মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে জাতীয় কুরআন প্রতিযোগিতার দুটি শাখায় বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশী কিশোর ও তরুণী। বিদেশীদের জন্য নির্ধারিত দুই শাখায়-ই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তারা। আধুনিক কাতারের স্থপতি শেখ জাসেম বিন মুহাম্মদ আলসানির নামে কাতারে প্রতি বছর সরকারিভাবে জাতীয় কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ বছর তিনটি শাখায় এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিজয়ী বাংলাদেশী কিশোরের নাম উসামা (১৪)। সে কাতারের একটি স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে। উসামা সিলেটের শাহপরান থানার খাদিমপাড়ার মরহুম মাওলানা শিহাবুদ্দীনের ছেলে। মাওলানা শিহাবুদ্দীন কাতারে ইমাম হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিন বছর আগে কাতারে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আর বিজয়ী তরুণী হলেন- আয়েশা। সে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নর উমর ফারুকের মেয়ে। ১৯৯৫ সাল থেকে আয়েশার পরিবার কাতারে বাস করছেন। বর্তমানে আজিজিয়া এলাকায় একটি মসজিদে দায়িত্ব পালন করছেন তার বাবা। বিশেষ বিভাগে প্রথম হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে আয়েশা পেয়েছেন এক লাখ কাতারি রিয়াল। এর আগে আরো পাঁচ বার পুরস্কার পেয়েছেন আয়েশা। ২০১৫ সালেও একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল সে।
আয়েশার বোন আজিজা এবার অন্য আরেকটি শাখায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে। সে পেয়েছে ৫০ হাজার কাতারি রিয়াল। অনুষ্ঠানে দুই মেয়ের পক্ষে বাবা ওমর ফারুক কাতারের ধর্মমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। আয়েশা ও আজিজার বাবা ওমর ফারুক বলেন, ওরা বাসায় কুরআন মুখস্ত করেছে। আমি এবং আমার স্ত্রী ওদেরকে শিক্ষাদান করেছি। আমরা ওদের এমন অর্জনে আনন্দিত।
কাতারে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতায় বয়স কিংবা নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা শাখা থাকে না। ফলে এই দুই শাখায় অংশ নিয়েছেন কাতারে বসবাসরত আরব ও অনারব বিভিন্ন দেশের নানা বয়সের হাফেজ নারী ও পুরুষ। আর এদের সবাইকে পেছনে ফেলে দুটি শাখায়ই প্রথম স্থান জয় করে বাংলাদেশি এই হাফেজ কিশোর ও হাফেজা তরুণী। প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত কাতারের ধর্মমন্ত্রী ও সুধীজনরা বাংলাদেশীদের এমন জয়জয়কার দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। কাতারের ধর্মমন্ত্রী বলেছেন, পবিত্র কুরআন মুখস্ত বিদ্যায় বাংলাদেশীদের অগ্রযাত্রা প্রশংসনীয়। কাতারে মর্যাদাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতায় দুটি শাখায় বাংলাদেশীদের প্রথম হওয়ার খবরে আনন্দিত কাতার প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। কাতারের ধর্ম মন্ত্রণালয় চলতি রমজানের প্রথম সপ্তাহে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।
কাতারের জাতীয় মসজিদে সপ্তাহব্যাপী তিনটি ধাপে প্রতিযোগিতা শেষে ৮ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী দোহার শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে কাতারের ধর্মমন্ত্রী গানেম বিন শাহিন আলগানেম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার সনদ ও অর্থ তুলে দেন। কাতারে শেখ জাসেম বিন মুহাম্মদ আলথানি কুরআন প্রতিযোগিতার এবারের ছিল ২৭তম আসর। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান নাসের ইউসুফ আলসুলাইতি বলেন, করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারো এই প্রতিযোগিতা শুরু করতে পেরে আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা আদায় করছি। এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন প্রায় দেড় হাজার প্রতিযোগী। কাতারি ও বিদেশিদের মধ্যে অংশ নেন হাফেজ নারী ও পুরুষরা। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরকে মোট ১২ লাখ কাতারি রিয়াল পুরস্কার হিসেবে তুলে দেয়া হয়।