শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে ভাটা চলছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৬৬৯ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ হিসাবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের আট মাসে রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ১৯ শতাংশ। দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের এক-তৃতীয়াংশই আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে ৫১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের ৩০ শতাংশেরও বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪৩ কোটি ডলার। এ হিসাবে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২১ শতাংশ কমেছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বড় অংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
রেমিট্যান্স আহরণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ২০১৯ সালের রেমিট্যান্স প্রবাহকে আমরা স্বাভাবিক মাত্রা বলে মনে করছি। ওই বছরের মার্চে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল, চলতি বছরের মার্চে তার চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি এসেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল, সেটি অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসসৃষ্ট বৈশ্বিক আর্থিক দুর্যোগের মধ্যে অনেক প্রবাসীই দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। দেশে ফেরার আগে তারা নিজেদের সব সঞ্চয় রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠিয়েছেন। যারা দেশে ফেরেননি, তারাও অন্য সময়ের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। এ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে আশা করছি, পবিত্র রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে চলতি মাস থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।
গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির মাধ্যমে মাত্র ১১৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে ৪৩ শতাংশেরও বেশি। ব্যাংকটি এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাসের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
শুধু অগ্রণী ব্যাংক নয়, দেশের শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ১০ ব্যাংকের মধ্যে সাতটিরই রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাসের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। আলোচিত সময়সীমায় ব্যাংকটির রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে ৩১ শতাংশ। শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ১১ দশমিক ২, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৫ দশমিক ২ ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। প্রবাসী আয়ের এ দুঃসময়েও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময়ে রেমিট্যান্স ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে সাউথইস্ট ব্যাংকের। ১ দশমিক ৬ শতাংশ রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি নিয়ে ব্যাংক এশিয়াও রয়েছে ইতিবাচক ধারায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স সংগ্রাহক ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। কিন্তু চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটি তার অবস্থান হারিয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ। দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের রেমিট্যান্স আহরণে এতটা বিপর্যয় হয়নি। অগ্রণী ব্যাংকের আহরণ ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় রেমিট্যান্স আহরণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। যদিও চলতি অর্থবছরে এ ব্যাংকেরও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহের বিপর্যয়ের কারণ জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য বলেন, অগ্রণী ব্যাংককে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমানত সংগ্রহকারী ব্যাংক হিসেবে তোলার ক্ষেত্রে গত দুই বছর শামস-উল-ইসলাম আগ্রাসী ভূমিকা রেখেছিলেন। এজন্য তিনি সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছিলেন। ৩ শতাংশ প্রণোদনার কারণে প্রবাসীদের অনেকে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। আবার রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি দেখানোর জন্য এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কাছ থেকে অনেক সময় বেশি দরেও অগ্রণী ব্যাংক রেমিট্যান্স কিনে নিয়েছিল। এ খাতে শামস-উল-ইসলাম ব্যাংকের প্রায় হাজার কোটি টাকা অপব্যয় করেছেন। কিন্তু সেবার মান না বাড়ায় কোনো প্রবৃদ্ধিই টেকসই হয়নি। উল্টো ব্যাংকের প্রায় সব সূচকই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের মতো বিপর্যয় না হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ও সোনালী ব্যাংকের রেমিট্যান্স আহরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের রেমিট্যান্স কমেছে ৩১ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬৫ কোটি ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে জনতা ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ ৪৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আর বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালীর রেমিট্যান্স আহরণ ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি অর্থবছরে তা ৮৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকগুলোর আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও এ খাতে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৯ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ৩৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এমটিবির মাধ্যমে দেশে এসেছে। এ হিসাবে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৩৬ শতাংশ। কীভাবে এত বড় প্রবৃদ্ধি হলো, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অনেক ব্যাংকই বাড়তি দাম দিয়ে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। কিন্তু আমরা সে পথে হাঁটিনি। বরং গত কয়েক বছরে আমরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়িয়েছি। সেবার মান বাড়ায় গ্রাহকরা নিজে থেকেই এমটিবিতে আসছেন। অন্যদিকে বড় কয়েকটি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের সেবা বিক্রির আয় এমটিবির মাধ্যমে আসছে। এ কারণে দেশের সামগ্রিক রেমিট্যান্স আয় কমলেও এমটিবিতে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com