রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে বনশ্রী আফতাব নগর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৫তম সভা মহানগরী জোন আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব

ইবাদত ও আমলের প্রাণশক্তি নিয়ত

আতাউর রহমান খসরু:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২

আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেনÍ‘হে আল্লাহর রাসুল! এক ব্যক্তি গনিমত তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের জন্য যুদ্ধ করে, এক ব্যক্তি সুনামের জন্য যুদ্ধ করে এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর রাস্তায় আছে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কলেমা উঁচু করার জন্য যুদ্ধ করে, সে-ই আল্লাহর পথে আছে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮১০)
হাদিসে বর্ণিত চার শ্রেণির মানুষের ভেতর শেষ ব্যক্তির ইচ্ছায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের সাফল্যের প্রত্যাশা থাকায় তার আমল গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যদিকে প্রথম তিন ব্যক্তি কেবল পার্থিব প্রতিদানই প্রত্যাশা করায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভালো ও মন্দ কাজের এই উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশাকেই ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় নিয়ত বলে। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমলগুলো নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)
নিয়তের পরিচয় : আরবি ‘নিয়ত’ শব্দের বাংলা হলো ইচ্ছা, কোনো কাজের সুদৃঢ় প্রত্যয়। শাব্দিক অর্থানুসারে নিয়ত ভালো ও মন্দ উভয় কাজের জন্য হতে পারে। তবে ইসলামী পরিভাষায় নিয়ত সাধারণত ভালো কাজের ইচ্ছাগুলোকেই বোঝায়। ইমাম বায়দাবি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর বিধান পালনার্থে কোনো কাজের ইচ্ছা করাকে নিয়ত বলে। ’ (আল-আশবাহ ওয়ান-নাজায়ের : ১/২৯)
সব কিছু নিয়তের ওপর নির্ভরশীল কেন : জ্ঞান, বুদ্ধি ও চেতনা আছে এমন মানুষের প্রতিটি কাজের একটা উদ্দেশ্য থাকে। কাজের উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা থাকায় তার সঙ্গে শরিয়তের বিধান যুক্ত হয় ওয়াজিব (আবশ্যক), হারাম (নিষিদ্ধ), নফল (প্রশংসনীয়), মাকরুহ (অপছন্দনীয়), মুবাহ (বৈধ) হিসেবে। আর কাজটি যখন কোনো জ্ঞান, বুদ্ধি ও চেতনার অধিকারী নয় এমন ব্যক্তি থেকে প্রকাশ পায় যেমনÍপাগল, ভুলে যাওয়া ব্যক্তি, ভুলক্রমে করেছে এমন অথবা যাকে বাধ্য করা হয়েছে এমন ব্যক্তি তবে তা অর্থহীন। তার সঙ্গে শরিয়তের কোনো বিধান যুক্ত হবে না। কেননা এমন ব্যক্তির কোনো নিয়ত, ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য থাকে না। অনুরূপ যখন কোনো জ্ঞান, বুদ্ধি ও চেতনার অধিকারী ব্যক্তির থেকে অভ্যাসবশত কোনো কাজ প্রকাশ পায় তাতে নিয়ত না থাকায় তার সঙ্গেও শরিয়তের বিধান যুক্ত হবে না। যেমনÍপানাহার, নিদ্রা ও চলাচল। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/১১৬)
যে নিয়ত প্রত্যাশিত : শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) লেখেন, নিয়ত দুই প্রকার : ক. আমলের নিয়ত। ফকিহ আলেমরা এটি নিয়ে আলোচনা করেন। কেননা কোনো কোনো আমলের বিশুদ্ধতা এমন নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।
