হাদিসুরের মরদেহ দেশে ফেরাতে একসঙ্গে কাজ করছে তিন মিশন
ইউক্রেনের ওলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক রোমানিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে তাদের বহনকারী বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল (রাহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ২টায় রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট থেকে তারা দেশের উদ্দেশে রওনা করেন। তাদের ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল-দুবাই হয়ে আজ ঢাকা অবতরণ করে। এছাড়া জাহাজে হামলার ঘটনায় মারা যাওয়া থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ হাদিসুর রহমানের লাশ ইউক্রেনের একটি বাংকারের ফ্রিজারে রাখা হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে লাশটি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ইউক্রেনে আবার যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তারা কর্মস্থলে না থাকায় হাদিসুর রহমানের লাশ আনার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আগামী ৫ থেকে ৭ দিন পর হাদিসুরের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। গত ২ মার্চ ইউক্রেনের ওলিভিয়া বন্দরে নোঙর করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটিতে রকেট হামলা চালায় রাশিয়া। হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান নিহত হন। জাহাজটিতে ২৯ জন বাংলাদেশী নাবিক ছিলেন।
হাদিসুরের মরদেহ দেশে ফেরাতে একসঙ্গে কাজ করছে তিন মিশন: ইউক্রেনের ওলভিয়া সমুদ্রবন্দরে হামলার শিকার ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরাতে তিনটি মিশন একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পূর্ব-ইউরোপ) শিকদার বদিউজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘হাদিসুর রহমানের মরদেহ এখনো ইউক্রেনে রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা তার মরদেহ দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো। এ বিষয়ে আমরা খুবই আন্তরিক। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আমাদের তিনটি মিশন একসঙ্গে কাজ করছে।’ বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিক রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসার পর বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
শিকদার বদিউজ্জামান বলেন, ‘হাদিসুরের মরদেহ কতদিনের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে, তা টাইম ফ্রেম বেধে বলা মুশকিল। কারণ আপনারা জানেন ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। তবে তার মরদেহ দেশে আনতে আমাদের আন্তরিকতা শতভাগ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ ইউক্রেনে যে যুদ্ধাবস্থা, সেই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের একটি সম্পদ বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকরা আটকে পড়েছিলেন। তাদেরকে পোল্যান্ড, সোমালিয়া ও অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাসসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’
হাদিসুরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা তার মরদেহ দেশে ফেরানোর ব্যাপারে কাজ করছি, সেটা সম্পন্ন হোক। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য যা করণীয়, তা আমরা করবো।’ দেশে ফেরা নাবিকদের বিষয়ে শিকদার বদিউজ্জামান বলেন, ‘২৮ নাবিক পুরোপুরি সুস্থ আছেণ। তবে তারা ট্রমাটাইজড। তাদের মেডিকেল টেস্টসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী দেশে ফেরা ২৮ নাবিক হলেন- জি এম নুর ই আলম, মো. মনসুরুল ইসলাম খান, সেলিম মিয়া, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, মো. রোকনুজ্জামান রাজীব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, মো. ওমর ফারুক, সৈয়দ আশিফুল ইসলাম, রাজীবুল আউয়াল, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, মো. শেখ সাদী, মো. মাসুদুর রহমান, মো. জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আমিনুর ইসলাম, মো. মোহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, সারওয়ার হোসাইন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মো. আতিকুর রহমান, মো. শফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় ২৮ নাবিককে নিয়ে দেশের পথে উড়াল দেয় বিমানটি। রাতেই বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বিএমএমওএ সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন জানিয়েছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ট্রানজিট হয়ে বুধবার দুপুরে ২৮ নাবিককে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এদিকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনে রাখা বিধ্বস্ত জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহও দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ডেনিশ কোম্পানি ডেল্টা করপোরেশনের অধীনে ভাড়ায় চলছিল। মুম্বাই থেকে তুরস্ক হয়ে জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে নোঙর করে। ওলভিয়া থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল জাহাজটির। এরইমধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে ২৯ জন ক্রু নিয়ে ওলভিয়া বন্দরে আটকাপড়ে জাহাজটি। পরবর্তী সময়ে গত ২ মার্চ রকেট হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। তবে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় অন্য হাদিসুরের মরদেহসহ জীবিত ২৮ জনকে ৩ মার্চ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
গত শনিবার (৫ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দর সংলগ্ন বাংকার (শেল্টার হাউস) থেকে বেরিয়ে মালদোভার পথে যাত্রা করেন ওই ২৮ নাবিক। সবশেষ গত রোববার (৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তারা ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে মালদোভা হয়ে দুপুরের পর রোমানিয়া পৌঁছান।