বঙ্গোপসাগর, রামনাবাদ নদীবেষ্টিত কলাপাড়া চরান্জ্ঞলের ৩ লক্ষাধিক মানুষ অপ্রতুল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ঝুঁকিতে বসবাস করছে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো রকম জানমাল নিয়ে বেঁচে আছে চরাঞ্চলের মানুষ। বন্যা, নদীভাঙ্গন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্নিঝড়ে এরা সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। জরুরি দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে চরাঞ্চলের মানুষকে উদ্ধার করার জন্য কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গোপসাগর ও রামনাবাদ নদী ঘিরে রেখেছে পুরো কলাপাড়া উপজেলাকে। মুল ভুখন্ড ছাড়াও এ উপজেলায় ছোটখাটো ১০/১২ টি চর রয়েছে। এর মধ্যে জাহাজমারাচর, চরমোন্তাজ, তালিতাবুনিয়া, মৌডুবি, চঙ্গামতিচর, আশারচর, চরএরশাদ, লেম্বুচর, গঙ্গামতিচর, নুন্দিরচর, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মুল ভুখন্ড থেকে এসব চরে যেতে ইঞ্জিচালিত নৌকা, ট্রলার ২/৩ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বন্জ্ঞিত এ সব চরাঞ্চলের প্রায় তিন লক্ষ মানুষের বসবাস, যা পটুয়াখালী জেলার মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ। জানা যা, বঙ্গোপসাগর ও রামনাবাদ নদীবেষ্টিত এসব চরের মানুষ প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। চরাঞ্চলগুলোতে যে উঁচু পাকা বিদ্যালয় সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে তা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। বন্যা, ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় নিজ উদোগেই জীবন রক্ষা করতে হয় তাদের। প্রতি বছর বন্যা নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্নিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পরে সর্বস্ব হারিয়ে হয়ে পড়ে এসব চরাঞ্চলের মানুষ। গৃহহারা হয়ে অন্যের জমিতে ভেরিবাধের উপর কোনোমতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে অনেক সময় খোলা আকাশের নিচে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নেয়। তাদের পুর্নবাসন ও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্হা নেয়া হয় না। অনেক সময় আবহাওয়ার সংকেত পর্যন্ত তাদের কাছে পৌছায় না। দুর্যোগের সময় এসব মানুষকে উদ্ধারের জন্য নেয়া হয় না সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্হা। বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রচন্ড ঢেউ থাকায় জরুরী দুর্যোগ মুহূর্তে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য কোন নৌকা ট্রলার নদী পাড় হয়ে চরে পৌছাতে পারে না। এ ছাড়া দুর্যোগকালিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদের সহসা উদ্ধার বা চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কোনো রকম চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যু কোলে ঢলে পড়তে হয় অসুস্থ্য মানুষটিকে। চরমোন্তাজের বাবুল মাঝি(৬৫) কেরামত আলী(৫৬) বলেন,” দুর্যোগের সময় পলিথিন পেঁচাইয়া পোলাপান লইয়া কোনো রকম ঘরের মাচায় পইড়া থাহি। মইরা থাহি না বাঁইচা থাহি তা কেউ দেখতে আহে না। ঝড়ের পরেও কেউ খোঁজ লইতে আহে না। “ কলাপাড়া উপজেলার চর গঙ্গামতি জামাল ফরাজী(৬৪), সুলতান মিয়া বলেন, আমাগো চরে যে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে তা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া অনেক দিনের পুরনো বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় ঐ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে ভয়ে লাগে। কারন আশ্রয় কেন্দ্রটি জরাজীর্ন অনেক বছর আগে নির্মিত হয়েছে। তারপর আর কোনরুপ মেরামতের মুখ দেখে নাই। এ অঞ্চলে প্রতি বছর সিডর, আইলা, নার্গিস, বুলবুল, আমফান এর মত ঘুর্নিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনে ২/৩ শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও রামনাবাদ, বঙ্গোপসাগরের ভাঙনে শত শত একর ফসলি জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়। এতে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষ চরম অপ্রতুল দুর্যোগ ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। দুর্যোগের সময় উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো সরকারী কোনো নৌযান না থাকায় চরাঞ্চলের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এসমস্ত চরান্জ্ঞলের স্কুল এ্যান্ড কাম সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে ১৫৩ টি জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। এর মধ্যে তিনের দুই অংশই জরাজীর্ণ। জরাজীর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো অতি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজনীয় ব্যবস্হার এলাকাবাসী কতৃপক্ষের নিকট দাবী করছেন। এব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জরুরী দুর্যোগ মুহূর্তে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর কাজে সরকারী ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্ছিনচালিত নৌকা স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার ও ত্রান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চরাঞ্চলের সুযোগ- সুবিধা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি।