বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

রমজানের শেষ ১০ দিনে সর্বাধিক ইবাদত

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

রমজান মাসের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন হলো শেষ ১০ দিন। কেননা এ দশকেই আছে পবিত্র শবেকদর। বিশেষ হিকমতের কারণে শবেকদরের দিনক্ষণ ঠিক করে দেওয়া হয়নি। এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে। শবেকদর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)
এ রাতের ইবাদতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় শবেকদরে ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৪; মুসলিম, হাদিস : ৭৬০) সুতরাং এই রাতের ফজিলত লাভে সচেষ্ট হওয়া আমাদের সবার কর্তব্য। অন্তত এশা ও ফজরের নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা যায়, তবু সারা রাত নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। এক হাদিসে এসেছে : ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
শবেকদর কবে? হাদিস শরিফে এসেছে : ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করো। ’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭) তাই শেষ দশকের সব রাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদত করা চাই। বিশেষত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে রমজানের অন্যান্য রাতের তুলনায় বেশি বেশি ইবাদত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও কোরআন তিলাওয়াত করা প্রয়োজন। রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইবাদত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫৩) শেষ দশকের সূচনা হয় ইতিকাফ দ্বারা। রমজানের পুরোপুরি রহমত ও বরকত লাভের জন্য ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামও করেছেন, তাই আমাদের জন্যও ইতিকাফ করা সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬) আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
এ সময় তিনি আল্লাহর ইবাদতে মসজিদে নির্জন বাস করতেন। দুনিয়াবি সব ধরনের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতেন, ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তাঁর ইতিকাফের জন্য মসজিদে একটি তাঁবু পাতা হতো। ইতিকাফকালীন তিনি রোগী দেখতে বের হতেন না, জানাজায় যেতেন না এবং নারীদের সংশ্রব ত্যাগ করতেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজনের মতো জরুরি কিছু ছাড়া তিনি তাঁর ইতিকাফস্থল ত্যাগ করতেন না। ইতিকাফের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘মসজিদের ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা। চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (সা.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কিরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমল করেছেন। ’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৪২) রমজানের প্রথম দুই দশকেরও বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত আছে। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত আরো বেশি। কেননা পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে এই দশকের কদরের রাতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। অবশ্যই আমি সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। ’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩-৪)
সুতরাং এই ১০ দিনে বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। পাশাপাশি এই দশকে বেশি বেশি দোয়া করা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া পড়ব? তিনি তাঁকে এই দোয়া শিক্ষা দেন ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউ-উন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা‘ফু আন্নি। ’ অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৫০)
তাই রমজানের বিগত দিনগুলো যাদের অবহেলায় কেটে গেছে, রমজানের শেষ ১০ দিন কিছুতেই অবহেলা করা উচিত নয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com