সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে দু’গ্রুপের গোলাগুলি, নিহত ৩

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলাধীন বান্দরবান সীমান্তবর্তী এলাকায় উপজাতি সন্ত্রাসী দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। এসময় দুই সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। সেখানে পুলিশের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে। তারা ফিরে এলে বিস্তারিত জানা যাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজস্থলীর গাইন্দা ইউনিয়নের বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী কেচিং পাড়া এলাকায় মগ লিবারেশন আর্মির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গভীর অরন্যে উঁচু পাহাড় থেকে উপজাতিদের অপর একটি স্থানীয় আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ওপর ব্রাশফায়ার শুরু করে। এসময় উভয় পক্ষই গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মগ লিবারেশন আর্মির সদস্যদের টহল লক্ষ্য করে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেয়া অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঘটনা স্থলেই মগপার্টির তিন সদস্য নিহত ও দুই সদস্য আহত হয়। পরে উভয় পক্ষই বন্দুকযুদ্ধে মেতে উঠে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গোলাগুলির ঘটনায় জামছড়ির থাংকুই পাড়ার অং থোয়াই মার্মা (৪৫) নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। তার পিতা নাম থুই খয় মিঙ মার্মা। নিহত অং থোয়াই মার্মা এমএনপির গাইড ছিলো বলেও জানা গেছে। এদিকে রাজস্থলীর ২নং গাইন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুচিংমং মারমা জানিয়েছেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাটি শুনেছি। তবে ঘটনাস্থল অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এবং সেটি বান্দরবান সীমানায় পড়েছে। আমার ইউনিয়নে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অশান্ত বান্দরবান, দুই মাসে ১৮ খুন: গত ১১ মার্চ একটি নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘ অশান্ত বান্দরবান, দুই মাসে ১৮ খুন।’ প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো,‘তিন পার্বত্য জেলার (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) মধ্যে সবচেয়ে ‘শান্ত’ বলা হয় বান্দরবানকে। কিন্তু এই জেলাটি হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠেছে। দুই মাসে খুন হয়েছেন ১৮ জন। এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাধারণ মানুষ।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের আঞ্চলিক সংগঠনের সদস্যসহ মোট ১৮ জন নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ হত্যাকা- পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।
৩ জানুয়ারি লামা উপজেলার রূপসীপাড়ার অংহ্লা পাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন রাঙামাটির রাজস্থলীর বাঙ্গালহালীয়া এলাকার বাসিন্দা মংক্যচিং মার্মা (৩৫)। রাতে সন্ত্রাসীর গুলিতে তিনি নিহত হন। ৬ জানুয়ারি সদর উপজেলার রাজবিলায় রেথোয়াই মারমার স্ত্রী সিংয়ানু মারমাকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের রুমা জোনের (২৮ বীর) রাইক্ষিয়াং লেক সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের টহল দলকে লক্ষ্য করে জেএসএস (মূল) দলের সদস্যরা গুলি চালায়। এতে সেনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান নিহত হন। আত্মরক্ষার্থে সেনা সদস্যরা পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে জেএসএস মূল দলের তিন সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলার দুর্গম গ্যালেংগ্যা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবুপাড়ায় বাবা ও চার ছেলেকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় ওই ব্যক্তির আরেক ছেলে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। নিহতরা হলেন—আবুপাড়ার পাড়াপ্রধান কারবারী ল্যাংরুই ম্রো (৬০) এবং তার চার ছেলে রুংথুই ম্রো (৪০), লেংরুং ম্রো (৩৭), মেনওয়াই ম্রো (৩৫) ও রিংরাও ম্রো (২৫)। এ ঘটনায় আবুপাড়ার ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে পাড়াপ্রধান ও তার চার ছেলেকে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় তারা। প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করে তারা জানায়, ‘স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশ’ ও তন্ত্রমন্ত্রের গুজব ছড়িয়ে তাদেরকে হত্যা করে।
২৬ ফেব্রুয়ারি রোয়াংছড়ি উপজেলায় বাড়ির পাশে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন জেএসএসের সাবেক সদস্য মংচিং শৈ (৪০)। তিনি রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন পাড়ার নিসামং মারমার ছেলে।
একই উপজেলায় গত ৪ মার্চ জুম ক্ষেত থেকে ফেরার পথে মিষ্টি কুমড়া চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারীকে (৪৫) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়। এদিন উপজেলার নোয়াপতং ইউনিয়নের মহিলা কারবারি পাড়া এলাকার ঝিরি থেকে থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন (৫ মার্চ) রোয়াংছড়ির তারাছা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার উপরে নয়াপাড়া এলাকায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএসের মূল দলের সশস্ত্র গ্রুপের নেতা অনুমং মারমাকে (৫০) গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন রুমা উপজেলার পাইন্দু সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে চার জন নিহত হয়। পরদিন সকালে রোয়াংছড়ির মংবাতং এলাকার সাঙ্গু নদীর তীরে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) জেলা সেক্রেটারি উবামং মারমা বলেন, দিন দিন অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। আমরা এমন পরিবেশ বান্দরবানে দেখতে চাই না। এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধ হওয়া জরুরি।
জেলা যুবলীগের সভাপতি কেলু মং মারমা বলেন, বান্দরবানের পরিস্থিতি এতই খারাপ যে, কোথাও যেতে ভয় পাচ্ছি। যেকোনও মুহূর্তে আমাদের ওপরও হামলা হতে পারে। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই। বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) জেরিন আখতার জানান, বান্দরবানের বর্তমান পরিস্থিতি তেমন ভালো নয়। এক সময় তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ছিল বান্দরবান। সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে চলতে হবে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বান্দরবানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন, সামাজিক কুসংস্কারসহ বিভিন্ন কারণে এসব অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। আঞ্চলিক সংগঠনের নেতারা মনে করছেন, তাদের হত্যাকা-গুলো স্বাভাবিক।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com