জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে খুন ও গুম মামলার আসামী ১১ বছর পর একই ঘটনায় বাদী সেজে প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর জন্য মামলার বাদী হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বিলবালিয়া (ধোপাদহ) গ্রামে ঘটেছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বিলবালিয়া (ধোপাদহ) গ্রামের মরহুম মোকাদ্দেছ ফকির এর ছেলে আ: খালেক ফকির এর সাথে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ ছেলে মিজানুর রহমান, মিনহাজ উদ্দিন, মানিক মিয়া, মেয়ে ঝিনুক আক্তার ও পুত্রবধু নার্গিস আক্তার হেনা প্রতারণা করে জমি লিখে নেয়। এ নিয়ে স্ত্রী,পুত্র ও কন্যার সাথে আব্দুল খালেক এর বিরোধ চলছিল।এ বিরোধে আব্দুল খালেক এর সাথে বিভিন্ন সময় স্ত্রী,পুত্র,কন্যা অসদাচরণ করায় সরিষাবাড়ী থানায় তিনি একটি জিডি করেন। পরে আব্দুল খালেক এর কাছ থেকে প্রতারণা করে নেওয়া জমি ফেরত পেতে সরিষাবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, জামালপুরে মামলা করেন। যার নং-৭১/২০১০ইং। সরিষাবাড়ী সাবরেজিস্ট্রী অফিসে ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রীকৃত হেবার ঘোষণাপত্র দলিল যার নং-৫৬৫০ পন্ডের জন্য বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন আ: খালেক। উক্ত মামলায় আব্দুল খালেক এর স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ মেয়ে ঝিনুক আক্তার,পুত্রবধু নার্গিস আক্তার হেনা,ছেলে মিজানুর রহমান ফকির, মিনহাজ উদ্দিন ফকির ও মানিক মিয়া কে বিবাদী করা হয়। প্রতারণামূলকভাবে বিলবালিয়া মৌজার ৪টি দাগে ৫১ শতাংশ ভূমি রেজিস্ট্রী করে নেওয়ায় এ মামলাটি করেন আব্দুল খালেক। মামলা চলমান থাকাবস্থায় ২০১১ ইং সালের ১৬ জানুয়ারী আব্দুল খালেক নিখোঁজ হলে আদালত বাদীর অনুপস্থিতিতে মামলাটি খারিজ করে দেন। নিখোঁজের ঘটনায় তার ছেলে মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।যার নং-৬৮৮, তারিখ-১৬/২০১১ইং।এ ঘটনায় আঃ খালেকের বড় বোন ফজিলা বেগম জামালপুরের কগনিজেন্স কোর্ট (খ) অঞ্চল আদালতে মামলা করেন। উক্ত মামলায় আব্দুল খালেক এর স্ত্রী মর্জিনা বেগমসহ ছেলে মিজানুর রহমান ও আলহাজ(মানিক মিয়া) এদের বিরুদ্ধে হত্যার পর লাশ কোন গোপন জায়গায় পুতিয়া বা আটক, কিংবা মারপিট করে হত্যা করে গুম বা পঙ্গু এবং কোন স্থানে আটক রাখতে পারে এমন অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর আদালত মামলাটির ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরিষাবাড়ী থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে সরিষাবাড়ী থানার ওসি আদালতের নির্দেশে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা রুজু করেন।যার নং ১৫,তারিখঃ ২৩/০৫/২০১১ইং। সেই সাথে সরিষাবাড়ী থানার এস আই মাজহারুল ইসলামকে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন ওসি।উক্ত মামলার বাদী ফজিলা বেগমের সাথে পারিবারিকভাবে সমঝোতায় আপোষ মিমাংসায় পার পেয়ে যায় মামলার বিবাদীগণ। আব্দুল খালেক ফকিরের কাছ থেকে বিলবালিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম ২০১০ সালে বিলবালিয়া মৌজার ১৯০ নং দাগে ১০ শতাংশ ভূমি রেজিস্ট্রী করেন। যাহা বিলবালিয়া (ধোপাদহ) নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার নামে ৭ শতাংশ এবং সাইফুল ইসলাম এর পারিবারিক কবর স্থানের জন্য ৩ শতাংশ নির্ধারিত করা হয়। উক্ত ভূমি আ: খালেক ফকিরের ছেলে মিজানুর রহমান ১০/১৫ জন ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী ২০২২ ইং তারিখে জবর দখল করতে যায়। এ সময় বিলবালিয়া গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলাম এর ছেলে এনামুল হক সহ তার লোকজন জবর দখলকারীদের বাধা প্রদান করলে তাদেরকে মারপিট করে ৩ জন কে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় মিজানুর রহমানকে প্রধান আসামী করে সরিষাবাড়ী থানায় এনামুল হক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১০, তারিখ-১০-০২-২০২২ইং। উক্ত মামলায় ২নং আসামী কামাল ফকির কে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ওই মামলার আসামী জামিনে এসে মরহুম সাইফুল ইসলাম এর পরিবারকে বেকায়দায় ফেলতে মিজানুর রহমান এর ছোট বোনকে ভিকটিম বানিয়ে একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার অভিযোগ দায়ের করে। পরে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় ও মিথ্যা প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের মিশন ব্যাহত হয়। এরপরেও ১১ বছর পূর্বে নিখোঁজ আব্দুল খালেক কে অপহরণ ও গুমকারী হিসেবে এনামুল হক, রাশেদুল ইসলাম,আবু সাঈদ ও হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের, বিভিন্ন স্থানে পোস্টার টাঙ্গানো এবং মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে আ: খালেক এর গুম ও হত্যা মামলার আসামী মিজানুর রহমান। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার এবং সচেতন মহল খুন ও গুম মামলার আসামীর দায়ের করা ১১ বছর পর একই ব্যক্তির কল্পকাহিনী নিয়ে হয়রানী মূলক মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান সহ এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সাথে মিথ্যা মামলা দায়েরকারী মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশুদৃষ্টি কামনা করে গতকাল রোববার সকাল ১১ টায় ভুক্তভোগী এনামুল হক এর নিজ বাড়ী বিলবালিয়া (ধোপদহ) এলাকায় তার পরিবার পরিজন এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এ সময় এনামুল হক, রাশেদুল ইসলাম, আবু সাঈদ, হাফিজুর রহমান ও এলাকাবাসীর পক্ষে দুলাল মিয়া, আব্দুল লতিফ সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্হিত ছিলেন।