ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। আর এই আনন্দকে উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন স্বপ্নপুরীতে ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ। স্বপ্নপুরী বিনোদন কেন্দ্রটি উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ বিনোদন কেন্দ্র। যেটি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নে অবস্থিত। স্বপ্নে দেখা স্বপ্নপুরীর প্রধান গেটে প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে আছে দুইটি ডানাকাটা পরী, দর্শনার্থী ও বিনোদন পিয়াসুদের স্বাগতম জানানোই তার কাজ। এই বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। স্বপ্নপুরী বিনোদনকেন্দ্রটি ১৯৮৯ সালে প্রায় সাড়ে ৪০০ বিঘা জমির উপরে তৈরি হয়। এটি উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি বিনোদন কেন্দ্র। যার ভিতরে রয়েছে ৮০০ টি দোকান, তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। এছাড়াও এই বিনোদন কেন্দ্রে আছে ২০০ জন মালি, নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। করোনায় দীর্ঘদিন বিনোদনকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও ঐসব কর্মীকে বেতন দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। স্বপ্নপুরী ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হাজার হাজার দর্শনার্থী এসেছে স্বপ্নপুরীতে। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, অটোবাইক সহ মোটরসাইকেল যোগে দুর-দরুন্ত থেকে এসেছে ভ্রমণ পিয়াসুরা। স্বপ্নপুরীর প্রধান গেট থেকে দুই পাশ দিয়ে আসা-যাওয়ার বিশাল বড় উন্নতমানের রাস্তা, যে রাস্তার দুই পাশে এবং মাঝখানে রয়েছে বিভিন্ন ফুল আর পাতাবাহারের গাছ। পুরো স্বপ্নপুরী রাস্তাগুলোর পাশে ফুলে আর বিভিন্ন মুর্তি দিয়ে সাজানো। স্বপ্নপুরীতে আছে চিড়িয়াখানা, যেখানে আছে ভাল্লুক, হরিণ, অজগর সাপ, বানোর, কুমির, দেশি-বিদেশি পাখি, ভোদর, উঠপাখি, সেজারু খোরগশ সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। রয়েছে সুইমিংপুল, যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিনোদন পিয়াসু শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ মনের সুখে গোসল করছেন। আরও আছে কৃত্রিম জীবজন্তু, মৎস, রংধনু, ট্রেন, স্প্রীটবোর্ড, নবথিয়েটার, ভূতের বাড়ি, বামপারকার, কোবেলে ফ্রিজবী, রোলার কোয়াটার, শান্তা মরিয়া, থ্রীজি, বরফ জগৎ, সেভেন ওয়ান্ডাস, কেবলকার, দোলনা, শাপলা, আজবগুহা, ঘোড়ার গাড়ি, টেলিকমপাস, এসি-ননএসি আবাসিক রুম, কনফারেন্স রুম, খাবার হোটেল, কসমেটিক দোকান, বেকারি দোকান সহ আরও অনেক কিছু দেখার মত দৃশ্য আছে এই বিনোদন কেন্দ্রে। স্বপ্নপুরীতে আছে আবাসিক হোটেল, এসি ও ননএসি। এসি রুমের ভাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আর ননএসির ভাড়া ১০০০ থেকে ১২০০টাকা। তার সময় সীমা সকাল ১০ টা থেকে পরদিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা,যশোর, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী থেকে বিনোদন স্বপ্নপুরীতে আসতে হলে বগুড়ার উপর দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে উত্তর-পশ্চিমে দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে আসতে হবে। পরে বিরামপুর থেকে পুর্ব দিকে নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বপ্নপুরী। এদিকে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, নীলফামারী ও রংপুর থেকে বিনোদন কেন্দ্রে আসতে হলে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা হয়ে আসার রাস্তা। রাজশাহী থেকে পরিবার সহ আসা রাকিবুল হাসান বলেন, ঈদের পরদিন দুইদিন স্বপ্নপুরীতে পরিবার নিয়ে এসেছি। অনেক ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে এতো দিন বন্দী খাঁচায় বন্দী ছিলাম। আজ আমরা মুক্ত। মনের সুখে সুইমিংপুলে গোসল করছি। আরও একদিন এখানে থাকবো। এখানে আবাসিক আছে এবং খাওয়ার অনেক সুন্দর পরিবেশ পাচ্ছি। ঢাকা থেকে আসা রোদেলা রুহি বলেন, স্বপ্নে দেখা স্বপ্নপুরীতে অনেক আনন্দ উপভোগ করতে পারছি। এর আগে এমন উপভোগ কখনও পাইনি, খুবি ভাল লাগছে। এখানকার প্রতিটি দৃশ্য চোখে ধরার মতো, বিশেষ করে সুইমিংপুলে গোসল করা। রংপুর থেকে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই বিনোদন পার্কে অনেক বার আসছি, এটি আমাদের উত্তরবঙ্গের সব চেয়ে বড় বিনোদন পার্ক। বন্ধুদের সাথে আসছি। স্বপ্নপুরীর বিশাল এরিয়া এবং চোখ ধাধানোর সতো। দিনাজপুর সদর থেকে আসা মাদ্রাসার শিক্ষক বলেন, আমরা পাঁচটি মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের নিয়ে এই স্বপ্নপুরী বিনোদন পার্কে আসছি। এটি আমাদের একটা ব্যতিক্রম সফর। এতিম ছেলেদের মনে একটু বিনোদন দেওয়ার জন্য। স্বপ্নপুরী দেখতে অনেক সুন্দর, আমরা সবাই অনেক উপভোগ করলাম। স্বপ্নপুরীর জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের এই বিনোদন পার্কটি দেখার মতো সবকিছু আছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষের বিনোদনের একটি জায়গা। কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের এই স্বপ্নপুরীতে প্রায় ১৯ টি ছবির শুটিং হয়েছে। চিত্র নায়ক শাকিব খান, রিয়াজ, রুবেল, মুনমুন ময়ৃরী সহ অনেক নায়ক-নায়িকা এখানে শুটিং করেছেন। তিনি আরও বলেন, স্বপ্নপুরীতে বাস পার্কিং ১০০ টাকা, ছোটগাড়ি ৫০ টাকা এবং জনপ্রতি ১০০ টাকা টিকিট নেওয়া হচ্ছে। আসুন একবার হলেও ঘুরে যান। প্রয়োজনে যোগাযোগ করবেন= ০১৭১২১৩৪০৯৫ এই নাম্বারে। স্বপ্নপুরীর কর্ণধার দিনাজপুর-৬ আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, স্বপ্নপুরী কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নই, এটা একটি ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। করোনা মহামরিতে দেশের সকল পর্যাটকগুলো ক্ষতিতে পড়েছিলো। আমারাও ক্ষতিতে ছিলাম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ পিয়াসু স্বপ্নপুরীতে আসছেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। দর্শনার্থীদের বিনোদন বৃদ্ধির জন্য স্বপ্নপুরীতে আরও অনেক কাজ করা হচ্ছে। আমার পক্ষে থেকে স্বপ্নপুরীতে আসার আমন্ত্রণ রইল।