শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

হারিয়ে যাচ্ছে ছাগল লাদি গাছ!

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০২২

বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ে অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছটির নাম ছাগল লাদি। পাকা ফল দেখতে অনেকটা ছাগলের বিষ্ঠার মতো বলে এর এমন নামকরণ করা হয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলার গ্রামা লে এই ফলটি ছাগল লাদি, নাদি কিংবা লেদি নামে ডাকলেও দেশের অ ল ভেদে একে ছাগল লেদা, কাকফল, কাকজাম, হামজাম, ছাগলবড়ই, ছেরাবেরা, কাউয়াঠুটি, আমঝুম, আমজাম, খেজুরজাম, ভূতিজাম, কাজলঘড়ি ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Lepisanthes rubiginosa. আর ইংরেজি নাম Rusty sapindus,  Family-Sapindaceae. মূলত এটি বনে-জঙ্গলে অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠে। এই ফল গাছের আকার মধ্যমাকৃতির, পাতার গড়ন আম পাতার মতো হলেও অনেক নরম। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাকা ফল পাওয়া যায়। গাছে ফল গুচ্ছবদ্ধ অর্থাৎ থোকা আকারে ধরে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আধাপাকা অবস্থায় গোলাপি-লাল, পাকলে উজ্জ্বল কালো রঙ ধারণ করে। দেখতে অনেকটা কালো জামের মতো, কিন্তু আকারে অনেক ছোট, অনেকটা ক্ষুদি জামের মতো। ছাগল লাদি ফল কাঁচা ও আধাপাকা অবস্থায় ভীষণ কষওয়ালা, পাকলে কষ ভাবটা অনেকটাই কেটে যায় ও বেশ মিষ্টি হয়। ফল রুচিকর, খিদে বাড়ায়, মলস ারক, জিভ ও মুখের ঘা এবং রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। গাছে ঝুলছে টসটসে ফল। আধাপাকা অবস্থাতে গ্রামের শিশু-কিশোররা সব খেয়ে ফেলে। এটা পাখিদের ফল হলেও শিশুরা এই ফল খেতে বেশ পছন্দ করে। তবে এ বছর পাখিরা কিছুটা ছাড় দিয়েছে। অর্থাৎ ফিফটি-ফিফটি। অর্ধেকটা পাখিরা খেলেও শিশুদের জন্য রেখেছে অবশিষ্ট।
গ্রামে বসবাস করে এমন কোনো শিশু-কিশোর পাওয়া যাবে না, যে এই ছাগল লাদি ফলের স্বাদ নেয়নি। অনেকের দুরন্ত কৈশর কেটেছে এই ছাগল লাদি ফলের গাছ বেয়ে ও ফল খেয়ে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ব্যবসা করেন ত্রিশোর্ধ শহিদুল সরকার। তিনি কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ড ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, কিশোর বয়সে সারাদিন বন-জঙ্গলেই পড়ে থাকতাম। সেই সুবাদে এলাকার কোন জঙ্গলে কি আছে তা আমার নখদর্পণে থাকতো। আমরা গ্রুপ করে এই পাকা ছাগল লাদি পেরে ভাগ করে একসঙ্গে বসে খেতাম। তবে সেগুলো অনেক অতীত। এখন আর আসলে সময় সুযোগ হয় না। তা-ছাড়া বর্তমান প্রজন্ম এই ছাগল লাদি তো খাবে পরের কথা, অনেকে এই গাছ চেনেই না। কারণ আগের মতো খুব বেশি চোখে পড়ে না আমাদের দুরন্ত কৈশোর পার করে আসা ছাগল লাদি গাছ। ছাগল লাদি ফল নিয়ে কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী রাফিয়া ফাউজি রজতের সঙ্গে। সে জানায়, তার কাছে এই ছাগল লাদি ফল খেতে খুব ভালো লাগে। দেখতেও খুব চমৎকার। তাদের ঘরের পেছনে একটি ছাগল লাদি গাছ আছে। ওটাতে বেশ ফল ধরেছে। তবে প্রতিদিন পাখি ও কাঁঠবিড়ালী খায়। ঘরের জানালা দিয়ে ওগুলো দেখতে তার খুব ভালো লাগে। আবার জানালা দিয়ে লাঠির মাথায় কিছু বেঁধে সে নিজেও ওই ফল পেড়ে খায়।
কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আর.আর এন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র রাশেদ্বীন সরকার রূপণ জানায়, তাদের বাড়ির পাশে দুটি ছাগল লাদি গাছ রয়েছে। ছাগল লাদি পাখিদের ফল হলেও ওই দুটি গাছ থেকে আধাপাকা অবস্থায় গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পেড়ে নিয়ে যায়। তবে সে চেষ্টা করে ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে ওই ফলটি রক্ষা করতে। কারণ ওরা খেয়ে নিলে পাখিরা খাবে কী? ময়মনসিংহ বিভাগের ভালুকা রেঞ্জ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া সাবেক ফরেস্ট রেঞ্জার মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে ছাগল নাদি ফল গাছটি এখন বিলুপ্তির পথে। কারণ বন-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করায় এই ফলের গাছ এখন খুব বেশি চোখে পড়ে না। তবে জীববৈচিত্র রক্ষাকল্পে এই গাছটি সযত্নে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com