প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘ দুই বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে সব কিছু। চলছে মাহে রমজান, আর কিছুদিন পর অনুষ্ঠিত হবে মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর ঈদকে ঘিরে নতুন পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের হিলির দর্জিপাড়ার কারিগররা। হিলি শহর সহ বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারের দর্জি দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে সেলাই কাজের অনেক অর্ডার পাচ্ছে কারিগররা। আবার অনেক দর্জিরা কাজের অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে। গত দুই বছর করোনাকে মোকাবিলা করতে হিমশিম খেয়েছিল মানুষ। ঈদ সহ কোন অনুষ্ঠান করতে বা অংশগ্রহণ করতে পারেনি কেউ। বর্তমান করোনার প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। আগামী ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবে মুসলমানরা। তাই পরিবারের জন্য অনেকেই পোশাক কিনছেন। অনেকেই নতুন পোশাক তৈরি করছেন। আবার দর্জিপাড়ায় বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরি করতে দিচ্ছেন তারা। দর্জিপাড়ার কারিগর কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, আপন মনে তৈরি করছেন তারা অন্যদের পোশাক। প্রতিটি দোকানে পাচ্ছে অনেক কাজের অর্ডার। এক একজন কারিগর দিনে তৈরি করছে ৬ থেকে ৮ টি অর্ডারি কাপড়। হিলি বাজারের মাহি টেইলার্সের কারিগর রাজু ও রিয়াজ বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে সব কিছু বন্ধ ছিলো। লকডাউনের জন্য দোকানপাট ঠিকমতো খুলতে পারেনি। এছাড়াও কাজের কোন অর্ডার ছিলো না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। সংসারও চলাতে হিমশিম খেয়েছিলাম। তবে বর্তমান করোনা নেই, সরকার সব কিছু খুলে দিয়েছে। আর কিছুদিন পর ঈদ। এবার মানুষ অনেক কাপড় তৈরি করতে দিচ্ছে। আশা করছি ঈদ আমাদের অনেক ভাল কাটবে। হিলি সিপির মনিষা টেইলার্সের তিন জন কারিগর রফিকুল, আনিছ ও ইকবাল হোসেন বলেন, ৯ টা রোজা চলছে, রোজার ১০ দিন আগে থেকে ঈদের কাপড় তৈরির অর্ডারী কাজ পেয়েছি। হাতে প্রচুর কাজ, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কাপড় সেলাই করছি। ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মজুরি পাচ্ছি। গত বছরের চেয়ে এবার আমরা পরিবার নিয়ে ঈদ ভালই কাটাবো। মাহি টেইলার্সের মালিক ও কাটিং মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুই বছর অনেক কষ্টে ছিলাম। সংসারের চাহিদা ঠিকমতো পুরন করতে পারিনি। এবার আল্লাহ দিলে অনেক কাজ পাচ্ছি। আমার ৫ জন কারিগর আছে, তাদেরও অনেক কাজ দিচ্ছি। দোকানে অনেক কাপড়ের অর্ডার পেয়েছি। এগুলো সেলাই করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন আছে, তাই নতুন করে অর্ডার আর নিচ্ছি না। মনিষা টেইলার্সের মালিক ও কাটিং মাস্টার রোমেনা আক্তার মনি বলেন, আমার নিজ বাড়িতে কারখানা, এখানে চার জন কারিগর কাজ করে থাকে। আমি লেডিস কাজ করি, মেয়েরা আমার কালেকশন করা কাপড় কিনে তা এখানেই তৈরি করে থাকেন। গত দুই বছর করোনা মহামারি কারণে কাজের অর্ডার তেমন বেশি পাইনি। কারিগররাও অনেক কষ্টে ছিলো। তবে বর্তমান রোজা ও আগামী ঈদের জন্য প্রচুর কাজের অর্ডার পাচ্ছি। কারিগররাও এবার রাত-দিন কাজ করবেন। আশা করছি আমরা সবাই ঈদের আনন্দ সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারবো।