অবৈধ সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছে ঢাকার আশুলিয়ার নৈহাটি বাজার। ফলে বাজার ব্যবস্থা ভেঙ্গে গিয়ে কতিপয় সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে ব্যবসা করছেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মনিহারি দোকানদার সহ প্রতি হাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ী। এ জিম্মিদশা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লীষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসি। আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির নৈহাটি বাজারটি একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। ঐহিত্যবাহী এ বাজারটি স্থানীয় নৈহাটি, পাড়াগ্রাম, কোদালটেকি, নাল্লাপোল্লাসহ কালিয়াকৈর উপজেলারও বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি বাজার। এসব অঞ্চলের মানুষজন এ বাজারেই কেনা-কাটাসহ বিভিন্ন ব্যবসাও করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজার কমিটির সভাপতি তমিজ মাষ্টার ও তার ভাতিজা আক্তার হোসেন মিলে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে বাজারের অধিকাংশ জমি তাদের দখলে নিয়ে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাজারে তমিজ মাষ্টারের দোকান ঘর রয়েছে ৫টি, যার মধ্যে মসজিদের জমি দখল করে একটি ডেকোরেটর দোকান রয়েছে তার। ভাতিজা আক্তার হোসেনের বাজারে দোকান রয়েছে ৬টি। তার মধ্যে আরএস রেকর্ডীয় রাস্তা বন্ধ করে দুটি বিশাল আকৃতির দোকান রয়েছে। বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেনের বেশ কয়েকটি দোকান ঘর রয়েছে। বাজারের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে একটি দু’তলা বিল্ডিং রয়েছে তার। তার এক আত্মীয় আব্দুর রহমান। নিজেকে পোষ্ট মাষ্টার দাবী করে আরএস রেকর্ডীয় রাস্তা বন্ধ করে দুটি দোকান নির্মাণ করে দখলে রেখেছেন। যে দোকান দুটিতে তার ছেলে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের মত এ সিন্ডিকেটের অপর সদস্য শশী মোহন শীল, আব্দুর রশিদসহ আরো বেশ কয়েকজন আর এস রেকর্ডীয় রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। এই সিন্ডিকেটটি বাজারের সমস্ত কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই সিন্ডিকটি মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বাজারের প্রায় অর্ধশত দোকান কালিয়াকৈর উপজেলা এলাকার মানুষের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে। যা থেকে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় কয়েক লাখ টাকা। এছাড়া বাজারের গরুর হাটটিও তাদের কাছে হস্তান্তর করার পায়তারা করেছে। যার অধিকাংশ অংশই আশুলিয়ার অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন দোকানদার জানান, তমিজ মাষ্টার, আক্তার হোসেন ও আবুল সিন্ডিকেটের কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের ভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। তারা যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে। হাবীবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি তাদের চাহিদা মত টাকা না দেয়ায় তার নির্মাণাধীন দোকান ঘরটি কৌশলে সরকারি লোকজন দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। আর ঘরের সমস্ত মালামাল বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক আবুল হোসেন আত্মসাত করেছে। সম্প্রতি বাজারের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহব্বায়ক কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও এই সিন্ডিকেটটি তাদের ইচ্ছা মত নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কমিটি গঠন করেছে। যে কমিটিতে সভাপতি রয়েছে তমিজ মাষ্টার, সহ-সভাপতি তার আপন ভাতিজা আক্তার হোসেন, আরেক সহ সভাপতি পোষ্ট মাষ্টার পরিচয়দানকারী আব্দুর রহমান এবং সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে আবুল হোসেনকে। এই সিন্ডিকেটটিই তারা নিজেরাই কমিটি করে ঘোষণা দিয়েছে। এরআগে পাড়াগ্রাম এলাকার মৃত জোড়ান শীলের স্ত্রী অবলা শীলের একটি দোকান ঘরের কিছু অংশ জোরপূর্বক দখলে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। সরকারি রাস্তার গাছ কেটে বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে। এব্যাপারে নৈহাটি বাজার কমিটির সভাপতি তমিজ উদ্দিন মাষ্টারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ জানান, বাজার উন্নয়নে যা যা করা দরকার সরকারি ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে করা হয়েছে। কিন্তু বাজারের দোকানপাট সম্পর্কে কোন কিছু করতে গেলেই বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি ওই সিন্ডিকেটের কারণে। দীর্ঘদিন ধরেই এই সিন্ডিকেটটি বাজারে নানা অনিয়ম করে আসছিল। যার ফলে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহব্বায়ক কমিটি করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা একক ক্ষমতায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছে। যার সভাপতি, সেক্রেটারী সবাই এই সিন্ডিকেটের সদস্য। তাদের হাত থেকে বাজারটি রক্ষায় সংশ্লীষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাজাহারুল ইসলাম জানান,বিষয়টি জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।