বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

ক্যান্সারে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাঁচতে চান ॥ সাহায্যের আবেদন

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ মে, ২০২২

ফুসফুসে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সরদার(৭৪)। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে অসহায় এ মুক্তিযোদ্ধা উন্নত চিকিৎসা ও পরিবারের জন্য একটি বসত ঘর পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাত পেতেছেন। ওই গ্রামের মৃত কিনাই সরদারের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সরদার উন্নত চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য গ্রামের বিত্তশালীদের কাছে ঘুরেও কোন সুফল পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে চিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধার সম্মানির ওপর স্থানীয় সোনালী ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলণ করেছেন। ফলে প্রতিমাসের তার সম্মানি ভাতা থেকে নয় হাজার টাকা কর্তন করে নেয়া হচ্ছে। অভাবের সংসারে বাকি টাকা দিয়ে কোনমতে জীবন যাপন করলেও উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। উন্নত চিকিৎসার জন্য এ বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করেও অদ্যবর্ধি কোন সহযোগীতা পাননি। রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সরদার জানান, মাত্র নয় বছর বয়সে গর্ভধারীনি মায়ের মৃত্যুর পর বাবা তার খোঁজ খবর নিতেন না। অনেক কস্টে অন্যের দেয়া খাবার খেয়ে, কখনওবা একাধারে কয়েকদিন শুধু পানি পান করে কোনমতে জীবন যাপন করেছেন। ১৯ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে দিনমজুর হিসেবে তিনি (রব সরদার) ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ওইসময় থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে রামপুরা এলাকার তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মেসের আলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশে তিনি যোগদান করে আসছেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে মনে প্রানে ভালবেসে ১৯৬৯ সালে গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন রব সরদার। ওই আন্দোলনে আসাদ সহ অনেকেই শহীদ হন। সেদিন পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুত্বর আহত হয়েছিলেন রব সরদার। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন রব সরদার। একাধিকবার তিনি পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হলেও কখনও তিনি বঙ্গবন্ধুর মায়া ত্যাগ করেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনের সময় ওই মাঠেই উপস্থিত ছিলেন সেদিনের টগবগে যুবক রব সরদার। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। ২৭ মার্চ গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারাদিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় হামেদ সরদারের নেতৃত্বে তারা ১৮ জনের একটি দল প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাড়ি জমান। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা সাতক্ষীরা বর্ডার থেকে নদীপথে বরিশালের বানারীপাড়া আসার পর পাকসেনাদের সাথে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে বীরত্বের ভূমিকা পালন করেন রব সরদার। পরবর্তীতে নিজ এলাকায় ফিরে মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার নিজাম উদ্দিন আকনের নির্দেশে সোবেদার আক্কেল কমান্ডারের অধীনে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা রব সরদার। স্ত্রীকে নিয়ে পূর্ণরায় তিনি ঢাকায় চলে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর মনের কস্টে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন রব সরদার। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। একমাত্র ছেলে রিকসা চালিয়ে তার স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন। রব সরদার বলেন, পৈত্রিক সহায় সম্পত্তি বলতে বসত বাড়িতে একটি টোং ঘরের ভিটি ছাড়া আর কিছুই পাইনি। তাও ১৯৯২ সালের টর্নেডোতে উড়িয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি সংস্থা থেকে ঝুঁপড়ি ঘর উত্তোলন করে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি একবান টিন পেয়েছেন। তাদিয়েই ঝুঁপড়ি ঘরের সাথে কোনমতে একটি বারান্দা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের লাল-সবুজে পতাকা ছিনিয়ে আনলেও জীবন যুদ্ধে পুরোপুরি পরাজিত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সরদার জীবনের শেষপ্রান্তে এসে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য হয়ে জীবন যপান করতে এবং অসহায় পরিবারের জন্য একটি বসত ঘর পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের বিত্তশালীদের কাছে হাত পেতেছেন।
-সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা : আব্দুর রব সরদার, সঞ্চয়ী হিসাব নাম্বার: ১৩৫৮৬, সোনালী ব্যাংক, গৌরনদী শাখা, বরিশাল। সরাসরি যোগাযোগ: ০১৭০৫-৮০৬৩৩৯।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com