শীত শেষে ফাগুনের হাওয়ায় গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। গাছজুড়ে মৌমাছির গুঞ্জন আর ফাগুনের হাওয়ায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়া মুকুলের ঘ্রাণ প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। পাশাপাশি জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। এ বছর শীতের প্রভাব কম থাকায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার গ্রাম গুলি গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে প্রতি গাছে গাছে। বর্তমানে চাষিদেরও গাছে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে আমবাগান সহ ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছ গুলোতে। আম্রপলি, নেংড়া, হাড়িভাঙ্গা, বারি-৪, বারি-৫, বারি-২ ও কাতিমন জাতের গাছ রয়েছে। তবে ছোট আকারের চেয়ে বড় ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল এসেছে। খাষকাউলিয়ার কুরকি গ্রামের মোঃ ফারুক হোসেন মাষ্টার জানান, তাদের আম গাছে এবার আগেভাগে মুকুল এসেছে। এখন আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগসহ আম গাছে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর তারা আমের বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। আম চাষি আব্দুস ছাত্তার জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে। আম গাছে মুকুল আসা শুরু করেছে। আমরা কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছি। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও বাগানে এসে ভালো ফলন পাওয়ার দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌহালী উপজেলায় গাছের পরিচর্যার অভাব ও মাটিতে গাছের পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব। কিন্তু প্রায় বেশ কিছু সময় পর বছরজুড়ে নিয়মিত পরিচর্যা, গাছের গোড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি সেচের ফলে গাছ নিয়মিত খাদ্য পাচ্ছে। এতে পরিশ্রমের ফলও মিলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণে এমনই চিত্র দেখা গেছে। আম গাছে মুকুল আসার আগে ও ফল মটরদানার মতো হলে হপার পোকা দমনের জন্য স্প্রে করতে হয়। সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি (রিপকর্ড, রেলোথ্রিন, সিনসাইপার, ফেনম, বাসাড্রিন) বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০ ইসি গ্রুপের যেকোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। পাওডারী মিলডিও রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। অ্যানথ্রাকনোজ রোগের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি প্রোপিকনাজল (টিল্ট) বা ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (করজিম/অটোস্টিন/ ফরাস্টিন) বা ২ গ্রাম ডাইথেন এম৪৫ মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আম মারবেলের মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জেরিন আহমেদ জানান, চৌহালী উপজেলায় গত বছরের অর্জিত মাত্রা ছিল ২৫ হেক্টর জমি, উৎপাদন ৪১২৫ মে. টন। যার প্রায় ৯০-৯৫ভাগ জমিতে গাছের মুকুল চলে এসেছে। চাষিদের বলেছি, ফুল ফোঁটা অবস্থায় কোনো ওষুধ বা কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য। গাছের পোকা গাছের লুকিয়ে থাকে। এ ধরনের পোকা খুব বেশি দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ প্রদানের কথা জানান তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলতি মৌসুমে চৌহালীতে কয়েক হাজার টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া আশানরূপ ফলন পাওয়ায় চৌহালীতে প্রতি বছর আম গাছের সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জেরিন আহমেদ।