ঝিনাইদহ থেকে যশোরের চাঁচড়া পর্যন্ত রাস্তা ছয় লেন করার কাজ শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। সড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনের জন্য জমিও মাপা হয়েছ। ৬ লেনে উন্নীত করা ৪ হাজার কোটি টাকার কর্মযজ্ঞের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে সম্ভাব্য রাস্তার নকশা নিয়ে জমি অধিগ্রহণ ও মাপ যোগের কাজ করছেন কর্মকর্তারা।এরইমধ্যে লক্ষ করা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পশু হাসপাতালের পূর্ব পাশে মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে মোঃ আব্দুল মাজীদ (অবসরপ্রাপ্ত আর্মি) তড়িঘড়ি করে তার রাস্তার পাশে থাকা পাঁচ শতাংশ জমির উপর কয়েকদিন ধরে একটি বিল্ডিং নির্মাণ শুরু করেছেন। দুর্বল ও নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কোনরকমে একটি বিল্ডিং দাড় করানোর জন্য দ্রুত কাজ করাচ্ছেন নির্মাণশ্রমিকদের দিয়ে। তার পাশেই কালীগঞ্জের একজন বিশিষ্ট ফিড ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আইনুদ্দিন সম্প্রতি তার কেনা জমির উপর (রাস্তার জন্য নির্ধারিত ৯০ ফিটের মধ্যে) লম্বালম্বিভাবে পাঁচটি দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেন ওই একই সময় থেকে। নকশা ও পৌরসভার কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই এই দুইজন ব্যক্তি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণ করাচ্ছেন দিন রাত ধরে । গত ২২ মার্চ রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে সরোজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল মাজিদের বিল্ডিং এর ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। প্রায় ৩০ জন শ্রমিক ১১০০ স্কয়ার ফিটের ছাদ নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একই সাথে পার্শ্ববর্তী আইনুদ্দিনের ৫টি দোকান ঘরের সাটারিং এর কাজ করছিল ৬ জন শ্রমিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ৬ লেন সড়ক নির্মাণের জন্য সরকার কর্তৃক জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই দুই ব্যক্তির জমিও রাস্তার জন্য নির্ধারিত ৯০ ফিটের মধ্যে পড়া অংশেই ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এই জমিতে বিল্ডিং থাকলে জমির, মূল্যের পাশাপাশি বিল্ডিং এর জন্য পার স্কয়ার ফিটে আলাদা মূল্য পাবেন।মূলত বাড়তি এই টাকার লোভেই এই দুই ব্যাক্তি রাতের আধারে অধিক শ্রমিক লাগিয়ে তড়িঘড়ি করে বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। রাতে ছাদ ঢালাই করা বিল্ডিং এর মালিক আব্দুল মাজিদ জানান,ব্যবসার প্রয়োজনে একটি গোডাউন নির্মাণ করছি, এর বাইরে অন্য কিছু নয়।মিস্ত্রিরা সময় দিতে না পারায় গভীর রাতেও কাজ করানো লাগছে। পার্শ্ববর্তী বিল্ডিং এর মালিক মোঃ আইনদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,চূড়ান্তভাবে এখনো কোনো মাপ হয়নি বিধায় বলা যাচ্ছে না যে আমার করা ঘর রাস্তার জন্য নির্ধারিত ৯০ ফিটের মধ্যে পড়ছে।তবে আমি দেখেছি রাস্তার এই মাপ এক এক জাইগায় এক এক রকম। নির্বাহী প্রকৌশলী তামীম আহমেদ জানান, ঝিনাইদহ থেকে যশোর পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।ওই ভিডিওর বাইরে নতুন কোনো স্থাপনা হিসাবভুক্ত হবে না। যদি কেউ ৯০ ফিটের মধ্যে নতুন করে কোনো স্থাপনা তৈরি করেন তাহলে তার দায় দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।অন এভারেজ সেন্ট্রাল লাইন থেকে দুই পাশে ৯০ ফিট করে ১৮০ ফিট জমি অধিগ্রহন করা হবে।আমাদের করা ভিডিও আমরা ডিসি অফিসে হস্তান্তর করেছি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান,অনেকের ভুল ধারণা আছে ৯০ ফিটের মধ্যে স্থাপনা তৈরি করলে হয়ত অর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে।না, এই ধারণা ভুল, কেননা মূল্য নির্ধারণ আগেই করা হয়েছে। তাছাড়া ৪ ধারার নোটিশও জারি হয়েছে।এর পরও যদি কেউ নতুন করে কিছু করেন তাহলে সেটার মূল্য নতুন করে অন্তর্ভূক্তকরণের কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর ফেইজ ১ এর আওতায় ঝিনাইদহ যশোর মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের প্রতি কিলোমিটার রাস্তা সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা।