নিত্যপণ্যের বাজারে এখনও অস্থিরতা বিরাজ করছে। ৬০০ টাকা কেজির গরুর মাংস শবে বরাতের অজুহাতে গত সপ্তাহে বেড়ে ৭০০ টাকাতে ঠেকে। এখনও সেই মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর গোপীবাগের গরুর মাংস ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, গত সপ্তাহের দরেই তিনি এই সপ্তাহে গরুর মাংস বিক্রি করছেন।
এদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে গরুর মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া ময়দার (প্যাকেট) দাম বেড়েছে কেজিতে এক টাকা। গত সপ্তাহে যে প্যাকেট ময়দা ৫৪ টাকা কেজিতে পাওয়া গেছে, এই সপ্তাহে সেই প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া অধিকাংশ সবজির দামও চড়া। সজনের কেজি এখন ২০০ টাকা, তবে সয়াবিন ও পেঁয়াজের দাম সামান্য কিছু কমেছে।
এখনও ব্রয়লারের কেজি ১৭০ টাকা: ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৪০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি ৫০০ টাকা। এদিকে ফার্মের মুরগির ডিমও গত সপ্তাহের মতো ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মানিক নগর এলাকায় বসবাস করেন গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, মাংসের দাম উঠেছে ৭০০ টাকা কেজি, মুরগির মাংস ৪০০ টাকা। তিনি উল্লেখ করেন, সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে মাংস খাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সয়াবিন এখনও ১৬৫ টাকা লিটার: ভোক্তার জন্য এখনও কোনও সুখবর নেই সয়াবিন তেলের বাজারে। যদিও সয়াবিন তেলের উৎপাদন, খুচরা ও সর্বশেষ আমদানি পর্যায়ে সরকার মোট ৩০ শতাংশ কর ছাড় দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু বাজারে এর তেমন প্রভাব এখনও দেখা যায়নি। তবে দাম অল্প পরিমাণ কমেছে। দুই সপ্তাহ আগে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়, এখন সেই সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা লিটার। প্রতি কেজি খোলা সয়াবিনও বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। আর পাম অয়েল (সুপার) ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৬ টাকা। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম কমেছে ১০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করেছেন ৮০০ টাকা, বর্তমানে এই সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ টাকা। তবে কোথাও কোথাও ৭৬০ থেকে ৭৮০ টাকাতেও ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে।
চিনি আগের মতোই ৮০ টাকা কেজি: এদিকে চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু এর প্রভাব দেখা যায়নি বাজারে। আগের মতোই ৮০ টাকায় চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অস্থির ময়দার বাজার: বাজারে এখন খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজি দরে। যা গত বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। এদিকে গত সপ্তাহে প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা কেজি। এখন এই ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে প্যাকেটজাত ময়দার দাম ছিল ৪৫ টাকা কেজি। এখন সেই ময়দার দাম ৫৮ টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরের ব্যবধানে এই ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ১৩ টাকা। একইভাবে গত বছরের ৩৮ টাকা কেজি খোলা ময়দা এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা দিয়ে। অর্থাৎ গত এক বছরে এই ময়দার দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১২ টাকা।
ডালের দাম: আমদানি করা বড় দানার মসুর ডালের কেজি ১১০ আর দেশি ছোট দানার ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। গত দুই সপ্তাহ ধরে এই একই দামে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে।
ছোলার কেজি ৭৫ টাকা: গত সপ্তাহের তুলনায় ছোলার দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজিতে যে ছোলা বিক্রি করেছেন, এই সপ্তাহে সেই ছোলা বিক্রি করছেন ৭৫ টাকা কেজি দরে।
চালের দাম কমেনি: মিনিকেট চালের কেজি ৬৫ থেকে ৬৮, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫০ থেকে ৫৫ এবং মোটা চালের কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা: রাজধানীর কাওরান বাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কমেছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
চড়া সবজির বাজার: রাজধানীর বাজারগুলোতে নতুন সবজি হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে সজনে ডাঁটা। দাম বেশ চড়া। বিভিন্ন বাজারে সজনে ডাঁটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। অবশ্য কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীরা সজনে ডাঁটার কেজি বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শাল গম (ওলকপি) ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ২০ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
মাছ বাজার: শুক্রবার নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। চিংড়ি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। পবদা ৪০০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।-বাংলাট্রিবিউন