রমজান মাসজুড়ে রোজাদারের জন্য সব সময় ৬ কাজ করা জরুরি। কারণ এটি রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসটি রোজদারের জন্য নেয়ামতে ভরপুর। প্রতিটি কাজের ব্যাপারে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যার বিনিময়ে রয়েছে গুনাহ মাফ ও সওয়াবের হাতছানি। কী সেই ৬ কাজ? নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসজুড় রোজাদারের জন্য ৬টি কাজ করার বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তাহলো-
১. তারাবি নামাজ পড়া: রমজানে রাতের বেলা তারাবি নামাজ পড়া। চাই খতম তারাবি, সুরা তারাবি কিংবা ঘরে একা একা আদায় করা। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সঙ্গে সওয়াব আশায় ‘কিয়ামে রমজান’ অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি)
২. শেষ রাতে সেহরি খাওয়া: রমজানের রোজা পালনের জন্য শেষ রাতে সেহরি খাওয়া আবশ্যক। এটি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। অনেকেই তারাবি পড়ে গভীর রাতে কিছু খেয়ে শুয়ে পড়ে। সকালে ওঠে ফজর নামাজ আদায় করে। এমনটি করলে সেহরির বরকত অর্জিত হবে না। সেহরির বরকত সম্পর্কে হাদিসে একাধিক বর্ণনা এসেছে-
> হজরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শেষ রাতে খাবার খাও। তাতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
> হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীর জন্য প্রার্থনা করেন।’ (তাবারানি ও ইবনে হিব্বান)
> হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেহরি খাওয়ায় বরকত আসে। সুতরাং তোমরা তা (সেহরি) খেতে ছেড়ো না; যদিও তোমরা তাতে এক ঢোক পানিও খাও। কেননা যারা সেহরি খায়, তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমাদ) > হজরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের এবং আহলে কিতাবের (আমাদের আগে আসমানি কিতাব পাওয়া ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান) মধ্যে পার্থক্য হলো- সেহরি খাওয়া। আর আমাদের তো ভোর (সোবহে সাদেক) হওয়ার আগ পর্যন্ত খাওয়া ও পান করার অনুমতি রয়েছে।’ (মুসলিম)
৩. খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা: ইফতারের সময় হলে খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা। খেজুর না পেলে সাদা পানি পান করে ইফতার শুরু করা। হাদিসে এসেছে-
> ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর খেয়ে (মাগরিবের) নামাজের আগে রোজা ভঙ্গ করতেন।’ (আবু দাউদ) > নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে; সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত)
৪. ইফতারে দেরি না করা: ইফতারের সময় হওয়ার পর ইফতার করতে দেরি না করা। অর্থাৎইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। হাদিসে পাকে এসেছে- নবিজী সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ ততদিন কল্যাণের পথে থাকবে, যতদিন তারা (সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে) তাড়াতাড়ি ইফতার শুরু করবে।’ (মুসলিম)
৫. মিথ্যা ও মন্দ পরিহার করা: রোজাদার ব্যক্তির জন্য মিথ্যা কথা বলা এবং মন্দ কাজ পরিহার করা জরুরি। রোজা রেখে মিথ্যা কথা পরিহার ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানের অন্যতম দাবি। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে না, তার পানাহার ত্যাগ করায় (রোজা রাখায় আল্লাহর) কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)
৬. মন্দ কথার উত্তম জবাব দেওয়া: যে কোনো মন্দ কথায় উত্তম জবাব দেওয়া। আল্লাহ তাআলা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে- ‘(হে রাসুল!) আপনি ভালো দ্বারা মন্দের মুকাবিলা করুন।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৯৬) রোজাদারের সঙ্গে কোনো ব্যক্তি মন্দ কথার জবাবে ভালো কথায় উত্তর দেয়া। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘কেউ যদি মন্দ কথা বলে, (কোনো রোজাদারকে) রাগানোর চেষ্টা করে, তখন তাকে এ কথা বলা যে, ‘আমি রোজাদার।’ (নাসাঈ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত রমজানব্যাপী এ কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করে রমজানের অবিরত রহমত বরকত, মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করা। কোরআন-সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।