স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় অল্প পুঁজিতে ভুট্টা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ভুট্টা চাষীরা। ভুট্টার ক্ষেতে লকলকে সবুজ পাতার ফাঁকে আসতে শুরু করেছে ফুল ও ভুট্টার মোচা। এই দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। ভুট্টা মানুষের জন্য পুষ্টিকর তেমনি পোল্ট্রি ও মাছের খাবারসহ বিভিন্ন খাবারে যুক্ত হওয়ায় ব্যাপকহারে চাহিদা বেড়েছে। শুধু ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষি জমিতে ভুট্টা চাষ এনে দিয়েছে নতুন গতি। আবার ভুট্টা আবাদের সাথে সাথী ফসল চাষেও বাড়তি অর্থ পাচ্ছেন চাষীরা। উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভুট্টার চাষে অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথাসময়ে কৃষকরা এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনে সম্ভাবনা রয়েছে। এই মৌসুমে ৩২৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। প্রতি মণের বর্তমান বাজার মূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এতে অল্প পুঁজিতে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৩ হাজার টাকা লাভ হয়। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়ন প্রায় সব জায়গায় কৃষকের বিস্তির্ণ ফসলের মাঠ এখন ভুট্টার সবুজ ক্ষেতে ভরে গেছে। রাজারামপুর, রাঙামাটি, নূরপুর ও ঘাটপাড়া গ্রামে দেখা যায় গাছগুলো বেশ বড়ও হয়ে ওঠেছে। এখন ভুট্টা ক্ষেতগুলোর পরিচর্যা ও নিড়ানী এবং সেচ কাজসহ নানা কাজে ব্যস্ত চাষীরা। গাছগুলো হাঁটু সমান আর কিছু এলাকায় আগাম ভুট্টা রোপণ করায় গাছ মানুষের উচ্চতাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং কোথাও কোথাও গাছে মোচা এসেছে। এসব ফলন আগাম ঘরে তোলা যাবে। উপজেলার গোপালপুর গ্রামের সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, বোরো চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি অথচ যখন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয় তখন ধানের বাজারে ধস নামে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচই উঠে না। কিন্তু ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম, দামও বেশি থাকে বলেই ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। উপজেলার খড়মপুর গ্রামের নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, চার বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। দামও ভালো পাওয়া যায়। একটু দেরীতে বিক্রি করলে মণে ৯০০ থেকে থেকে হাজার টাকা পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, ভূট্টা একটি লাভজনক ফসল। তাছাড়াও কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা ভূট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে ভূট্টার ক্ষতিকর বালাই “ফল আর্মি ওয়ার্ম” সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন থাকতে হবে এবং ভূট্টার পোল্ট্রি ফিড ব্যতীত এর বহুমুখী ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে তাহলেই এই ফসলটির স্থায়িত্ব এবং চাষাবাদ আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে।