মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

অন্য বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই কেন ছড়াচ্ছে ডায়রিয়া

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২

বাংলাদেশে প্রতি বছরই গরমকালে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এই বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে এবং মার্চের মাঝামাঝি থেকে বেশ ব্যাপকহারে তা বাড়তে শুরু করেছে।সাধারণত প্রতি বছর এর প্রকোপ শুরু হয় এপ্রিলের শুরু থেকে এবং ছয় থেকে আট সপ্তাহ তা চলতে থাকে। কিন্তু এই বছর ডায়রিয়া যে শুধু আগেভাগেই শুরু হয়েছে তাই নয়, রোগীর সংখ্যাও আগের যেকোনো বছরের চাইতে অনেক বেশি। এই সপ্তাহের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
রোগীর চাপ কেমন: ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হলেই যে সংগঠনটির নাম সবসময় সাধারণ মানুষজন এবং গণমাধ্যম বারবার উল্লেখ করে সেটি হল স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি।
এক সময় শুধু কলেরা নিয়ে গবেষণা পরিচালনাকারী এই প্রতিষ্ঠানটির হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা: বাহারুল আলম জানিয়েছেন, মার্চের ৬ তারিখ থেকে তারা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা খেয়াল করেছেন।
তবে ২৮ তারিখ থেকে সেখানে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল গড়ে প্রতিদিনই ১৩০০’র বেশি এবং রোগীর হার একই রকম রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘এই মাসের ২২ তারিখ এক দিনে ১২৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে – যা আমাদের জন্য বেশ বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল। কারণ এখানে কখনোই এক দিনে এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়নি। গত কয়েক দিন ধরেই প্রতিদিন ১৩০০’র উপরে রোগী ভর্তি হচ্ছে।’
তিনি জানিয়েছেন, শুরুতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, কদমতলা, বাসাবো, মোহাম্মদপুর এসব এলাকা থেকেই বেশি রোগী আসছিলেন। এখন ঢাকার প্রায় সকল এলাকা থেকে তারা রোগী পাচ্ছেন। তবে ঢাকার কাছের কয়েকটি জেলা গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ এসব এলাকা থেকেও অনেক রোগী আসছেন। প্রাপ্তবয়স্করাই বেশি ভর্তি হচ্ছেন এবং তীব্র পানিশূন্যতায় ভোগা রোগী সংখ্যায় অনেক আসছেন। তীব্র পানিশূন্যতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছেন ডা: বাহারুল আলম। গত বছর এরকম সময়ে হাসপাতালটিতে ৫০০’র মতো রোগী ভর্তি হতেন।
আগেভাগে কেন এত বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে? সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগির কয়েকটি কারণের একটি মনে করছেন, এই বছর গরম একটু আগেই শুরু হয়েছে এবং এর সাথে করোনাভাইরাস বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি পুরো শিথিল হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক দেখছেন তিনি। তিনি বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ ছিল, মানুষজনের চলাচল ও জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে, প্রচুর মানুষ ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলেন।
‘অনেক কিছু ধীরে ধীরে খুলেছে। কিন্তু এখন সবকিছু একদম পুরো চালু হয়ে গেছে। সব মানুষ একসাথে বের হয়েছে। সেই সাথে মার্চেই আমরা ৩৪, ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠতে দেখেছি। এই ধরনের তাপমাত্রায় খাবারে দ্রুত জীবাণু জন্ম নেয়। কোন সময়ের পর আর খাবার খাওয়া উচিত না – সেটা মানুষ বুঝতে চায় না।’ ‘আর রাস্তার খাবার, লেবুর শরবত – এসব প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর অন্যতম উৎস। সবাই একসাথে এসব খাচ্ছে এবং রোগটি ছড়াচ্ছে।’ এছাড়া তিনি মনে করেন, গত দুই বছর মানুষজন নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে ছিল। হাত পরিষ্কারের প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসা এবং স্বাস্থ্যবিধি শিথিল হওয়ার সাথে সাথে মানুষজনের ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করার প্রবণতা কমে আসছে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, স্পর্শ করা, পরিবেশন করা ও খাবার খাওয়ার আগে, টয়লেট থেকে বের হয়ে, বাইরে থেকে ফিরে এসে হাত ধুয়ে নেয়া। কারণ হাত দিয়েই মানুষ সবকিছু স্পর্শ করে এবং সবচেয়ে বেশি জীবাণু বহন করে। ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়ানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে পানি। ঢাকার যেসব এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে সেখানে কলের পানিতে সমস্যা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। ঢাকায় পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মূলত উৎসে পানির মান পরীক্ষা করে। কিন্তু প্রচুর এলাকায় পানির পাইপ ফুটো হয়ে সুয়ারেজ লাইনের সাথে মিশে গেছে এবং এই সমস্যা সারা বছরের। ‘এটা একটা চেইন রিঅ্যাকশনের মতো। একটা থেকে আর একটা বিষয় প্রভাবিত হচ্ছে।’
কলেরা এবং ই-কোলাই: ডা: আলমগির বলছেন, ‘সাধারণভাবেই প্রাপ্ত য়স্কদের মধ্যে যে ডায়রিয়া হয় তার মধ্যে প্রধান কারণ কলেরা এবং ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। এগুলো ছড়ানোর মাধ্যমই হচ্ছে এসব জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি ও পচা বাসি খাবার।’
যদিও বাংলাদেশে কলেরার জীবাণুর উপস্থিতি সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় না। কলেরা শব্দটির ব্যাবহার এড়িয়ে যাওয়া হয়। বলা হয় মারাত্মক ডায়রিয়া। তবে আইসিডিডিআর,বি এবার তাদের হাসপাতালে ভর্তি প্রতি ৫০তম রোগীর মল পরীক্ষা করে যে ফল পাওয়া গেছে তা হলো ২৩ শতাংশের মতো রোগী কলেরায় আক্রান্ত। যদিও এটি পূর্ণ চিত্র নয়।
সংস্থাটি প্রতি বছর ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে কিছু রোগীর মল পরীক্ষা করে থাকে। তাতে সবসময় কলেরার উপস্থিতি পাওয়া যায় এবং সরকারের কাছে সেই তথ্য দেয়াও হয়।
ডা: আলমগির বলছেন, ‘কলেরা প্রতিরোধে কার্যকরী টিকা রয়েছে। কিন্তু সেটি দিতে হয় বছরে দুই বার করে এবং প্রতি বছর। যা বাংলাদেশের বাস্তবতায় কঠিন। আর এখন কলেরায় আগের মতো মানুষ মারা যায় না। কারণ এর খুব ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। এক সময় তা ছিল না। তবে কোনটা কলেরা সেটা আলাদা করতে জানতে হবে। তাহলে চিকিৎসায় সুবিধা হবে।’
অন্যদিকে শিশুদের মধ্যে শীতকালে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। এই মৌসুমেও শিশুদের রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে। এছাড়া শিগেলা ব্যাকটেরিয়াও একটি কারণ।
আলাদা করে বোঝার উপায় ও করণীয়: ডা: বাহারুল আলম জানিয়েছেন, খালি চোখে দেখে কখন সাবধান হতে হবে। ২৪ ঘণ্টায় তিন বা তার বেশি বার পাতলা পায়খানা হলে সেটিকে সাধারণত ডায়রিয়া বলা হয়। শুরুর দিকে বমি হয়ে থাকে। এছাড়া থাকে পেট কামড়ানো – এগুলো ডায়রিয়ার মূল লক্ষণ। এরকম হলে সাবধান হতে হবে।
তবে তিনি বলছেন, ‘কলেরা হলে, আমরা বলি রাইস ওয়াটার স্টুল। অর্থাৎ চাল-ধোয়া পানির মতো দেখতে প্রচুর পাতলা পায়খানা। দেখা যাবে যে এত বেগ থাকবে যে বাথরুমে থেকে ফিরে আবার যাওয়ার মতো সময় থাকে না। কলেরায় খুবই দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে রোগী দ্রুত নিস্তেজ হয়ে যাবেন এবং শকে চলে যাবেন। তাই কলেরার বেলায় হাসপাতালে নিতে কোনোভাবেই দেরি করা যাবে না।’
‘ই-কোলাই থেকে যে ডায়রিয়া হয় তাতে বমি হবে, পেট কামড়াবে, তার পর পাতলা মল হবে। রোটা থেকে ডায়রিয়া হলে মলের রঙ সবুজাভ হবে। শিগেলার হলে অল্প করে নরম মল হবে – তবে তাতে মিউকাস ও পরে রক্ত থাকতে পারে। গা-গোলানো ভাব থাকতে পারে।’ ‘এই দুটি ক্ষেত্রে বাড়িতে স্যালাইন খেয়ে চিকিৎসা চালানো যেতে পারে। খুব খারাপ হলে তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।’ তিনি বলছেন, সব ধরনের ডায়রিয়ার চিকিৎসা একটাই, আর সেটি হলো শরীর থেকে বের হয় যাওয়া পানি ও লবণ আগের যায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। ডায়রিয়া হলে রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। স্যালাইনের পাশাপাশি সাধারণ পানি, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল পানীয় দিতে হবে। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com