নীলফামারীতে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাস্টিকের কুচি তৈরির কারখানা। এরই মধ্যে জেলায় প্রায় শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। এই কুচি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন কারখানায়, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। এদিকে, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করায় পরিবেশ দূষণ কমছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া কুচি তৈরির কারখানায় অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, প্লাস্টিক মাটির সব থেকে বড় শত্রু। আর এই প্লাস্টিকের কারণে দিনদিন ফসল কমে যাচ্ছে। তবে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ করে কুচি তৈরি হওয়ায় তা পরিবেশের বেশ উপকার বয়ে আনবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় প্রায় শতাধিক ছোট-বড় প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হয় কুচি। এসব কুচি এখান থেকে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্লাস্টিক কারখানায়। রপ্তানি করা হয় বিদেশেও। প্রতিটি কারখানায় দিনে ৩০ থেকে ৫০ জন নারী-পুরুষ কাজ করে থাকেন।
কারখানাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেই স্তূপ থেকে শ্রমিকরা একদিকে বোতল, কোথাও স্যালাইনের ব্যাগ, কোথাও সিরিঞ্জ, কোথাও বোতলের ছিপি, কোথাও কোমল পানীয়ের বোতল আলাদা করে রাখছেন। পরে এসব প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি মেশিনে ভেঙে কুচি তৈরি করা হবে। শহরের বাবুপাড়া এলাকার কুচি তৈরির একটি কারাখানার শ্রমিক কবিতা রানী বলেন, সকালে এসে সারাদিন স্তূপ থেকে প্লাস্টিকের দ্রব্য বাছাই করে ভাগ করে রাখি। আর এখান থেকে নিয়ে গিয়ে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় কুচি। তবে সারাদিন কাজ করে মাত্র দেড়শ টাকা মজুরি পান বলে জানিয়েছেন তিনি। বজ্রবালা নামে আরেক নারী শ্রমিক জানান, এখানে কাজ করে যা পান তা দিয়েই তার সংসার চলে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়।
ডোমার উপজেলার পাঙ্গায় অবস্থিত কারখানার মেশিনচালক তপন রায় বলেন, শ্রমিকরা প্লাস্টিকের পণ্যগুলো ভাগ করে রাখেন। সেই সব দ্রব্যাদি নিয়ে এসে মেশিনে দিয়ে কুচি তৈরি করা হয়। এরপর এসব কুচি ওয়াশ মেশিনে পরিষ্কারের পর রোদে শুকানো হয়। শেষে বস্তায় ভরে প্যাকেট করা হয় বিক্রির জন্য।
ওই কারখানার ওয়াশ মিস্ত্রি ছত্রধর বলেন, মেশিনে ভাঙানোর পর কুচিগুলো ওয়াশ মেশিনে পরিষ্কার করা হয়। কেজি হিসেবে তারা মজুরি পান। কারখানার মালিক কমল রায় জানালেন, ভাঙরির দোকান থেকে কেনা প্লাস্টিকের পণ্যগুলোই তার কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। তিনি বলেন, কুচি বিক্রি করা হয় মিলারদের কাছে। কুচির আবার বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন, কোমল পানীয়ের বোতলগুলোর নাম পেট। আর এই বোতলের কুচি যায় বিদেশে। দেশেও বিক্রি হয়ে থাকে। আর এই পেট দিয়ে দামি সূতা তৈরি হয়। হাইব্রজ দিয়ে তৈরি হয় বদনা আর পিপি দিয়ে তৈরি হয় প্লাস্টিকের দড়ি।
প্লাস্টিকের কুচি তৈরির মেশিনের দাম খুব একটা বেশি না হওয়ায় এখন অনেকেই এই ব্যবসার প্রতি ঝুঁকছেন। মিথুন রায় নামে এক যুবক বললেন, তিনি এক মাস পরেই এই কুচি তৈরির কারখানা শুরু করবেন। জেলা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন বললেন, প্লাস্টিকের পণ্য থেকে যে কুচি তৈরি হয় সেটা পরিবেশের উপকার করছে। কুচি তৈরির কারণে মানুষ এখন প্লাস্টিকের অব্যবহৃত বোতল ফেলে না দিয়ে সংগ্রহে রেখে বিক্রি করে। যা মাটির জন্য অনেক উপকার, পরিবেশের জন্যও স্বস্তিদায়ক।
পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুরের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় বলেন, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। আর এই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।