ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে প্রথম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনকালে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চলচ্চিত্র বাংলা ও অসমীয়া সংস্কৃতির যোগসূত্র গড়বে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবটি এর একটি মাইলফলক।
ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম সফররত তথ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আসামের গুয়াহাটিতে হোটেল ভিভান্ত মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’ উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সূচিত সপ্তাহব্যাপী এ উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে যোগ দেন আসামের পরিবেশ, বন ও মৎস্য বিষয়ক মন্ত্রী পরিমল শুক্লাবৈদ্য। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সহধর্মিণী রিংকি শর্মা ভুঁইয়া বিশেষ আলোচকের বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. হাছান মাহমুদ আসামবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের আসাম আর বাংলাদেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অনেক মিল রয়েছে। আমাদের পোশাকেরও মিল রয়েছে। আমরা একই পাখির কলতান শুনি।
তথ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের যৌথ উদ্যোগে নিশ্চয়ই দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্ব আরো নিবিড় হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেও আমাদের যোগাযোগ আরো বাড়বে।
মন্ত্রী বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ৭ বছরের শিশু। একাত্তরের অনেক স্মৃতি আমাকে আবেগ তাড়িত করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে ভারতের আন্তরিক সহযোগিতা, ভারতের সেনাবাহিনীর ভূমিকা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছে। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা যা কখনো ভুলবো না। আসামের পরিবেশমন্ত্রী পরিমল শুক্লাবৈদ্য বলেন, পৃথিবীর মধ্যে একটি বিখ্যাত নাম শেখ মুজিবুর রহমান যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র স্বাধীনতা পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের নাগরিক হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে আমার ঠাকুরমার সম্পর্ক। আমার পূর্ব পুরুষরা একজন বিশ্ব নন্দিত সংগ্রামী নেতা পেয়েছিলেন যার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা ভারতীয় নাগরিক হতে পারি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামটা আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে আছে।’
সমাজ গবেষক রিংকী শর্মা ভুঁইয়া বলেন, গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যেহেতু প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে।
তথ্যমন্ত্রী দুপুরে গুয়াহাটির আসাম ডাউন টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এন এন দত্ত ও ভাইস চ্যান্সেলর ড. নারায়ণ চন্দ্র তালুকদার মন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় ড. হাছান বলেন, আসাম ডাউন টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ গর্বিত এবং এর মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচির ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে।
এর আগে গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী কমিশনেও বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। আসামের প্রখ্যাত দুই ভাস্কর তুইচিন্দ্রাই জয়ন্ত ও জিতুমণি বৈশ্যের তৈরি বঙ্গবন্ধুর দু’টি ভাস্কর্য এই কর্নারে স্থাপিত হয়েছে। পাশাপাশি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান সেখানে সহকারী হাইকমিশন পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী জামদানী বিপণী বিতান ‘অনামিকা’ উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ও সাইমুম সারওয়ার কমল, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মোঃ মকবুল হোসেন, দিল্লিতে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ এবং গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর এসব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সফরসঙ্গী চিত্রতারকা ফেরদৌস, অপু বিশ্বাস ও সংগীতশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে আগরতলা ও গুয়াহাটিতে শুরু হওয়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে হাসিনা: আ ডটারস টেল, দেবী, পুত্র, সত্তা, গেরিলা, আগুনের পরশমণি, পোস্টমাস্টার, ৭১, রাতজাগা ফুল’সহ ৩৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। সূত্র : বাসস