রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব ছয় মাসেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূ স্বপ্না হিলির রেললাইনের ধারে খেজুর রস নামাতে ব্যস্ত গাছিরা মোহাম্মদিয়া ইসলামী যুব সংঘের উদ্যোগে তাফসীরুল কোরআন মাহফিল সম্পন্ন গাইবান্ধায় ছোটবোন ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে নির্যাতিত গৃহবধূর সংবাদ সম্মেলন

আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যায় মামলা 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০২২

৩০ সেকেন্ডেই আ.লীগ নেতা খুন 

রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নিহতের স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
৩০ সেকেন্ডেই আ.লীগ নেতা খুন:কয়েকটি গুলি ছুড়ে চোখের পলকে হত্যা করা হয় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। একই সময়ে হত্যাকারীর ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন টিপুর গাড়ির ঠিক পাশের রিকশা আরোহী কলেজছাত্রী সুমাইয়া আফরিন প্রীতি। পুরো কিলিং মিশন শেষ করে হত্যাকারীর পালিয়ে যেতে সময় লেগেছে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। টিপুর গতিপথ জেনে তাকে উল্টো পথে অনুসরণ করে আসা ও এত অল্প সময়ে কয়েকটি গুলি ছোড়ার কায়দা দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিত ও পেশাদার খুনির কাজ। ঘটনাস্থলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এমনটা মনে করছেন তারা।
টিপু হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজটি ঘটনাস্থলের পাশের একটি বহুতল ভবনের। ভবনটির নিচতলায় একটি জুতার শোরুম ও বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংক রয়েছে। এই ফুটেজে টিপু হত্যা মিশনের স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ফুটেজে দেখা যায়, শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদের একটু সামনে খিলগাঁও রেলগেট অভিমুখে বৃহস্পতিবার রাত ঠিক ১০টা ২৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে টিপুর ব্যক্তিগত সাদা রঙের নোয়াহ মাইক্রোবাসটি জ্যামে আটকা পড়ে। এর ঠিক ১০ সেকেন্ড আগে বিপরীত দিকের রাস্তা ধরে উল্টো পথে একটি মোটরসাইকেল আসতে দেখা যায়। মোটরসাইকেলটি শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাফিজিয়া সুন্নীয়া আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে এসে ঘুরিয়ে আবার রাজারবাগ অভিমুখে দাঁড় করান চালক। এরই মধ্যে মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা অস্ত্রধারী ও মাথায় হেলমেট পরা হত্যাকারী সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নেন। এ সময় রাস্তায় খুব ধীরগতিতে অন্যান্য গাড়ি চলছিল।
ফুটেজে দেখা যায়, ১০টা ২৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে টিপুর গাড়ির বাম দিক দিয়ে একেবারে কাছে গিয়ে প্রথম গুলি ছোড়া হয়। আচমকা আক্রমণ দেখে টিপুর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন চালক মুন্না, কিন্তু সামনেই রিকশার জট থাকায় গাড়িটি বেশি দূর এগোতে পারেনি, তবে গাড়ি থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ায় হামলাকারী দৌড়ে সামনে এসে খুব কাছ থেকে সামনের আসনে বসে থাকা টিপুকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটি গুলি ছোড়ে। ওই সময় গাড়ির জানালার কাচ ভেদ করে গুলিবিদ্ধ হন টিপু। ১০ সেকেন্ড সময় ধরে টিপুকে গুলি করে আশপাশে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে টিপুর গাড়ির সামনে দিয়েই আবার সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার উল্টো পাশে মাদ্রাসার সামনে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলের দিকে চলে যান হত্যাকারী। এরই মধ্যে টিপুর গাড়িঘেঁষা রিকশা থেকে কলেজছাত্রী প্রীতি রাস্তায় ঢলে পড়েন। ওই সময় টিপুর গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দুজন ব্যক্তিকে নেমে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় এবং হামলাকারীকে ধাওয়া করতে দেখা যায়। নিহত প্রীতি রাজধানীর বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। তার বাসা মালিবাগে। ওই দিন বাসায় অতিথি থাকায় বান্ধবীর বাড়িতে রাত্রিযাপন করতে রিকশায় করে বান্ধবীর সঙ্গে তিলপাপাড়ায় যাচ্ছিলেন। টিপু হত্যাকা-ের সময় রাস্তার বিপরীত দিকে মাদ্রাসার সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা পান করছিলেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি