মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ প্রদানের জন্য আশ্রায়ন টু প্রকল্পের অধীনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় তিনটি স্থানে গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ১নং সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের গুঞ্জনগর এলাকায় ১৯ টি ও ১০ নং কাস্টভাঙ্গা ইউনিয়নে ১১ টি ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে।অপরদিকে বারোবাজার ইউনিয়নের জলকর মাইজদী বাওড় এর পাশে কয়েকদিন আগে ৫৯টি গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে একই প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পটিতে ২ টি রুম, রান্নাঘর, বাথরুম এবং বারান্দাসহ আধাপাকা একটি বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২,৯৮০৫৪.৯৫ টাকা। এখানে কন্ট্রাক্টর প্রফিট ভ্যাট এবং আইটি ১৯.৫% এ ৫৮১২০.৭২ টাকা। অর্থাৎ একটি বাড়ি নির্মাণের প্রকৃত ব্যয় ২,৪০,০০০ টাকা।সরোজমিনে আশ্রয়ন প্রকল্প ২ এর মাইজদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত এলাকায় বাওড় এর মধ্যে ড্রেজার লাগিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। অথচ প্রকল্পে বিশেষ বাধ্যতামূলক অনুসরণীয় কতিপয় নিয়মাবলীর মধ্যে ২ নং বুলেটে উল্লেখ রয়েছে – কোনো অবস্থাতেই সদ্য ভরাটকৃত মাটিতে, নরম মাটিতে, খালের পাশে, নদীর কিনারে, নিচু জায়গায় এ নকশায় ঘর করা যাবেনা। এধরনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অপরদিকে কলাম ও গ্রেড বীমের লোহার রিং দূরত্ব অনুসারে ৬ ইঞ্চি পর পর দেওয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে ১ ফুট অন্তর দেওয়া হচ্ছে। ৪ টি ১২ মিলি রড নকশা অনুসারে ব্যাবহারের কথা থাকলেও সেখানে ৮ ও ১০ মিলি রড় ব্যাবহার করা হচ্ছে ।এভাবে ইতিমধ্যে ৩ টি গ্রেড বীমের ঢালাই এর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ আরো ৩ টি বক্সে এই রড বসানো হয়েছিল ঢালাই দেওয়ার জন্য। সেখানে উপস্থিত হয়ে নকশায় উল্লেখিত নিয়মের বাইরে কাজ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান, হেড মিস্ত্রী কাম কন্ট্রাক্টর ভূট্ট হোসেন এভাবে কাজ করতে বলেছেন। পরবর্তীতে হেড মিস্ত্রি ভুট্টো কাজের সাইডে আসলে তিনি বলেন, এটা ভুল হয়েছে, শ্রমিকরা না বুঝে করে ফেলেছে। তখন তড়িঘড়ি করে পেতে রাখা তিনটি বাড়ির গ্রেড বিমের রড তুলে খুলে ফেলা হয়। ঘড়ির কাটা তখন বেলা ১ টা ছুই ছুই করছে। এমন সময় হাজির হলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের প্রকৌশলী নাজমুল হোসেন।তিনি জানান, আমার গায়ে জ্বর, তাছাড়া পিয়াইও স্যার আমাকে এখানে আসতে বলেননি। এ কারণে আমি এখানে আসিনি।আমাদের অফিসে অনেক কাজ। সে অনুযায়ী লোক কম। এ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব সময় সব জাইগায় যাওয়া সম্ভব হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হেল আল মাসুম মাইজদীতে চলমান কাজের সাইডে এসে হাজির হন। তিনি বলেন, আশ্রায়ন প্রকল্পের এই কাজ আমি ভর্তুকী দিয়ে করছি। নির্মাণসামগ্রীর বর্তমানে দাম অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এ কারণে আমাদের মান ঠিক রেখে কাজ করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এখানে আলাদাভাবে বরাদ্দ দিয়ে ভর্তুকির ব্যয় সমন্বয় করা লাগবে । আমরা ইট কিনছি ১৮০০০ টাকা গাড়ি, অথচ এখন ইটের দাম ২২০০০ এর বেশি। কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য নিবিড় ট্যাকনিক্যাল তদারকির বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। তিনি জানান ঝিনাইদহ এলজিইডি প্রোকৌশলী সরোজমিনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এখানে গৃহ নির্মানের অনুমতি প্রদান করেছেন। তথচ তার নিকট এই অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যার্থ হম। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, জেনারেল লাইনে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এও পারদর্শিতা দেখাতে চাইলে কিভাবে হবে। অনিয়মগুলো যথাস্থানে গিয়ে না দেখেই পাশ থেকে কথা বলে প্রকল্প কর্মকর্তা মোটরসাইকেল যোগে কালীগঞ্জে চলে আসেন।কাজে অনিয়মের ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল্লাহ হাবিবকে জানান হলে তিনি সব শুনে বলেন আমি ব্যাপারটা ইউএনও স্যারকে এক্ষুনি জানাচ্ছি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিনের সাথে অনিয়মের ব্যাপারে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এখন প্রশ্ন হলো “ আশ্রায়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার” শ্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মহোতী উদ্যোগকে কতটুকু সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।নিয়মের বাইরে কাজ করা কি ভুল নাকি দূর্নীতি? এ দায় কার?