ইসি-গণমাধ্যম ব্যক্তি সংলাপ
নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেছেন, আপনারা ন্যায্য ভোট করতে পারবেন না। যদি ৫০ শতাংশও সুষ্ঠু ভোট করতে পারেন, তাহলে আপনাদের স্যালুট। গতকাল বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বেলা ১১টা ১৫মিনিটে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নিয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। বিগত মাসেও শিক্ষাবিদসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করে ইসি।
ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, সারাদেশে একদিনে কেন নির্বাচন করতে হবে? বিভিন্ন জেলা ভাগ করে নির্বাচন করতে পারলে ভালো হয়। পর্যায়ক্রমে কয়েকদিনে নির্বাচন করলে ভোট সুষ্ঠু করা সম্ভব। তিনি বলেন, নির্বাচনে বেশিরভাগই দায়িত্ব পালন করেন প্রতিনিধিদের আত্মীয়স্বজনরা। যেই জেলায় নির্বাচন হয়, সেই জেলার সরকারি কর্মকর্তারা ভোটের দায়িত্ব পালন করেন। যদি এরকমই হয় তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকে। কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনাদের আরও হোমওয়ার্ক করতে হবে। প্রত্যেক প্রার্থীদের নিয়ে আপনাদের হোমওয়ার্ক করতে হবে। প্রত্যেক নির্বাচনে তারা কিভাবে এতো ভোট পায়। এটার কারণ নের করতে হবে।
ইসির আমন্ত্রণে যারা সাড়া দিয়েছেন: আনিসুল হক প্রথম আলো, সোহরাব হাসান প্রথম আলো, অজয় দাস গুপ্ত সিনিয়র সাংবাদিক, দুলাল আহমেদ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মানবকণ্ঠ, হাশেম রেজা সম্পাদক আমার সংবাদ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বিভু রঞ্জন সরকার সিনিয়র সাংবাদিক, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। ডেইলি অবজারভার অনলাইন ইনচার্জ কাজী আব্দুল হান্নান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহবুব কামাল, ভোরের ডাক সম্পাদক কে এম বেলায়েত হোসেন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, প্রতিদিনের সংবাদ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, আজকের পত্রিকা সম্পাদক ড. মো. গোলাম রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ডেইলি স্টারের এক্সিকিউটিভ এডিটর সৈয়দ আশফাকুল হক, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান।
সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর গত ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে তার কার্যক্রম করেছেন। তবে এই সংলাপ কোন ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে এমন আশা করছেন না অংশীজনরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘অতীতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংলাপের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কম্পোজিশন (গঠন) দেখে মনে হয়, গিয়ে কোনো লাভ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে দৃঢ়তা, মানসিকতা এবং যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, সেটা এই কমিশনের আছে কি না, সন্দেহ আছে। নিরপেক্ষতা, দৃঢ়তা যদি কমিশনের থাকে, তাহলে আমি মনে করি, ওনারা খুব ভালো করেই জানেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন,‘এর আগে দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন এবং একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কে এম নূরুল হুদা কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। কিন্তু ওই দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক আছে। নূরুল হুদা কমিশন বেশ আয়োজন করে সংলাপ করেছিল। কিন্তু সংলাপে উঠে আসা সুপারিশগুলো বই আকারে ছাপানোর বাইরে তেমন কোনো ব্যবস্থা তারা নেয়নি।’
শুধু নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাই নয় প্রত্যেকটি বিরোধী দলও বিশ্বাস করে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতাও এই বক্তব্যে অনঢ়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘ যত ভালো ইসি হোক না কেন, তার পক্ষে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব না, যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হয়। তাই আমরা (সংলাপে) আগ্রহী না।’