দেশের যে কোনো জায়গা থেকে শুধু একটি ভিআর বক্সের সাহায্যে ঘুরে দেখা যাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতœতত্বিক স্থাপনাগুলো। আহমেদ জামান সঞ্জীবের উদ্যোগে নির্মিত দেশের প্রথম ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল জাদুঘরের সাহায্যেই এটি সম্ভব হবে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫মিনিটে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মিলনায়তনে-‘ভার্চুয়াল মিউজিয়াম’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমনটাই জানানো হয়। ভার্চুয়াল জাদুঘরে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৬টি স্থাপনার ত্রিমাত্রিক (থ্রি ডি) প্রদর্শনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যার জন্য সময় লেগেছে সাড়ে চার বছর। স্থাপনা গুলো হলো- ষাট গম্বুজ মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ, সোনারগাঁওয়ের বড় সরদার বাড়ি, নারায়ণগঞ্জের পানাম নগর, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির ও যশোরের ১১ শিবমন্দির।
এ সময় ভার্চুয়াল মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জামান সঞ্জীব বলেন, জায়গাটায় আসা যথেষ্ট কঠিন ছিলো। তবে আমাদের মনে জোড় ছিলো যে আমরা পারবো। কিন্তু দুই বছর কাজ করার পর মনে হলো আমরা হয়তো পারব না। শস্যক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অঙ্কনের পর আমরা মনে একটা জোর পেয়েছি যে, আমরা এই প্লাটফর্মটিও তৈরি করতে পারব। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে কাজ সম্পন্ন করেছি।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা বীর বিক্রম তৌফিক-ই-ইলাহী। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক মফিদুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনেওয়াজ। প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী, ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী ভার্চুয়াল জাদুঘর উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি বলেন, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য হলো আমাদের ইতিহাস। সভ্যতার স্তরে আমার নতুন। বিদেশে দেশকে উপস্থাপন করতে গেলে আমি আড়াই হাজার বছর আগে আমাদের কী ছিলো সেখান থেকে শুরু করি। ভার্চুয়ালি ঐতিহ্য উপস্থাপনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এর মাধ্যমে ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে ও বুঝতে সহজ হয়। এবং ইতিহাস জানার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। আমি এটিকে খুবই ভালো উদ্যোগ বলে মনে করি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনেওয়াজ বলেন, ঐতিহ্যের কাছে যে আমাদের সন্তানকে নিয়ে যেতে হয় এই ভাবনা আমাদের মধ্যে আসে না। আজকে আমাদের এই দৈন্য দশা কাটানোর জন্য শুধু সভা সেমিনারে বক্তব্য দিলে হবে না। সঞ্জীবরা যে অভিনব কাজ করছেন, এ ধরণের কাজগুলোই করতে হবে। কিন্তু এ ধরণের কাজ করতে গেলে সামনে অনেক হুঁচট খাওয়ার জায়গা আছে। প্রচুর অর্থ সংশ্লিষ্টতার ব্যাপার আছে। এই কাজে জাতীয়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রকে দাঁড়াতে হবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দাঁড়াতে হবে। আমি বিশ্বাস করি এরকম কাজের সাথে আমরা সবাই দাঁড়াব। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক মুফিদুল হক বলেন, আমি যখন এই কাজের বার্তাটা পেলাম তখন আমার মধ্যে একটি শক্তি অনুভূত হলো। যারা এই কাজটা করছেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রজন্ম। কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে পৌঁছে দেওয়া যায় সেই তাগিদ থেকেই তারা এই উদ্যোগটা নিয়েছে। এই ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতিহাসকে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সজীব করে তোলা যায়। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদেরকে সম্মাননাস্বরূপ ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।