আসন্ন রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা এবং তাক্ওয়ার ভিত্তিতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। একইসাথে তিনি সমাজে মানুষের জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলার উন্নতিসাধন ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধেরও আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এই সংকটময় মুহূর্তে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে পবিত্র মাহে রমাদান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এ মাসের প্রথম অংশ রহমতের, মধ্যবর্তী অংশ মাগফিরাতের ও শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে নাজাতের। এ মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর নামে একটি বরকতময় মহিমান্বিত রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাসে একটি ফরজ কাজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমতুল্য। আর একটি নফল কাজ একটি ফরজ কাজের সমান সওয়াব পাওয়ার যোগ্য হয়ে যায়। এ মাস তাকওয়া ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীলতার মাস।’
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। প্রায় প্রতিদিনই রাস্তা-ঘাটে, বাসা-বাড়িতে খুন, ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ। অপরদিকে নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। টিসিবির ট্রাক থেকে সাধারণ মানুষকে মধ্যরাত থেকে লাইন ধরে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে দেখা যায়। নি¤œ আয়ের মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে অতিকষ্টে জীবন-যাপন করছে। অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছে। এসব অসহায় মানুষের পাশে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য আমি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, পবিত্র এ রমাদান মাস কুরআন নাজিলের মাস; বদর যুদ্ধ ও মক্কা বিজয়ের মাস। কুরআন মানবজাতির প্রতি আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। পবিত্র কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে কুরআনকে সঠিকভাবে জানা এবং সে অনুযায়ী নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে পবিত্র রমাদান মাসের হক আদায় করা হবে। কুরআন থেকে হিদায়াত লাভের জন্য যে মন-মানসিকতা ও চরিত্রের প্রয়োজন, সেই মন ও চরিত্র গঠনের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তায়ালা মাহে রমাদানের সিয়াম পালনকে আমাদের প্রতি ফরজ করেছেন। পূর্ণ মর্যাদার সাথে ও পরিপূর্ণ হক আদায় করে মাসব্যাপী সিয়াম পালনের মাধ্যমে সে লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জামায়াতের আমির আরো বলেন, মহান আল্লাহর বিধান না মানার কারণেই আজ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ আপতিত হয়েছে। আজ সমাজে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, শোষণ, জুলুম, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী কর্মকা-সহ নৈতিক অবক্ষয় ব্যাপকভাবে বেড়েই চলেছে। সরকার মদের লাইসেন্স দিয়ে একদিকে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, অপরদিকে সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, রমাদানের পবিত্রতা রক্ষা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নগ্নতা বন্ধ করার দায়িত্ব প্রধানত সরকারের। আমরা সরকারকে এসব গর্হিত কাজ বন্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করে মানুষের জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি