বিদেশী ফল পেপিনো মেলন চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন জেলার চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বড়খানপুর গ্রামের সবজি চাষি তাইজুল ইসলাম (৬৫)। অত্যধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল চাষের জন্য ইউটিউবই ছিলো তার একমাত্র ভরসা। তাইজুল জানান, পাশের গ্রামের প্রবাসী সেলিম রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে চারা নিয়ে এসে কয়েক শতক জমিতে চাষ করেন। সেখানে এই ফল দেখে উদ্বুুদ্ধ হয়ে সেলিমের কাছ থেকে চারা ক্রয় করে ৩৩ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। সেলিমও এই চাষে অনভিজ্ঞ। তাই ইউটিউবে চাষ পদ্ধতি দেখে পরিচর্চা শুরু করেন। চারারোপণের ২ মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছ ফুল-ফলে ভরে যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে তার ক্ষেতে প্রায় ৫০ মণ পেপিনো মেলান রয়েছে। নতুন জাতের ফল চাষে সফল হয়ে চাষি তাইজুল ইসলাম খুবই খুশি। তাইজুল ইসলামের ছেলে আনিছুর রহমান বলেন, পেপিনো চাষে কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়নি। রাসায়নিক সারের চাহিদা নেই বললেই চলে। জমিতে খুব কম পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করেছেন। তাতেই তরতাজা সজিব গাছ ফুল ও ফলে ভরে গেছে।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলে নতুন চাষ হয়েছে। যে কারণে মানুষের কাছে অপরিচিত। বিভিন্ন এলাকা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি প্রতি কেজি পেপিনো ফলের মূল্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তাইজুল এলাকায় প্রচারের জন্য আরো কম দামে বিক্রি করবেন বলে জানান। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে এই ফল ক্রয়ের জন্য অনেক ব্যবসায়ী যোগাযোগ করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, এলাকায় প্রচার হলে চারা বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এই ফলের চারা রোপণ করতে হয়। একবার রোপণ করে দুই থেকে তিন বছর ফল পাওয়া যাবে এবং প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে খুব কম খরচে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস জানান, পেপিনো মেলন খেতে অনেকটা তরমুজের মতো। তবে খাদ্যগুণ অত্যাধিক। পেপিনো মেলন পুষ্টি ও ওষধি গুণাগুন সমৃদ্ধ একটি ফল।
বিদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক বার্তায় এই ফলের বহুবিদ উপকারিতার কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশের জন্য নতুন হলেও বিদেশী ফল পপিনো মেলন পশ্চিমা দুনিয়ায় পুরাতন। এই ফলটি দেখতে কিছুটা ডাব বা বেগুনের মত। কিন্তু এই ফল খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু। এবং পেপিনো মেলনের পুষ্টিগুণ প্রচুর রয়েছে। ফলটি পাকলে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। এটি তরমুজের মত রসালো বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর।
পেপিনো মেলন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন। আমাদের প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন রয়েছে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হবে।
পেপিনো মেলন ভিটামিন সি,অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিনের পাওয়ার হাউস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ক্যান্সারজনিত কোষগুলির সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অত্যাবশ্যক।
পেপিনো মেলন ফলের অ্যান্টি-গ্লাইসিটিভ, এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ প্রভাব রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ডায়াবেটিসের অগ্রগতির প্রভাব হ্রাস করতে সহায়তা করে।
আমরা সবাই জানি যে আমাদের শরীরে সঞ্চিত গ্লুকোজ থেকে শক্তি পাই যা আমরা খাদ্য থেকে পেয়ে থাকি। পেপিনো মেলন কয়েকটি যৌগ রয়েছে যা এই গ্লুকোজকে শক্তির ফাটলে ভেঙে দেয় এবং আপনি তাৎক্ষণিকভাবে চাঙা বোধ করেন। এই গ্লুকোজ কোষগুলি অন্যথায় আপনার দেহে ফ্যাট হিসাবে জমা হয়। সুতরাং পরে আপনি দুর্বল বোধ করছেন, পেপিনো মেলন খেলে কিছু ভাল শক্তি অনুভব করবেন।
পেপিনো মেলন এমন ব্যক্তিদের সহায়তা করতে পারে যাদের লিভারের রোগ রয়েছে। লিভারকে শক্তিশালী করা শক্তি বৃদ্ধি, ওজন ভারসাম্য রক্ষায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করার অন্যতম সেরা উপায় পেপিনো মেলন খাওয়া। পেপিনো তরমুজে থাকা ফাইবার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি সরিয়ে দেয়, লিভার পরিষ্কার করে এবং এর সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তোলে। যেহেতু লিভারটি অনেক শারীরিক ক্রিয়াকলাপগুলির মূল, তাই একটি স্বাস্থ্যকর লিভার আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে সুন্দর রাখে।
পেপিনো তরমুজে উচ্চ দ্রবণীয় ফাইবার সামগ্রী থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। আর দ্রবণীয় ফাইবার সরাসরি কোলেস্টেরলকে প্রভাবিত করে না, তবে খারাপ কোলেস্টেরল বেঁধে দেয় এবং এটি শরীর থেকে নির্গত হয়।
পেপিনো মেলন এ কোন সোডিয়াম নেই তবে যথেষ্ট পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে। এবং তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পটাসিয়াম লবণের নেতিবাচক প্রভাবগুলিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং ফলস্বরূপ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পেপিনো মেলন তার মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যের জন্যও পরিচিত। আর যখন কিডনিতে তরল কম, রক্তচাপ কম হবে।
পেপিনো মেলন অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলির অধিকারী হিসাবে পরিচিত এবং এটি সারা শরীর জুড়ে ব্যথা এবং ব্যথার জন্য সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত ফলটি খেলে ব্যথা দূর হয়।
পেপিনো মেলন ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস এবং যারা অনিয়মিত অন্ত্র রয়েছে বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাদের জন্য এটি প্রতিকার হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি ভিটামিন সি সামগ্রী দেহকে খাদ্য থেকে পুষ্টিকরভাবে অনুকূলভাবে গ্রহণ করতে দেয়। এটি গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রতিকার হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। হজমজনিত সমস্যা কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষকে প্রভাবিত করে। এই ফলটি তাদের জন্যও সহায়ক হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যে এটি ভিটামিন কে যা আমাদের হাড়কে শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর রাখে, হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম রাখে এবং ধমনীতে জড়ো হওয়া এড়িয়ে যায়।