পেশায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স। গুলির শব্দ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বুঝতে না পেরে রাস্তার ওপারে টিপুর গাড়ির দিকে ছুটে যান তিনি, কিন্তু এরই মধ্যে কিলিং মিশন শেষ করে সড়ক বিভাজক পার হয়ে যান হত্যাকারী। ওই যুবক হত্যাকারীর পেছনে ধাওয়া করেন ধরার জন্য। এর মধ্যেই হত্যাকারী তার সহযোগীর মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে বসেন। এমন মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পেছন থেকে মোটরসাইকেলে লাথি মারেন, কিন্তু ততক্ষণে মোটরসাইকেল চলতে শুরু করায় আর ধরা যায়নি। হত্যাকারী ও তার সহযোগী শাহজাহানপুর থেকে রাজারবাগ অভিমুখে পালিয়ে যান, তবে তারা পালিয়ে গেলেও মোটরসাইকেলটির রং ও নম্বর প্লেটের নম্বর মনে রাখতে পারার দাবি করেন সোর্স, তবে নম্বর প্লেটে থাকা মোটরসাইকেলের অশ্বশক্তি নির্ধারণী বাংলা অক্ষরটি বুঝতে পারেননি তিনি।
সোর্সের ভাষ্য, মোটরসাইকেলটি ছিল মেরুন রঙের। এটি কোন ব্র্যান্ডের সেটি বলতে না পারলেও তিনি নিশ্চিত করেন, তাতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট যুক্ত ছিল। আর এর নম্বর ঢাকা মেট্রো-১১-১১৯৪ (এখানে একটি বাংলা অক্ষর হবে যেটি তিনি ঠিক বুঝতে পারেনি- যেমন ‘ল’ ‘হ’)। একই তথ্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও দিয়েছেন। মোটরসাইকেলের এই নম্বর ধরে খোঁজ নিচ্ছে একাধিক বাহিনীর সদস্যরা। ওই যুবক বলেন, “আমি প্রথমে আওয়াজ হুইন্যা ভাবছি অ্যাকসিডেন্ট হইছে। এল্লাইগ্যা তাড়াতাড়ি রাস্তা পার হইয়া গাড়ির কাছে গেলাম। এর মধ্যেই একটা কালা জামা পরা হেলমেট পরা পোলায় দেখলাম ভাগতাছে। সবাই চিল্লাইতাছে ‘ধর ধর’ কইয়্যা। আমি তখন মনে করলাম ছিনতাইকারী। বাহিনীর সোর্স হইয়া কাজ করি কত বছর ধইরা, কত চোর ছিনতাইকারী ধরলাম জীবনে।
“ওই পোলায় দেখি গিয়া হোন্ডাতে উঠল, স্টার্ট দেওয়া আছিল। আর লগে লগেই টান দিল। আমি ধরার শেষ চেষ্টা করতে উইড়া গিয়া হোন্ডাতে একটা লাত্থি মারলাম, কিন্তু ঠিকমতো লাগল না। হোন্ডা টান দিয়া পলায় গেল দুইডা। পরে যখন গিয়া দেখলাম দুইডা মার্ডার তখন ডরাইছি, না বুইজ্যা গেছিলাম ধাওয়া দিতে, আমারে যদি গুলি কইরা দিত?”
এদিকে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক কিছু বিষয় নিশ্চিত হয়ে তদন্তকাজ শুরু করেছে পুলিশসহ অন্য গোয়েন্দারা। তাদের মতে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকা- আর হত্যাকারী পেশাদার ও দক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘উল্টো পথে মোটরসাইকেল আসার টাইমিংটা খেয়াল করলে বোঝা যায়, তারা ওই গাড়িটা অনেকক্ষণ ফলো করে এ পর্যন্ত এসেছে। ভিকটিমকে ফলো করে এসে সামনে জ্যাম দেখে এটাকেই কিলিং স্পট হিসেবে ফিক্স করে ফ্লাইওভারের ইউটার্ন দিয়ে উল্টো পথে এগিয়ে গিয়ে পজিশন নিয়েছে। পজিশন নেয়ার ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই ভিকটিমের গাড়ি সেখানে পৌঁছে যায়।’ ‘এটাতে বোঝা যায় তারা হয়তো ভিকটিমের গতিপথ আগে থেকেই রেকি করেছে। আর শুটিং (গুলি করার) দক্ষতা আছে। তাও পরিষ্কার।’‘কারণ এত কম সময়ে টার্গেট শট করে আবার স্মুথ এক্সিট করেছে। নিঃসন্দেহে এরা পেশাদার শুটার।’
আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যায় মামলা: রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নিহতের স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে ডলি বলেন, আমার স্বামী ১০ বছর বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ওই পদে থাকাকালীন দলীয়ভাবে কোন্দল ছিল। গত ৪-৫ দিন আগে আমার স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়। বৃহস্পতিবার বাসায় আসার পথে রাত আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে শাজাহানপুর মানামা ভবনস্থ বাটার দোকানের সামনে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। দুষ্কৃতিকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করার সময় প্রীতি নামে এক পথচারীও নিহত হন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহজাহানপুর থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
