দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
সরকারের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সকলের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠেছে। টিসিবির লাইনে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত। এজন্য সরকারের সিন্ডিকেট দায়ী। মধ্যবিত্ত মানুষ দরিদ্র হয়েছে। আর সরকার দুর্নীতি করছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি। গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
মোশাররফ বলেন, সরকার প্রধান বলেছিল ক্ষমতায় আসলে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। ২০০৬ সালে আমরা ক্ষমতা ছাড়ি তখন চালের কেজি যখন ১৬/১৮ টাকা। কোথায় সে ১০ টাকা কেজির চাল? আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। সরকার দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করার জন্য দায়মুক্তি দেয়ার জন্য আইন করেছেন উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, এক শ’ হাজার কোটি টাকা আওয়ামী সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতি বছর পাচার করছে। তাদের জন্য আবার সংসদে দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে। এই সরকার দেশ-বিদেশে হাইব্রিড সরকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম ফিরিয়ে আনতে হলে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এজন্য আন্দোলন প্রয়োজন। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার প্রথম থেকেই টিকা নিয়ে দুর্নীতি করছে। এমন কোন জায়গা নেই যে এ সরকার লুটপাট করছে না। আওয়ামী লীগ লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তিনি বলেন, সবাইকে গণপেনশন কথা বলা হচ্ছে এটার মাধ্যমে আরেকটি লুটপাটের ব্যবস্থা করছে। মানুষ আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করছে।
সরকার নিজে এবং সব প্রশাসনযন্ত্রকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলেছে। ওয়াসার এমডি কে তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। ব্যক্তি বিশেষকেও দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। এ দুর্নীতির কারণে পানির দাম বাড়ছে। কুইক রেন্টাল প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এদের জন্য আবার সংসদে দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। তাহলেই কেবলমাত্র এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আপনারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন। দেশের জনগণ জেগে উঠেছে আপনাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। কমিশন-টমিশন করে কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, কমিশন-টমিশন করে কোনো লাভ হবে না। ওই সমস্ত নির্বাচনে বিএনপি যাবেও না করতেও দেবে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে আব্বাস বলেন, জনগণের পকেট কেটে দুর্নীতি করে মালয়েশিয়ায়, কানাডায় বেগমপাড়া বানিয়েছেন, এগুলোর হিসাব দিতে হবে না? হিসাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যসহ সব জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু জনগণের জীবনের মূল্য বাড়ছে না। এদেশের মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নাই। হয় গুলি খেয়ে মরতে হবে, জেলে বসে মরতে হবে। আর না হয় এ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে মাঠে মরতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ সরকারের সময়ে দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে, জিয়াউর রহমানের সময় এ রকম বাড়েনি। এমনকি খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও দ্রব্যমূল্য এত বাড়েনি।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নৃশংস হত্যাকা-ের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গয়েশ্বর বলেন, আমরা অনেক কিছু জানলেও বলতে পারি না, কোথায় যেন একটা ভয় কাজ করে। ২০০৬ সালে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল এটা ছিল সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ। সিলেট ও রৌমারীতে যারা পরাজিত হয়েছিল তারা তাদের পরাজয় মানতে পারেনি। তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে আমাদের ধারণা।
তিনি বলেন, বিজিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা গুলি চালাবে না তাহলে তাদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার দরকার কি? এ ঘটনার পেছনে মঈন ইউ আহমেদের ভূমিকা থাকতে পারে। এজন্য তিনি দেশত্যাগ করেছেন। সেনাবাহিনী জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা সেটা আজ দুর্বল হয়ে গেছে। বিদ্রোহের যে বিচার হয়েছে তা ছিল বিচারের নামে প্রহসন। তিনি ওই ঘটনায় জেনারেল জাকিরের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি করেন।