ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ফান্ড পেতে হলে অবশ্যই আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। এমন কথাই জানানো হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ আদালতের একটি রায়ে। স¤প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘রুল অব ল’ কার্যপদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল দুই সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি। তবে বুধবার তা খারিজ করে দিয়েছে ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিস। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশ যদি আইনের শাসন নিশ্চিতে ব্যর্থ হয় তাহলে এই নিয়মের অধীনে ওই দেশকে শাস্তি দিতে পারে জোটটি। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে আইনের শাসনের অবনতির ব্যাপক অভিযোগ এলে দেশ দুটির জন্য বরাদ্দ হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো আটকে দেয় ইইউ। এরপরই ইইউর এই নিয়মের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিসে (ইসিজে) চ্যালেঞ্জ করেছিল পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি। তবে দেশ দুটির চ্যালেঞ্জ খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ফিলিপ ড্যাম বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে ইইউ আদালত একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফান্ড এমনভাবে ব্যয় করতে হবে যা ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে।ইইউ কমিশনের উচিৎ এখন থেকে শক্তভাবে কাজ করা এবং তাদের প্রদর্শন করা উচিৎ যে, আইনের শাসন নিশ্চিত হচ্ছে তাদের প্রথম এজেন্ডা।
বুধবার এক বিবৃতিতে ইসিজে জানায়, যথাযথ আইনগত ভিত্তিতেই এই কার্যপদ্ধতিটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। রায়ে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার একটি পূর্ব শর্তই ছিল দেশগুলোকে অবশ্যই আইনের শাসন মেনে চলতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি খারাপ হলে শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, বাজেটের উপরেও এর প্রভাব রয়েছে বলে জানায় ইইউ আদালত। বলা হয়, সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে আইনের শাসন লঙ্ঘিত হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুশৃঙ্খল আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আদালত আরও বলেছে, যখন গণতান্ত্রিক নীতির প্রশ্ন আসে তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই নিজের ক্ষমতার মধ্যে থেকে তা রক্ষা করতে হবে।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের সরকারের বিরুদ্ধে আইনের শাসন লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিচার ব্যবস্থা, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা হরণ। ইইউ এই অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে। উভয় দেশই ইইউ তহবিল থেকে প্রচুর অর্থ পেয়ে থাকে। তবে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে না পারায় বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো হারাতে হলো দেশ দুটিকে। ইইউ এরইমধ্যে পোল্যান্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং হাঙ্গেরির ৭ বিলিয়ন ডলার স্থগিত করেছে। ইইউ আদালতের সর্বশেষ রায়ের কারণে ভবিষ্যতেও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে এই দুই দেশের। যদিও হাঙ্গেরির শাসক দল এই রায়ের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। অপরদিকে পোল্যান্ডের ডেপুটি মন্ত্রী জানুস কোয়ালস্কি বলেছেন, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডোকে অর্থনৈতিকভাবে ‘অভুক্ত’ রাখতে চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এটিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের শেষ, আমাদেরকে অবশ্যই পোল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।