জাগো নিউজ নিউজ পোর্টালের সৌজন্যে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো:“ টিপুর শরীরেই লাগে ১০টি: আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে চার-পাঁচদিন আগে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মোবাইলে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। এর সপ্তাহ না পেরোতেই রাজধানীর ব্যস্তসড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হলো তাকে। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে এ কিলিং মিশনে অংশ নেন দুজন। মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরে তারা মোটরসাইকেলে আসেন। তাদের একজন চালক, অন্যজন পিস্তলধারী। মাত্র ২০ সেকেন্ডে কিলিং মিশন শেষে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যান তারা। পুলিশ বলছে, যে ব্যক্তি গুলি করেছেন, তিনি পেশাদারের চেয়েও পেশাদার। প্রকাশ্যে ব্যস্ত সড়কে এত কম সময়ে এতগুলো গুলি ছোড়া খুব সহজ ব্যাপার না। হত্যাকারীর ছোড়া ১২ রাউন্ড গুলির ১০টি টিপুর গলা, বুক, পেট, কাঁধ, পিঠ, কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্ধ হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিপুকে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের ঠিক সামনে থেকে গুলি করা হলেও আগে থেকে তাকে নজরদারি করছিল আরও কয়েকজন। প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট যে, এটি পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেট ও মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া নম্বরের সূত্র ধরে এখন তদন্ত চলছে। এছাড়া ঘটনায় বেশকিছু ফুটপ্রিন্ট, আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
সিসিটিভি ফুটেজে ২০ সেকেন্ডের কিলিং মিশন: এদিকে, জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে। ঘটনাস্থলের পাশের একটি বহুতল ভবনে বসানো সিসিটিভি থেকে ফুটেজটি নেওয়া। ফুটেজে টিপু হত্যা মিশনের স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ঠিক ১০টা ২১ মিনিট ২০ সেকেন্ড। আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুর ব্যক্তিগত সাদা রঙের নোয়াহ মাইক্রোবাসটি যানজটে আটকা পড়ে শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের ঠিক সামনে। এটি খিলগাঁও রেলগেট অভিমুখে যাওয়ার রাস্তা। এর ১০ সেকেন্ড আগে বিপরীত দিকের রাস্তা ধরে উল্টোপথে একটি মোটরসাইকেল আসে।
মোটরসাইকেলটি শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাফেজিয়া সুন্নীয়া আলিম মাদরাসা ও এতিমখানার সামনে এসে ঘুরিয়ে আবার রাজারবাগ অভিমুখে দাঁড় করান চালক। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা অস্ত্রধারী সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নেন। এসময় রাস্তায় খুব ধীরগতিতে গাড়ি চলছিল। ১০টা ২১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে টিপুর গাড়ির বাম দিক দিয়ে একেবারে কাছে গিয়ে প্রথম গুলি ছোড়া হয়। আচমকা আক্রমণ দেখে টিপুর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন চালক মুন্না।
তবে সামনেই রিকশার জট থাকায় গাড়িটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। গাড়ি থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ায় হামলাকারী দৌড়ে সামনে এসে খুব কাছ থেকে গাড়ির সামনের আসনে বসে থাকা টিপুকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ওইসময় গাড়ির জানালার কাচ ভেদ করে গুলিবিদ্ধ হন টিপু। এসময় আশপাশের লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। ১০ সেকেন্ড টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এরপর আশপাশে এলোপাতাড়ি কয়েকটি গুলি ছুড়তে দেখা যায়।
পরে টিপুর গাড়ির সামনে দিয়ে আবার সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার উল্টো পাশে মাদরাসার সামনে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলের দিকে চলে যান হত্যাকারী। রাত ১০টা ২২ মিনিট ১০ সেকেন্ডে দেখা যায়, মাইক্রোবাসের পেছনের আসনে বসে থাকা দুজন গেট খুলে বাইরে এসে মোটরসাইকেলটিকে ধাওয়া দিলে হত্যাকারীরা পালিয়ে যান। এরপর মাইক্রোবাসটি ঘিরে ধীরে ধীরে লোকজন জড়ো হতে থাকে।
বন্ধ ছিল এলাকার সব মার্কেট: হত্যাকা-ের ঘটনার ঠিক উল্টোপাশে ফুটপাতের চা দোকানি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এখানকার (শাহজাহানপুর) সব মার্কেটের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। রাত ৯টার দিকে আমার চা দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যাই। সাড়ে ১০টার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে বাসা থেকে বের হই। রাস্তায় এসে দেখি দুজনকে গুলি করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ওই এলাকার মার্কেট বন্ধ থাকে। এ কারণে হয়তো হত্যাকারীরা এ জায়গাটা বেছে নেয়। যাতে আশপাশের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে তারা ধরা না পড়ে। এ হত্যাকা-টি পূর্বপরিকল্পিত। মোটরসাইকেলে আসা দুজন ছাড়াও এ চক্রে আরও একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। জাহিদুল ইসলাম টিপু কখন, কোথা থেকে, কোন গাড়িতে আসছিল, সেগুলো টার্গেট করেছিল।’
