ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের মধ্য দিয়েই চলছে সেবা কার্যক্রম, গুরুত্বপূর্ন পদগুলো রয়েছে শূন্য। ক্ষতিগ্রস্ত ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবা নিতে আসা হাজারো মানুষের। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় কিছু মেশিন থাকার পরও জনবলের অভাবে তা চালু করতে পরছে না। বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৫০ শয্য বিশিস্ট হাসপাতালে সরকারী সৃষ্ট পদ আছে ১৭৯ টি। এরমধ্যে কর্মরত রয়েছে ১৩০ জন, ডেপুটেশনে ১৩ জন ও গুরুত্বপূর্ন ৪৯ টি পদ শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে ৯জন মেডিকেল অফিসার সহ হিসাবরক্ষক, প্রধান সহকারী, স্টোরকিপার,পরিসংখ্যানবিদ, ওটিবয়, ইমারজেন্সি এটেনডেন্ট, কম্পাউন্ডার, ওয়ার্ডবয়, ফিজিওথেরাপি ও কার্ডিওগ্রাপারের পদ একেবারেই শূন্য রয়েছে। বিভিন্ন মেশিন অকেজু ও জনবল না থাকার কারণে রোগীরা পরছে সংকটে। লাভবান হচ্ছে কিছু অসাধু ডাক্তার ও দালালরা। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত দালালরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে বসে থাকতেও দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়রা। সর্দী, জ¦র, কাশি হলেই ২ থেকে ৫ হাজার টাকার পরীক্ষা করাতে বলেন কর্মরত চিকিৎসকগন। এমন অভিযোগ উঠে প্রতিনিয়তই।
শীত মৌসুমে হাসপাতালে শিশু ডায়রিয়া ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। রবিবার সকালে কথা হয় মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া উপজেলার গোবরাকুড়া গ্রামের শিশু মারজিয়া ও শিমুলকুচি গ্রামের রাফার অভিভাবকের সাথে। তারা জানান, হাসপাতালে ডায়রিয়া জনিত রোগের ছোট একটি স্যালাইন দিলেও বাকি বড় স্যালাইন ও অন্যান্য ঔষধ বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা না থাকায় হাসপাতালের বাহিরে ও রোগীদের ওয়ার্ডে দূর্গন্ধ যেন লেগেই তাকে।
স্টোরকিপার মাহবুব আলম জানান,হাসপাতালের এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল রয়েছে। ইসিজি মেশিন তিনটার মধ্যে একটি আন্ত বিভাগে ,একটি জরুরী বিভাগে, আরেকটি ষ্টোরে মজুদ রয়েছে। ফটোথেরাপি মেশিন একটি, অটোক্লেভ হাই প্রেসার মেশিন তিনটার মধ্যে সচল দুইটা,আরেকটি স্থাপন করা হয়নি। প্রয়োজনীয় কিছু মেশিন সচল থাকলেও জনবলের অভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না তারা।
জরুরী প্রসুতি সেবা বিভাগের ইনচার্জ ও সিনিঃ স্টাফ নার্স জেসমিন মান্দা বলেন, গর্ভবতীদের নরমাল ডেলিভারিতে কোন সমস্যা হয় না। যখন কোন গর্ভবতীর সিজারের প্রয়োজন হয় তখন অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সিজার করার মত সমস্ত যন্ত্রাংশ থাকার পরও জনবল না থাকায় সিজার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের ঝুকি নিয়ে অন্য হাসপাতালে সিজার করাতে হচ্ছে। দ্রুত শূন্য পদ গুলোতে জনবল না দিলে দীর্ঘদিনের এইসব যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে সরকারী অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
হালুয়াঘাটে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় সড়ক দূর্ঘটনা। আর এইসব দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যাক্তিকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। এ সময় কোন সরকারী এম্বুলেন্স খোঁজে পাওয়া যায় না। বহিরাগত এম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাসে অতিরিক্ত ভাড়ায় তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়। ৫০ শয্য হাসপাতালে ৩ টি এম্বুলেন্স থাকার কথা। এর মধ্যে একটি অচল ১টি মেরামত যোগ্য ও ১টি সচল রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। দ্রুত এম্বুলেন্স সেবার মান বৃদ্ধি করতে সরকারের কাছে জোরদাবী সুধিমহলের। এদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ ও যুগ্ম সম্পাদক মোর্শেদ আনোয়ার খোকন তারা বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে ডিউটি চলাকালিন সময়েও কিছু চিকিৎসক বাহিরের ক্লিনিক ও ডায়গোনেষ্টিক সেন্টারে এক্সে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফ সহ বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষায় ব্যস্ত থাকে। তাদের দাবী হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি, এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফ সহ অন্যান মেশিন দ্রুত চালু করে রোগীদের সেবা প্রদানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কমনা করছেন তারা।
ডাক্তার সংকটের কারণ জানতে চাইলে আরএমও সৈয়দা তানজিনা আফরিনা ইভা জানান, হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকা, এখানে অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাই কোন ডাক্তার থাকতে চায় না। আসলেও চলে যেতে চায়। তাই আমরা ডাক্তার সংকটে আছি। কর্মরত যা কয়েকজন ডাক্তার আছে চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াঁতে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুনির আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন এক্সে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিন নষ্ট রয়েছে। হালুয়াঘাট হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ন ৪৯ টি পদ শূন্য আছে। এই বিষয়ে সিভিলর্সাজনের সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে। যেহেতু হাসপাতালে পরিক্ষা নিরক্ষিার প্যাথলজি ছাড়া তেমন কোন মেশিন নেই তাই সেই সুযোগটা নিচ্ছে বহিরাগত ক্লিনিক ডায়গোনিষ্টক সেন্টার গুলো।