ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জীবনের অর্জিত সকল সম্পদ দান করা মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফি মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ২৬ এপ্রিল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অত্যন্ত বিনয়ী ও নিষ্ঠাবান এই অধ্যাপক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়াননি অধ্যাপক মোহাম্মদ শফি। বিভাগের উন্নয়ন, গবেষণা, প্রকল্প আর ক্লাস নিয়েই কেটেছে তার সময়। পাঁচটি গবেষণাগ্রন্থ, একটি আত্মজীবনী, ৭০টির মতো প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে। বিভাগের নিজস্ব ভবন করতে ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই টাকায় পাঁচতলার ভিতসহ একতলা পর্যন্ত হয়ে তা থেমে যায়। অর্থাভাবে প্রায় ১৫ বছর আটকে থাকা কাজ তিনি নিজের উপার্জন থেকে জমানো প্রায় ৭০ লাখ টাকা দিয়ে আবার শুরু করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তার অংশ হিসেবে অধ্যাপক শফি তার বাড়ি বগুড়ার সান্তাহারে বিপি হাইস্কুলে ২০০১ সালে বাবার নামে চালু করেন ‘আবদুল লতিফ ছাত্রবৃত্তি কল্যাণ ফান্ড’। মায়ের নামে পাশের কলসা আহসান উল্লাহ ইনস্টিটিউশনে চালু করেন ‘আমেনা খাতুন ছাত্রীবৃত্তি কল্যাণ ফান্ড’। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ টাকায় গঠন করেন ‘আমেনা-লতিফ ট্রাস্ট ফান্ড’। এখান থেকে প্রতিবছর মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়। পরের বছর নিজের নামে গঠন করেন ‘ড. মোহাম্মদ শফি ট্রাস্ট ফান্ড’। এখান থেকেও দু’জন কৃতী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার এক শোকবাণীতে ঢাবি ভিসি বলেন, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফি ছিলেন একজন প্রখ্যাত মৎস্যবিজ্ঞানী এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষক। তিনি বিভাগের অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নে বিপুল অংকের আর্থিক অনুদান প্রদান করে এক মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বাংলাদেশে মৎস্যবিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃৎ এই অধ্যাপক মৎস্যবিজ্ঞান সংক্রান্ত অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। মৎস্যবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় অসাধারণ অবদানের জন্য গুণী এই অধ্যাপক স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।