অতিদরিদ্র সুমন আকন্দ। বয়স প্রায় ১৭ বছর। ৯ বছর আগে হারিয়ে ফেলে মানসিক ভারসাম্য। এরপর থেকে শিকলে বাঁধা জীবন তার। এই সুমনের একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের জন্য জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে মা ফাতেমা। কিন্ত এখনও তার কপালে জোটেনি সেই কার্ডটি। এই সুমন আকন্দের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চিকনী গ্রামে। এ গ্রামের দিনমজুর সিদ্দিক আকন্দের ছেলে সে। জানা যায়, দিনমজুর আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। দাম্পত্য জীবনে ১০ সন্তানের জননী। এর মধ্যে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়েসহ মোট সাত সন্তান বিভিন্ন সময়ে মারা যায়। অবশিষ্ট তিন ছেলেকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে কাজ করছেন ঢাকার পুরানপাড়া এলাকায়। সেখানে অন্যের বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে চলেছেন ফাতেমা বেগম। আর ভ্যানযোগে কাঁচামালের ব্যবসা করছেন তার স্বামী সিদ্দিক আকন্দ। তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলছিল তাদের। এরই মধ্যে ফারুক আকন্দ নামের বড় ছেলেটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কয়েক বছর আগে নিখোঁজ হলেও এখনও মেলেনি তার সন্ধান। এরপর মেজ ছেলে সুমন আকন্দের বয়স যখন ৮, তখন থেকে হারিয়ে ফেলে মানসিক ভারসাম্য। এই সুমনের বয়স এখন ১৭ বছর। এ ছেলেকে সুস্থ করতে বিভিন্ন চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়া হয়। কিন্তু কিছুতেই আরোগ্য হয়নি। এভাবেই দীর্ঘ ৯ বছর চিকিৎসা করানো হয় সুমনকে। এর ব্যয় বহন করতে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। এর ফলে সর্বস্বান্ত হয়েছে পরিবারটি। এখন খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। এসব তথ্য নিশ্চিত করে ফাতেমা বেগম জানান, ছেলে সুমনকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। তার মানসিক সমস্যা বেড়ে গেলে ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করাসহ পরিবারের লোকজনকে মারধর করে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কখনও ঘরে তালাবন্দি আবার কখনও পায়ে শিকল বেঁধে রাখতে হচ্ছে সুমনকে। তিনি আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মানুষের বাড়িতে কাজকর্ম করে খাই। এক দিন কাজ না করলে ভাত যায় না পেটে। তার ওপর ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে পাঁচ লাখেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ধার-দেনা করা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। বিদ্যমান পরিস্থিতে সুমনের একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বরদের কাছে ঘুরেছি কিন্ত কেউই করে দেয়নি কার্ডটি। এ বিষয়ে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ম-ল জানান, এ বিষয়টি জানা নেই। বরাদ্দ পেলে সুমনের ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।