সুঠাম দেহের অধিকারী টগবগে এক যুবককে ক্রাসে ভর দিয়ে একজন থেকে আরেকজনের নিকট, এক দোকান থেকে আরেক দোকান, এক অফিস থেকে আরেক অফিসে গিয়ে প্রায়ই ভিক্ষা করতে দেখা যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শহরতলী ও তার আশপাশের বিভিন্ন স্থানে। হ্যা, এই পঙ্গু ভিক্ষুক হলো রেজাউল ইসলাম(৩৫)। তিনি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ নং রাখালগাছি ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেন ও রোব্বান বেগমের ছেলে।বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে দিনমজুর রেজাউল ইসলামের সংসার সুখে স্বাচ্ছন্দেই চলছিল। ২০১৫ সালে আকস্মিক এক দুর্ঘটনায় ঘন কালো মেঘের অন্ধকার নেমে আসে রেজাউল ইসলাম ও তারার পরিবারের জীবনে। ২০১৫ সালে কাঁঠাল গাছ থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে চোট পায় রেজাউল। সে সময় অর্থের অভাবে পায়ের সু চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হওয়ায় যশোর পঙ্গু হাসপাতাল থেকে তার ডান পায়ের উরুর নিচে থেকে কেটে ফেলতে হয়। শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ডান পা হারিয়ে অথৈ সাগরের গভীর জলে পড়ে যায় রেজাউল। কি খাবে, কিভাবে সংসার চলবে এইসব দুশ্চিন্তা তার কপালের চামড়ার ভাজে ভাজে দৃশ্যমান হয়ে ফুটে ওঠে। কাজ করে একটি পয়সাও আয় করা সম্ভব হচ্ছেনা পঙ্গুত্বের কারণে। পঙ্গুত্ব তার কর্মক্ষমতাকে বিনষ্ট করে দিয়েছে সারা জীবনের জন্য। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও সন্তানের মুখে অনতত একবেলার খাবারো যে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। জীবন বাঁচাতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন রেজাউল। প্রতিদিন কালীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয় তার। ভিক্ষার এই টাকায় কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে, ৭ বছরের ছেলে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে দিন পার করছেন পঙ্গু রেজাউল। ইসলামের দৃষ্টিতে যদি কোনো ব্যক্তির অত্যাবশ্যকীয় আয়ের সকল উপায় হারিয়ে ফেলে তবে বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরকারি উদ্যোগে ওই ব্যক্তির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে সামাজের বিত্তবান লোকদের দায়িত্ব নিয়ে ওই ব্যক্তির জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দেয়া। তারপরও ভিক্ষা নয়।আমাদের সমাজব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায়, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাড়ানো তো দূরের কথা সরকারি উদ্যোগগুলোও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। সম্প্রতি হতদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে ইউনিয়নগুলোতে। এই কাজে ব্যাপক অনিয়ম গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। হতদরিদ্রদের প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ৪০ দিনের কাজের তালিকায় ঠাঁই হয়নি রেজাউলের মত পঙ্গু অসহায় দিনমজুরের।জীবনের কঠিন বাস্তবতায় রেজাউল যেনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জীবন্ত এক লাশ হয়ে বেঁচে রয়েছেন। দূর্ঘটনায় পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণকারী ভিক্ষুক রেজাউল এই প্রতিবেদককে জানান,আমি আগে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতাম। একদিন গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আমার ডান পায়ে ব্যাপক আঘাত পায়। ধারদেনা করে কোনো রকম চিকিৎসাও করায়। কিন্তু আরো উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তা করাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত আমার ডান পা টি কেটে ফেলা লাগে। একটি পা হারানোর পর থেকে আমার জীবনের চরম দুর্দশা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বাধ্য হয়ে স্কুল পড়ুয়া সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মায়ের মুখে অন্তত এক বেলা খাবার তুলে দেওয়ার জন্য আজ আমি মানুষের নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করছি।ভিক্ষার জন্য অন্যের নিকট আমার হাত বাড়াতে এত খারাপ লাগে যা বলার না। আমি ভিক্ষা করে আর সংসার চালাতে চাইনা। আজ যদি আমার একটা ব্যাটারি চালিত ভ্যান থাকতো তাহলে হয়তো আমাকে আর ভিক্ষা করা লাগত না। এই অবস্থাতেও আমি ভ্যান চালিয়ে আমার সংসার চালাতে পারতাম। কিন্তু আমি ভ্যান কেনার টাকা কোথায় পাব? কে দিবে আমাকে একটি ভ্যান কেনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা? আমি তো একেবারে নিঃস্ব। আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের পেটে ঠিকমতো ভাতই জোটে না। সেখানে ভ্যান কিনে রোজগার করার চিন্তা করাও আমার মত পঙ্গু রেজাউলের এক পায়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখার ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। বর্তমান কঠিন বাস্তবতার এই সমাজে এখনো অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি রয়েছেন যারা এই সমাজের অবহেলিত নিষ্পেষিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সমাজের ওই শ্রেণীর মানুষদের নিকট আমার আকুল আবেদন যদি আপনারা সহযোগিতা করে আমাকে একটি ভ্যান কিনে দেন তাহলে আমাকে আর ভিক্ষার থালা নিয়ে অন্যের দুয়ারে দাঁড়াতে হবে না। আমি কাজ করে খেতে চাই, ভিক্ষা করে নয়। ১১নং রাখালগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু জানান, রেজাউল অত্যন্ত ভাল একজন ছেলে। একটি দুর্ঘটনা তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে তার একটি পা’ই শুধু হারায়নি, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সারা জীবনের জন্য। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে তাকে আমি একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ও তার বাড়িতে একটি নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছি ইতিমধ্যে। সম্প্রতি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত টিসিবির উপকারভোগীর নামের তালিকায় তার নামও দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তাকে যদি একটি চার্জার ভ্যান কিনে দেওয়া যায়, তাহলে ভিক্ষার থালা নিয়ে তাকে আর দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে না। এ ধরনের উদ্দ্যোগ যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে আমিও সাধ্যমতো তাতে শামিল হবো। রেজাউলের মত অসহায় দরিদ্র দুর্ঘটনাহত পঙ্গু ব্যক্তিকে একটি চার্জার ভ্যান কেনার জন্য যদি কেউ সহযোগিতা করতে চান তাহলে তার ব্যাক্তিগত ০১৭৯৮ ৪২৪২৮১ এই নাম্বারের বিকাশ একাউন্টে আপনার সহোগিতার অর্থ পাঠাতে পারেন।আপনার সামান্য আর্থিক সহযোগিতায় অসহায় রেজাউলের মতো পঙ্গু একজন ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বের হতে পারবে।