ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌর সদরে অবস্থিত খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাদা দাবী করায় এশিয়ান টিভির সাংবাদিকসহ ৪জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গফরগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গতকাল বুধবার সকালে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেল হাজতে পাঁঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- এশিয়ান টিভির সাংবাদিক পরিচয়ধারী সাইফুল ইসলাম খান(৩৮), আইনাল ইসলাম(৪২), জোবায়েদ হাসান(২৪) ও গাড়ি চালক মোঃ ইসহাক(৩৩)। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েক ব্যক্তি প্রবেশ করে। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থিত প্রধান শিক্ষিকার বাসার বাহির থেকে লাগানো সিটকিনি খোলে ঘরে প্রবেশ করে। ঘরের ভিতর ঢুকে তারা বিছানাপত্র উলটপালটসহ ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার তছনছ করে। পরে বিদ্যালয়ের আয়া দৌড়ে এসে তাদের ঘরে ঢুকার কারণ এবং পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা ঘর থেকে বের হয়ে নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। পরে তারা প্রধান শিক্ষিকার অফিস কক্ষে গিয়ে উনাকে খোঁজতে থাকে। এসময় প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ক্লাশ নিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি অফিস কক্ষে চলে আসেন। এসময় বিদ্যালয়ের আয়া রাবিয়া খাতুন এসে প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুনকে আঙুল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ধারীদের দেখিয়ে বলে আপা তারা আপনার বাসায় গিয়ে সমস্ত জিনিসপত্র তছনছ করেছে। প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয়ধারী সাইফুল ইসলাম খান, আইনাল ইসলাম, জোবায়েদ হাসান বলেন আমরা সাংবাদিক। আপনি অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হবে। আপনার বিরুদ্ধে সমস্ত ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে। যদি বাঁচতে চান তাহলে আমাদেরকে ৫লাখ টাকা এখন দিতে হবে। না হলে আপনার রক্ষা নাই। আপনি গফরগাঁও থাকতে পারবেন না। এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষিকা টাকা দিতে অস্বীকার করে তাদেরকে অনুনয় বিনয় করলে তারা আরো উত্তেজিত হয়ে না ধরনের হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষিকা তাদেরকে বসিয়ে টাকা সংগ্রহের আশ্বাস দিয়ে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও গফরগাঁও থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানান। সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও গফরগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়। পরে এশিয়ান টিভির সাংবাদিক পরিচয়ধারী সাইফুল ইসলাম খান, আইনাল ইসলাম, জোবায়েদ হাসান ও গাড়ি চালক মোঃ ইসহাককে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন বলেন, সাংবাদিক পরিচয়ে কয়েকজন বিনা অনুমতিতে আমার অনুপস্থিতিতে বাসায় গিয়ে তছনছ করে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। বিনা অনুমতিতে শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করে ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে ভিডিও ধারণ করেছে। পরে তারা আমার অফিসে এসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। টাকা না দিলে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের হুমকি দেয়। গফরগাঁও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক আহম্মেদ বলেন, এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বাদী হয়ে আটক ৪জনসহ অজ্ঞাতনামা ৩জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের গতকাল বুধবার সকালে আদালতের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেল হাজতে পাঁঠানো হয়েছে।