল নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছে এই মেটাভার্স। এক সমীক্ষা বলছে, ২০২৪-এ এর বাজার দর দাঁড়াবে আনুমানিক ৫৮ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের তাবড় ধনকুবেররা এখন মনোনিবেশ করেছেন এই দুনিয়া জয় করার লক্ষ্যে।
ফোর্টনাইট, মাইনক্র্যাফ্ট এবং রবলক্সের মতো কিছু ভিডিয়ো গেমে অনেক আগে থেকেই এই ধরনের মেটাভার্স ছিল। এই ভিডিয়ো গেমের সঙ্গে যে সংস্থাগুলি যুক্ত, তারা অনেক দিন থেকেই মেটাভার্সের বিবর্তনের জন্য লড়ে এসেছে। প্রযুক্তির নানা দিক মিশছে এই মেটাভার্সে। এখানে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিভিন্ন সদস্য ‘বাস করবেন’। যারা মেটাভার্সে থাকবেন, তারা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সারা দুনিয়া জুড়ে ভার্চুয়াল ট্যুরে যেতে পারেন, কনসার্টে যেতে পারেন, যোগাযোগ রাখতে পারেন এবং আরও নানা রকম অনুষ্ঠানে একসঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখতে পারেন। এই মেটাভার্সের সব রকম সুবিধা পুরোপুরি পেতে সকলকে অন্তত ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন জাকারবার্গ। কারণ প্রযুক্তি-দুনিয়ার মূলধারায় মেটাভার্স আসতে ততটাই সময় লাগবে। বাস্তব দুনিয়ার অনেক ঘাটতিই ঢেকে ফেলা যায় কাল্পনিক দুনিয়ায়। অনেকে এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়ে বাস্তবটাই ভুলে যেতে চান। হারিয়ে যেতে চান রূপকথার দেশে। বাস্তব থেকে পালিয়ে যদি আমরা মেটাভার্সের মতো কল্প-দুনিয়ায় হারিয়ে যাই তবে সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব কী? উত্তর অবশ্য ভবিষ্যতের গর্ভে। বাস্তব বলছে, ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে মেটাভার্স। সূত্র: আনন্দবাজার




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com