বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আগামী তিন মাসের মধ্যে পাঁচটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে। বৈঠকগুলোতে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শুধু আলোচনাই হবে না বরং সম্পর্কোন্নয়নের অন্য বিষয়গুলো নিয়েও কথা হবে।
আগামী ২০ মার্চ ঢাকায় অষ্টম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার পরপরই ৪ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের মধ্যে ওয়াশিংটনে বৈঠক হবে। এর দুদিন পর ওয়াশিংটনে নিরাপত্তা সংলাপ এবং মে মাসে ডিফেন্স ডায়ালগ হবে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে। ওই মাসেই বাণিজ্য বিষয়ক সংলাপ হবে। যার নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ এবং অন্যান্য বৈঠকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অবশ্যই চলে আসবে এবং সেখানে আমরা আমাদের পয়েন্টগুলো তুলে ধরবো। আমরা চাইবো নিষেধাজ্ঞা যেন তুলে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অন্য যে দিকগুলো আছে সেগুলো যেন এগিয়ে যায়।’ নিয়মিত বৈঠক: যে পাঁচটি বৈঠক হবে তার মধ্যে চারটি নিয়মিত বৈঠক এবং শুধু দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকটি নিয়মিত ব্যবস্থার বাইরে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, একটি বাদে সবগুলোই নিয়মিত। হঠাৎ কোনও কারণে বৈঠক হচ্ছে এমন নয়। অনেকে হয়তো মনে করতে পারে ১০ ডিসেম্বর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটার কারণেই হচ্ছে। আদতে তা নয়।’ কোভিডের কারণে এই বৈঠকগুলো আগে হতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকগুলো আমাদের নিয়মিত সম্পর্কোন্নয়নের অংশ। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের নিষেধাজ্ঞার কারণে এটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই দিন ওয়াশিংটনে আমাদের দূতাবাসে বড় আকারের অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা: পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রথম থেকেই র্যাবকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন যদি সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে র্যাবের সক্ষমতা কিছুটা কমে আসবে। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ দমন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ লক্ষ্য যদি অর্জন করতে চাই, এই মুহূর্তে র্যাবের কোনও বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সুতরাং র্যাবের যদি কোনও দুর্বলতা থেকে থাকে, সেটা আমরা আলাপ করে ঠিক করতে পারি। এখানে অন্য দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আমরা দেখতে পারি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারি।
মানবাধিকার ও ডিএসএ: জ্বালানি ও কৃষি সহযোগিতা, সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এর মধ্যে কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে- যেমন মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন।
শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে ভালো কিছু কাজ হয়েছে এবং সম্প্রতি ইউরোপীয়ই উনিয়ন এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন-এর সঙ্গে সরকার কিছু কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে তথ্য আছে সেটি হয়তো পুরনো। এবং এ তথ্য ঘাটতি আমরা পূরণ করে দিতে পারবো বৈঠকগুলোতে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়েও কিছুটা অগ্রগতি আছে এবং আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র সরকার না বললেও ওই দেশের কিছু সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, আমরা চাই না এটি আলাদাভাবে দু’দেশের মধ্যে ইস্যু হয়ে উঠুক। কারণ সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। আমরা অন্য রাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত বিষয়ে কখনও হস্তক্ষেপ করি না এবং একইভাবে এ ধরনের ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখি। বিষয়টির সঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের একটি সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাদেরকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ছাড়া অন্যভাবে আইনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। এ ধরনের আইন এখন প্রায় অনেক দেশেই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতাও আমরা চাইতে পারি। ডিএসএ একটি নতুন বিষয় এবং সে কারণে হয়তোবা এর বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে এবং সেগুলো যদি আমরা নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারি এবং তাদের যদি কোনও সহায়তা থাকে তবে তা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি।- বাংলাট্রিবিউন