খ. প্রতিদানের নিয়ত। এটা নিয়ে আলোচনা করেন ধর্মতাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক সাধকরা। কেননা তার সম্পর্ক ‘নিষ্ঠা’র সঙ্গে। যেমনÍকোনো ব্যক্তি যদি গোসল দ্বারা শুধু পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করে তবে তার গোসল শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে তবে সওয়াবেরও অধিকারী হবে। পবিত্র কোরআনে দ্বিতীয় প্রকার নিয়তের ওপর বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে। ’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৭) নিয়ত যেভাবে পরিশুদ্ধ হয় : ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘আলেমরা এই বিষয়ে একমত যে নিয়তের স্থান অন্তর। সুতরাং তাঁরা নিয়তের পরিশুদ্ধতার জন্য অন্তরের পরিশুদ্ধতাকে শর্ত করেছেন। ’ (মাজমুআতুল ফাওয়ায়িদ : ১/৩৮) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে। ’ (সুরা : বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫) নিয়ত যেভাবে পূর্ণতা লাভ করে : যথাযথ আমলের মাধ্যমে ব্যক্তির নিয়ত পূর্ণতা লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যÍকে তোমাদের মধ্যে কাজে উত্তম? তিনি পরাক্রশালী, ক্ষমাশীল। ’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২)
নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক? এই বিষয়ে ফকিহ আলেমদের মত হলো অন্তরের নিয়তের উপস্থিতি ওয়াজিব। ফলে শুধু মুখে উচ্চারণ করা যথেষ্ট নয় (আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে)। অন্তরে উপস্থিত নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়। যদিও মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। যেন অন্তর ও দেহের মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয় ঘটে। মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নিয়ত পূর্ণতা লাভ করে। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/১৩৭)
নিয়ত ছাড়া আমলের বিধান : কেউ যদি কোনো কাজ নিয়ত ছাড়া করে তবে তা দুই ধরনের হতে পারে। ১. এমন কাজ যার অন্তরের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে বা এমন বাক্য যার উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট। এ ক্ষেত্রে নিয়ত ছাড়াই আমলটি গ্রহণযোগ্য হয়ে যাবে। যেমনÍকেউ অজু করে জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে গেল। কিন্তু নামাজের তাহরিমা বাঁধার সময় নিয়ত করতে ভুলে গেল। ফকিহদের মতে, এই ব্যক্তির নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেননা তার পূর্বাপরের কাজগুলো নিয়ত তথা ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে।
২. এমন কথা ও কাজ যার উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট নয়। যেমন কেউ কাউকে বলল, আমি এটা দান করব। এখানে স্পষ্ট নয় যে ব্যক্তি কখন তা দান করবে। সুতরাং এ জন্য তার কাছে ব্যাখ্যা দাবি করা হবে। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/১২৬)
আমল ছাড়া নিয়তের বিধান : কোনো ব্যক্তি যদি শুধু মনে মনে কোনো কাজের নিয়ত করে এবং কথা বা কাজে তার বহিঃপ্রকাশ না ঘটে, তবে তার সঙ্গে শরিয়তের বিধান যুক্ত হবে না। যেমন কেউ মনে মনে তার দাসকে স্বাধীন করে দিল, কিন্তু তা মুখে উচ্চারণ করল না। তবে তার দাস স্বাধীন হবে না। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/১২৬)
যাদের নিয়ত গ্রহণযোগ্য : কোনো ব্যক্তির নিয়ত গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে ফকিহ আলেমরা নি¤েœাক্ত শর্তারোপ করেন। তা হলো: ১. ব্যক্তি নিয়তের যোগ্য হবে : নিয়তকারী যোগ্য হওয়ার অর্থ হলো সে মুসলিম, জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন ও ভালো-মন্দের পার্থক্যকারী হওয়া।
২. অন্তরের ইচ্ছা থাকা : শুধু মৌখিক উচ্চারণ আল্লাহর দরবারে নিয়ত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি না ব্যক্তির মনে কাজের প্রত্যয় না থাকে।
৩. নিষ্ঠা থাকা : নিয়তকারী ব্যক্তির ভেতর নিষ্ঠা থাকতে হবে। তার নিয়তে আল্লাহ ছাড়া আর কারো অংশগ্রহণ থাকতে পারবে না। (মাকাসিদুল মুকাল্লিফিন : ১/১২০-১২৮)। আল্লাহ সবার নিয়তকে পরিশুদ্ধ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com