পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও লোকসান দেখছেন চাষিরা, তাই মিলিয়ে গেছে তাদেও মুখের হাসি। দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজবাড়ী জেলা। দেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ এই জেলায় উৎপাদন হয়। জেলার মোট পাঁচটি উপজেলায় ব্যাপক আকারে পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের আবাদ বেশি। চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। তবে সেচ, বীজ, শ্রমিকের মজুরি ও জমি প্রস্তুতে বেশি খরচ হওয়ার বিপরীতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের কৃষক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, চলতি বছর আমি চার পাকি জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ করেছি। প্রত্যেক শতাংশ জমিতে এক মণ করে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। মূলত আমাদের এখানে ২১ শতাংশে ১ পাকি করে জমির হিসাব করা হয়। আমাদের হিসাবে প্রতি ১ শতাংশ জমিতে দেড় মণ করে পেঁয়াজ হওয়ার কথা। কিন্তু কয়েকবার অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিতে ফলন বেশি ভালো হয়নি। অন্যদিকে বাজারে পেঁয়াজের দামও কম। সব মিলিয়ে এবার পেঁয়াজে লাভবান হতে পারবো না, লোকসান গুনতে হবে। একই ইউনিয়নের আরেক কৃষক মো. কালাম ব্যাপারী বলেন, আমাদের এলাকা ব্যাপকহারে পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়। আমি এবার ৫ পাকি জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ করেছি। জমি থেকে পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রয় জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বর্তমানে বাজার অনুযায়ী প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা দরে। এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে মণ প্রতি আমাদের ২০০-৩০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হবে। কৃষকদের দাবি, এবার প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৬ থেকে ২৯ টাকা। অথচ বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের নায্যদাম থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ পেঁয়াজ চাষিরা।
কৃষি বিভাগ জানায়, আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দুই হাজার ৮৬৫ হেক্টর বেশি। সে অনুযায়ী এ বছর রাজবাড়ীতে চার লাখ ৪২ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। সরেজমিন জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, দিনব্যাপী প্রখর রোদে কঠোর পরিশ্রম করে মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলা ও পরিষ্কার করে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। পুরুষেরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে এনে বাড়ির উঠানে ঢালছেন। মহিলারা সেই পেঁয়াজ পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। তবে গত বছর কম দামে পেঁয়াজের বীজ ক্রয়, চারার মূল্য কম, আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় চাষিরা ব্যাপকহারে পেঁয়াজ রোপণ করেন।
অন্যদিকে এ মৌসুমে জমির সেচের মূল্যবৃদ্ধি, বীজের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকের মুজুরি বেশিসহ জমি প্রস্তুতে খরচ বেশি হওয়ায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। বালিয়াকান্দি উপজেলার পেঁয়াজ চাষি সালাম ফকির বলেন, চলতি বছরে পেঁয়াজ চাষে আমাদের যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, সে অনুযায়ী পেঁয়াজ বিক্রি করে মণপ্রতি আমাদের ৩০০-৪০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে। গতবছর পেঁয়াজের বাজারদর ভালো থাকায় আমরা লাভবান হয়েছিলাম। কিন্ত এ বছর পেঁয়াজের বাজার খুবই নিচে নেমে গেছে। সাধারণ কৃষকের কথা চিন্তা করে বাইরের দেশের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
জেলার পাংশা, কালুখালি, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দসহ কয়েকটি জায়গার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা কৃষকদের থেকে সরাসরি প্রতি মণ পেঁয়াজ ৬০০-৭৫০ টাকা দরে কিনছেন। পরে এ পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্যবাহী ট্রাকে নিয়ে গিয়ে তারা বিক্রি করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম সহিদ নূর আকবর জানান, চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। ৩৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়, যা গত বছরের চেয়ে দুই হাজার ৮৬৫ হেক্টর বেশি। চাষাবাদ বেশি হওয়ায় উৎপাদনের হার বেড়েছে। এ বছর জেলায় চার লাখ ৪২ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা রয়েছে।