বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ন

মৌলভীবাজারের আজিজসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৌলভীবাজারের বড়লেখার আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুলসহ তিনজনের মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুজন হলেন মো. আব্দুল মতিন (পলাতক) ও আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার
কে এম হাফিজুল আলম। রায়ে ২৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে সারসংক্ষেপ অংশ পাঠ করা হয়। সকাল ১০টা থেকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। এরপর রায় পড়েন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার এবং সর্বশেষ দণ্ডসহ মূল রায় ঘোষণা করে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
মামলার তদন্ত থেকে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মতিন দুই ভাই। ১৯৭১ সালে তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রশিক্ষণ নিতে তারা ভারতের বারপুঞ্জিতে যান। তবে প্রশিক্ষণ শেষ না করে দেশে ফিরে আসেন তারা। এরপর যোগ দেন রাজাকার বাহিনীতে। দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামি আব্দুল মান্নান মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। বর্তমানে আব্দুল মতিন পলাতক। এদিন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। এসময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত, ঋষিকেশ সাহা, সুলতান মাহমুদ সীমন, সাহিদুর রহমান, জাহিদ হাসান, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, রাজিয়া সুলতানা চমন, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, মোসফেকুর রহমান ও তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক। এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার (১৭ মে) দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত ১২ এপ্রিল রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল মামলাটির রায়ের জন্যে অপেক্ষমাণ করে (সিএভি) আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন আসামি আব্দুল মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার এম. সারোয়ার হোসেন ও আব্দুল আজিজের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর এ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তদন্তকাজ শেষ হয়। তিন আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ মে ফরমান চার্জ দাখিল করার পরে ২০১৮ সালের ১৫ মে অভিযোগ গঠন করার মধ্যে দিয়ে বিচার শুরু হয়। ওই বছরের ১২ আগস্ট মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ১৭ জন সাক্ষ্য দেন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় মাঝে এ মামলার কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হওয়ার পরে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি মানবতাবরোধী অপরাধের মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই বছর ১ মার্চ মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানা পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ২ মার্চ আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com