নিহত টিপুর স্ত্রী যা বলছেন: জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি।
তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার মোবাইলে কল আসে। জানানো হয়, কে বা কারা আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। ওর (টিপু) সঙ্গে ছিল মেরাজ (৫৫), আবুল কালাম (৬০) ও গারিচালক মনির হোসেন মুন্না (৩৪)। গাড়িটা আমাদের নিজেদের। মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্টের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরছিল সবাই।’
ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, ‘মাইক্রোবাসের বাম পাশের জানালার গ্লাস ভেদ করে গুলি আমার স্বীমার শরীরে লেগেছে। তার গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশের ওপরে, বুকের বাম পাশে বোগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যভাগে নাভির ওপরে, বাম কাঁধের ওপরে ও নিচে, পিঠের বাম পাশে মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশে কোমর বরাবর, পিঠের ডান পাশে কোমরের ওপরে একাধিক, পিঠের ডান পাশের বাহুর নিচে ও নিতম্বের ডান পাশের নিচে একাধিক স্থানে গুলি লেগেছে।’
টিপুর স্ত্রী জানান, তার স্বামী গত ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে দলীয় কোন্দল ছিল। পাশাপাশি গত ৫ বছর ধরে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গর্ভানিং বডির সদস্য ছিলেন টিপু। মতিঝিল কাঁচাবাজারে গ্র্যান্ড সুলতান নামে তাদের একটি রেস্টুরেন্ট আছে। তার স্বামী ওই রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। চার-পাঁচদিন আগে টিপুকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
খুনিদের শনাক্তে কাজ করছে র‌্যাব: র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘খিলগাঁও রেলগেটের আগে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি সিগন্যালে ছিল। সেই মুহূর্তে একজন দুষ্কৃতকারী হেলমেট ও মাস্ক পরা অবস্থায় মাইক্রোবাসটির বাম পাশ দিয়ে গুলি চালান। এতে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও তার গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হন। এসময় মাইক্রোবাসের ডান পাশে রিকশায় প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু ও ওই শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ হত্যাকা-ের ঘটনায় বেশকিছু ফুটপ্রিন্ট, আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। এছাড়া বেশকিছু মোটিভ র‌্যাবের কাছে এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করছি। যিনি গুলি করেছেন, তাকেও সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। র‌্যাব ছাড়াও পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে।’
খুনি পেশাদারের চেয়েও পেশাদার, বলছে পুলিশ: ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, ‘নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করেন। নিহতের স্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে সন্দেহ করছেন না। তিনি শুধু বলেছেন, তার স্বামীকে দুষ্কৃতিকারীরা হত্যা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। এ ঘটনায় রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নামের ২২ বছরের একজন তরুণীও নিহত হয়েছেন। তার পরিবারে এখনো থানায় আসেনি। টিপুর স্ত্রীর করা মামলায় প্রীতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’
ডিসি আ. আহাদ বলেন, ‘মোটরসাইকেলে ছিলেন দুজন। একজন চালক, অন্যজন পিস্তলধারী। তিনি মূলত গুলি করেছেন। দুজনের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক ছিল। এছাড়া আরও কয়েকজন তাদের সহযোগী আশপাশে থাকতে পারেন। যারা টিপুর গাড়ির গতিবিধির ওপর হয়তো নজর রাখছিল। ঘটনাস্থল থেকে ১২ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। যিনি গুলি করেছেন তিনি পেশাদারের চেয়েও পেশাদার।’তিনি আরও বলেন, ‘চার-পাঁচদিন আগে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে একটি নম্বর থেকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু টিপু কিংবা তার স্ত্রী ডলি পুলিশকে হুমকির বিষয়টি তখন জানাননি। তবে ওই নম্বরের সূত্র ধরে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।’”




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com