শেরপুরে নিজ বাড়ির ছাদ কৃষিতে ২৫০ প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন গৃহনী মোহসীনা হেনা। মোহসীনা হেনা শেরপুর জেলা শহরের সজবরখিলা মহল্লার বাসিন্দা। তার স্বামী সাবেক নালিতাবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমান রিপন। ২৫শথ বর্গফুটের তার এই ছাদে শোভা পাচ্ছে পুদিনা পাতা, বেগুন, মাল্টা, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা, কমলা, কালো ও সাদা জাম, সফেদা, আম, লিচু, কদবেল, শরীফা, লাল পেয়ারা, কয়েক প্রকারের লেবু, সজনে, শীত লাউ, টমেটো, মরিচ, বড়ই, জলপাই, ডালিম, কমলা, মালটা, বরবটি, চাল কুমড়ো, শসা, করলা, ড্রাগনফল সহ বিভিন্ন ফুলের ২৫০ টি প্রজাতিরও বেশি গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলে আছে বিভিন্ন রকমের ফল, ফুলসহ নানান রকমের সবজি। যে কারোর দেখেই মনে হবে এ যেন ছাদ নয় এক টুকরো নির্মল উদ্যান। গৃহনী হেনা জানান, তার স্বামী মুখলেছুর রহমান রিপন ৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি টানা ১৫ বছর একই উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। ছাদ কৃষিতে সফল এই গৃহীনি আরো বলেন, আমি মাঝেমধ্যে ইউটিউব ও টেলিভিশনে শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখতাম। তখন প্রায়ই ভাবতাম যদি আমিও বাড়িতে ছাদ কৃষি করতে পারতাম। এর পরই কয়েকটি নার্সারি থেকে গাছ সংগ্রহ শুরু করি। এখন আমার ছাদে ২৫০ টিরও বেশি প্রজাতির গাছ আছে। সারাদিন গৃহস্থালির কাজ শেষে যখন বিকেলে বাগানে আসি। গাছ ও গাছে থাকা ফুল, ফল ও সবজি গুলোর দিকে তাঁকালে সব ক্লান্তি নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। এছাড়াও গাছগুলোর সাথে সময় কাঁটালে মনে এক অন্যরকম প্রশান্তি জাগে। আমার ছাদ কৃষি থেকে পাওয়া ফল, সবজি যেভাবে নিজেদের প্রয়োজনের চাহিদা মেটায়। অন্যদিকে এগুলো আন্তীয় স্বজনদের বাড়ি পাঠিয়েও আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনে আনন্দ পাই। অন্য গৃহীনিদদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে গৃহীনি হেনা জানান, যাদের নিজস্ব বাড়িতে ছাদ আছে। তারা যেন অবশ্যই সেটাকে কাজে লাগায়। ছাদ কৃষি করা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। ইচ্ছা থাকলেই যে কেউ ছাদ কৃষি করতে পারেন। বাড়ির মালিক মুখলেছুর রহমান রিপন বলেন, দাম্পত্য জীবনে আমরা এক কন্যা ও এক ছেলে সন্তানের পিতামাতা। বড় মেয়েটার নাম মাইশা মমতাজ মৌলি। সে ঢাকায় একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। ছোট ছেলেটার নাম একেএম মাকসুদুর রহমান। সে শেরপুর জেলা শহরের একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান আরো জানান, আমার স্ত্রী মাত্র এক বছরে এত সুন্দর একটি ছাদ কৃষি করতে পেরেছে। প্রায় প্রত্যেক মাসেই কোন না কোন গাছে ফল আসেই। ফল ও সবজি গুলো খেতেও সুস্বাদু। কারণ এই গাছগুলোতে কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক দেওয়া হয়। প্রতিটি গাছের টবে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গরুর গোবর। আমার স্ত্রী হেনা নিজ সন্তানের মত গাছ গুলোকে দেখাশোনা ও পরিচর্যা করে। আমি প্যারালাইসিস জনিত অসুস্থতার কারনে ঠিক মত কথা বলতে ও চলাফেরা করতে পারিনা। দিনের বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে বসে কাটাতে হয়। তবুও যখন মন খারাপ থাকে ছাদে গাছ দেখতে চলে আসি। গাছে ঝুলন্ত ফল, সবজি দেখলে মন একদম ভাল হয়ে যায়। রিপন ও হেনা দম্পতির ছাদ কৃষি দেখতে আসা যুবক হামিদুর রহমান জানান, নিজ চোঁখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। ছাদেও এত সুন্দর কৃষি পণ্য ফলানো যায়। একদম তরতাজা ফল, সবজি ও বিভিন্নফুল গাছ দেখে আমি সত্যিই বিমহিত। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা.মোহিত কুমার দে বলেন, বর্তমান সময়ে মাঠ কৃষির পাশাপাশি ছাদ কৃষিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা বাড়ছে। একদিকে ছাদ কৃষি যেমন নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদার যোগান দেয়। অন্যদিকে এই কাজে নিজের মনের প্রশান্তিও বাড়ে। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ছাদ বাগানীদের নিয়মিত সহযোগীতা ও তথ্য সরবারহ করছে।