কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বোরারচর গ্রামে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাক্সে মধু চাষ। সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ মধু বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সরিষা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণ করা হয়। এতে যেমনি তৈরি হচ্ছে খাঁটি মধু, ঠিক তেমনি জমিতে মৌমাছি বিচরণের ফলে পরাগায়নের মাধ্যমে বাড়ছে ফসলের ফলন। ঘরের কাজের পাশাপাশি বাড়তি খরচ ছাড়াই একবার পুঁজি খাঁটিয়ে বারবার আয় করতে পারায় মধু চাষে ঝুঁকছেন ওই এলাকার যুবক ও কৃষকরা। সেই চাষ করা মধু বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় করছে বেশ কয়েকটি পরিবার। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুকুর পাড়ে, বাড়ির উঠোনে, দেয়ালের পাশে কিংবা সরিষাসহ বিভিন্ন সবজি খেতের মাঝে কাঠের বাক্স রাখা। সেই বাক্সে মৌমাছি রেখে মধু চাষ করছেন চাষিরা। মৌমাছির দল ক্ষেতে উড়ে উড়ে মধু সংগ্রহ করে বাক্সবন্দী মৌচাকে জমা করছে। আর সেখান থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হচ্ছে মানসম্মত সুস্বাদু মধু।
এসব ফসলের ফুল থাকা পর্যন্ত চলবে মধু সংগ্রহ। ফুল থেকে মধু সংগ্রহকালে ফসলের পরাগায়নে সুবিধা হয়। এতে ফসলের উৎপাদন ২০-২৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। মধু চাষের এই দৃশ্য দেখে অনেক বেকার যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। মধু চাষে তাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আগামীতে নতুন করে অনেকেই এই পদ্ধতিতে মধু আহরণের উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছেন।
মৌচাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, চার বছর আগে একটি রাণী মৌমাছিকে পাঁচ শ’ টাকায় কিনে নিয়ে এসে বাড়িতে একটি কাঠের বাক্সে রেখে দিই। কয়েক দিনের মধ্যে সেই কাঠের বাক্সের চারপাশে মৌমাছি আসা শুরু করে। মৌমাছিরা সারা দিন বন-জঙ্গল ঘুরে মধু সংগ্রহ করে ওই বাক্সে জমা করে রাখে। প্রথম বছর তিন লিটার মধু বিক্রি করে তিন হাজার ৬০০ টাকা পেয়েছি। পরের বছর আরো একটি বাক্স বাড়াই। একটি কাঠের বাক্স বা কলোনি বানাতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। বর্তমানে ১০টি বাক্স থেকে বছরে ২০ কেজির বেশি মধু পেয়ে থাকি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: নাজমুল আলম বলেন, মধুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর খাদ্যগুণ, আছে প্রচুর ভিটামিন কে, ফ্রুক্টোজ, মাজারি এন্টিসেপ্টিক গুণ। কেটে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া জায়গায় মধু লাগিয়ে রাখলে কোনো রকম ইনফেকশন হয়না, বরং কিছুক্ষণের মধ্যেই জালা-পোড়া ভাব কমে যায়।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, মধু চাষে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। খরচ কম, লাভ বেশি। শুধু দরকার একটি রাণী মৌমাছি ও একটি বাক্স। ঘরের কোণে কিংবা উঠানে মৌমাছির রাণী নিয়ে বাক্স বসিয়ে দিলেই মৌমাছি চলে আসে। সে জন্য অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য এই চাষ খুবই সুবিধাজনক। এছাড়াও মৌমাছি ফসলে পরাগায়ন সৃষ্টি করে, যার ফলে কৃষি জমিতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মধু চাষিরা তাদের মৌচাক বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করায় মধুর পাশাপাশি এই এলাকার কৃষকেরা অধিক ফসল ঘরে তুলতে পারছে।