বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১১ অপরাহ্ন

বহুতল মার্কেটের অনুমতি পাওয়ার পরই নীলক্ষেত বইয়ের দোকানে আগুন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সম্প্রতি রাজউক থেকে নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটে ছয়তলা একটি বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন মিলছে। এর কয়েক মাস পরই ভবনটিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলো। এখানে ছয়তলা একটি বইয়ের মার্কেট হবে, সেজন্য ব্যবসায়ী নেতারা কয়েকবার বৈঠকও করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর সঙ্গে আগুনের কোনও যোগসূত্র নেই। এটি কাকতালীয়। দেশের সবচেয়ে বড় বই’র মার্কেট রাজধানীর নীলক্ষেত। গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার কিছু আগে আগুন লাগে ওই মার্কেটে। ফায়ার সার্ভিসের ১০ টি ইউনিটের ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। একটি দোকান থেকে লাগা আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানগুলোতে। এতে কেউ হতাহত না হলেও আগুনে পুড়ে ও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক দোকানের প্রায় ১০ কোটি টাকার বই।
বই ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, শাহজালাল বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড মার্কেটের ‘চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক কর্নার’ দোকানের দোতলার গোডাউনে সেলফে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। এসময় ওয়েল্ডিংয়ের পুলকি প্লাস্টিকের প্যাকেটের ওপর পড়ে আগুন ধরে যায়। আগুনে হযরত শাহজালাল মার্কেটের ২৭টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে। পাশের সিটি করপোরেশন মার্কেটের ৩টি, বাবুপুরা মার্কেটের ১০টি, ইসলামিয়া সুপার মার্কেটের ১৫টি দোকানের বই পুড়ে ও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের হিসেবে ৫৫টি দোকানের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে তারা তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ঝালাইয়ের কাজ করায় চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক কর্নার কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভিড় লেগে থাকা বইয়ের মার্কেটটি একদমই ক্রেতাশূন্য। মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বুধবারও পুরো মার্কেটে ভূতুরে পরিবেশ। মার্কেটের ভিতরে ছোট ছোট গলিতে পানি, ছাই ও পোড়া বইয়ের স্তূপ ভাসছে। দোকানিরা বেলচা দিয়ে সেগুলো সরাচ্ছেন। এলাকাজুড়ে পোড়া বইয়ের গন্ধ। পুড়ে ও পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়া বইগুলো রাস্তায় ফেলে রাখছেন দোকানিরা। ছিন্নমূল শিশুরা ও নি¤œ আয়ের মানুষেরা সেখান থেকে মোটামুটি ভালো আছে- এমন বই বাছাই করে আলাদা করছেন। কেউ কেউ শুকানোর জন্য রোদ দেখে সড়ক ডিভাইডারের ওপরে মেলে দিচ্ছেন। বই কিনতে আসা অনেককেও পোড়া স্তূপ থেকে ভালো বইগুলো বেছে আলাদা করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ছিন্নমূল শিশু ও নি¤œআয়ের মানুষের কাছ থেকে নাম মাত্র মূল্যে এসব বই কিনে নিচ্ছেন। তবে অনেককে-ই খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে। চাকরিপ্রার্থী রিপন কুমার ঘোষ, বই কিনতে আসেন ফার্মগেট থেকে। এসে দেখেন- মার্কেট বন্ধ, বই’র দোকানগুলো থেকে তখনও ধোঁয়া উড়ছে। পরে কিছুক্ষণ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে চলে যান। রিপন কুমার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আগুন লাগার বিষয়টি জানতাম না। সকালে এসে এমনটি দেখে খারাপই লাগছে। যে বইটি তিনি নিতে এসেছেন, সেটি অন্যত্র পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও দাম খুবই চড়া।’
ছোট বোনকে কলেজ হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নীলক্ষেতে বই কিনতে আসেন পাবনা থেকে আসা দীপ বকশী। তিনিও এসে দেখেন, আগুনে বই’র দোকানগুলো পুড়ে গেছে। মার্কেট বন্ধ। তাই হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে যান। তবে উত্তর পাশের দোকানগুলো অক্ষত থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সেগুলোও বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফায়ার সার্ভিসের পানি ছিটানোর ফলে সেসব দোকানের গোডাউনেও পানি পৌঁছেছে। তাই অনেক দোকানি দোকান খুলে বই চেক করছেন, পরিষ্কার করছেন। দেখা যায়, বেশ কয়েকজন বই ব্যবসায়ী দোকানের সামনের সড়কে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ডালায় করে, পলি বিছিয়ে সেখানে অল্প কিছু বই নিয়ে কেউ কেউ বিক্রি করছেন। কেউ কেউ সেখান থেকেও বই কিনছেন। পুড়ে ও ভিজে নষ্ট হওয়া বইয়ের স্তূপে পরিণত হয়েছে নীলক্ষেত মোড়। সেখান দিয়ে যাতায়াতকারী শত শত লোক সেসব বই পদদলিত করছেন। উৎসুক জনতা সেসব বইয়ের ওপর দাঁড়িয়েই ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন।
চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক কর্নারের পাশের দোকানি রিয়াজ জানান, আগুনে তার ৩৪ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। তিনি একটি বইও রক্ষা করতে পারেননি। তার মতো ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোতে গড়ে ৮-১০ লাখ টাকার বই ছিল বলে জানিয়েছেন একাধিক দোকানি।
তারা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছেন। বই বিক্রির চাপ শুরু হচ্ছিল। এরই মধ্যে এ ঘটনা, আগুনে তাদের সব শেষ করে দিয়েছে। এই ক্ষতি ঘুরে দাঁড়াতে বহু সময় লাগবে। তবে আগুন লাগার পেছনে ব্যবসায়ীরা যেই দোকান কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন সেই চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক কর্নার কর্তৃপক্ষ বলছেন ভিন্ন কথা। দোকানটির সেলসম্যান জাবেদ বলেন, পাশে থাকা হোটেল থেকে কিংবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। তাদের দোকান থেকে আগুন লাগার অভিযোগ ব্যবসায়ীরা আন্দাজে করছেন বলে জানান তিনি। তবে মঙ্গলবার রাতে ওই দোকানের দোতলায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আলমগীর হোসেন রাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগুনে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানের ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক কর্নার দোকান থেকে আগুন লেগেছে বলে শুনেছি। তবে সেটি খতিয়ে দেখতে মার্কেট কমিটির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটিকে আপাতত নিছক দুর্ঘটনাই বলতে চাই। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’ তবে এ ঘটনায় বুধবার রাত পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, ক্ষয়ক্ষতি, উদ্ধার ও আগুন লাগার কারণ তদন্ত সাপেক্ষে। তবে ঘটনার দিন রাতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি শিগগিরই করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুরো মার্কেটটি অপরিকল্পিত। এখানে কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই আমরা পাইনি। বিল্ডিং কোডের কিছুই মানেনি মার্কেট কর্তৃপক্ষ। তাই এ মার্কেটে আগুন লাগার ঝুঁকি ফের থেকেই যায়।’ তবে ক্ষতিগ্রস্ত ইসলামিয়া মার্কেট কমিটির পরিচালক গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘মার্কেট ভেঙে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন করার অনুমতি মিলেছে গত ঈদের পরপরই। রাজউক থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর আমরা কমিটির লোকজন কয়েকবার বসেছি, কিভাবে মার্কেট ভাঙা যায় এসব নিয়ে। বহুতল ভবন করার প্রস্তুতি নেওয়ার মাঝেই এ ঘটনা ঘটছে।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com