কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন সারাদেশে এমন তিন শতাধিক মরদেহ দাফন ও সৎকার করেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। গত ৭ এপ্রিল থেকে কোয়ান্টামের চার শতাধিক নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এ সেবাকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। করোনা আতঙ্কে পরিবারের সদস্যরা যখন লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন বা ভয়ে আতঙ্কে দূরে থাকছেন ;তখন মরদেহের শেষ বিদায় জানাতে মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটির একদল স্বেচ্ছাসেবক। কোয়ান্টামের দাফন কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছালেহ আহমেদ জানান, গত ৭ এপ্রিল থেকে আমরা দাফন কার্যক্রম শুরু করি।
এ পর্যন্ত দেশব্যাপী আমরা ৩০৬ জন মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করেছি। এর মধ্যে ঢাকা ২৩৫ জন ও বাকি ৭১ জন রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়া, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। রাজধানীর বাইরে সারাদেশকে ১৮টি জোনে ভাগ করে আমাদের দাফন কার্যক্রম চলছে। ধর্মীয় বিধান মেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী দাফন বা সৎকারের কাজ করে যাচ্ছি আমরা। শুধু মুসলিমই নয়; সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্যেও রয়েছে আমাদের বিশেষ দল। এছাড়া মহিলাদের দাফনে সহযোগিতা করছেন ২০ জনের একটি মহিলা দল।
শুরু থেকেই ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ বাহিনী, আনসার সদস্য, সচিব, সাংবাদিক, ব্যাংকারসহ নানা পেশার মানুষকে দাফন ও সৎকার করেছে কোয়ান্টাম।
ছালেহ আহমেদ বলেন, এর মধ্যে আমরা ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের শেষযাত্রায় সম্মানের সাথে বিদায় দিতে পেরেছি। যারা আমাদের দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন; সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মমতার সাথে নিজেদের হাতে কবরস্থ করতে পেরে আমরা ধন্য মনে করছি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারের মরদেহ সৎকার করি আমরা।
গত ৯ মে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি। ঢাকা থেকে গৌতম আইচের মরদেহ যথাযথভাবে ডব্লিউএইচও-র নির্ধারিত ব্যাগে প্যাকিং করে বরিশালে নেয়া হলে কোয়ান্টাম বরিশাল দল তাকে সমাধিস্থ করে। গত ১১ মে ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে মারা যান নর্দার্ন মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. আনিসুর রহমান। তার মরদেহ দাফন করে কোয়ান্টামের দাফন দল।
এভাবেই দিনরাত স্বেচ্ছাসেবার জন্যে প্রস্তুত থাকছেন কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবক দল; যারা ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ে ডাক পড়লেই তারা হাজির হয়ে যান হাসপাতাল বা মৃতের বাসাবাড়িতে।
জানা যায়, একটি দাফন প্রক্রিয়ায় প্রায় ২৭ রকমের উপকরণ ব্যবহার করে কোয়ান্টাম। দাফন কাজে সুরক্ষার জন্যে ব্যবহার করা হয় অ্যালকোহলসহ কয়েক ধরনের জীবাণুনাশক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী এ দাফন কার্যক্রম চলছে। কার্যক্রমের পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, সেফটি গ্লাস, ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, হেভি গ্লাভস, নেক কভার, মরদেহের কাফনের কাপড়, মরদেহ বহনের জন্যে বিশেষ বডি ব্যাগসহ সুরক্ষার জন্যে কয়েক ধরনের জীবাণুনাশক- পুরোটাই কোয়ান্টামের স্ব-অর্থায়নে স্বেচ্ছাসেবায় পরিচালিত হচ্ছে।
কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ছালেহ আহমেদ জানান, করোনায় মারা গেলেও মৃতদের জানাজা পড়ানো হয় সাধারণ মরদেহের মতো যথাযথ সম্মানের সাথে। কবরস্থ করার পর মৃতের জন্যে আন্তরিক দোয়া করা হয়। একজন মানুষ মারা গেলে পরিবারের মানুষ কাছে থাকবে না, আত্মীয়রা জানাজায় আসবে না- এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। করোনার এই সময়ে স্বজনহীন সেইসব মৃতকে শেষ সম্মান জানানোর মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এ সেবাকাজে নেমেছি। দেশের এই দুর্যোগে শেষ পর্যন্ত আমরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যেতে চাই।
এমএস/প্রিন্স/খবরপত্র