ধাওয়া পাল্টা ধাওয় গুলির শব্দ
ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের দিকে অগ্রসর হয়।
সংবাদ সম্মেলনের জন্য দল বেঁধে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের হামলা। এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে রড দিয়ে পেটাতে দেখা যায়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে দোয়েল চত্বর এলাকায় আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদলের মিছিলটি দোয়েল চত্বর এলাকায় ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। ছাত্রদল প্রথমে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদল কিছুদূর অগ্রসর হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পাল্টা ধাওয়া দেন। ছাত্রলীগের পাল্টা ধাওয়ায় ছাত্রদল পিছু হটে। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও রড দেখা যায়। তাঁদের হাতে ইটের টুকরাও দেখা যায়। এ ছাড়া ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীর মাথায় হেলমেট দেখা যায়। ছাত্রলীগের পাল্টা ধাওয়ার আগে দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল ছেড়ে। একপর্যায়ে গুলির শব্দ শোনা যায়। ছাত্রলীগের এক কর্মীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রদলকে পাল্টা ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ। এতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ছত্রভঙ্গ হয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কেউ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। কেউবা ঢুকে পড়েন হাইকোর্ট চত্বরের ভেতরে। অনেকে গুলিস্তানসহ যেদিকে পেরেছেন সরে গেছেন।
ধাওয়া দেওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হাইকোর্টের ভেতর ঢুকতে দেখা যায়। তাঁরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের খোঁজ করছিলেন। ঘটনাস্থলে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য থাকলেও সংঘর্ষ থামাতে তাঁদের তৎপরতা দেখা যায়নি। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হাইকোর্ট মোড়ে অবস্থান নেন। তাঁরা সেখানে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও তাঁরা বিক্ষোভ করছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার সকালে ছাত্রদলের একটি সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সেদিন মিছিল নিয়ে সেখানে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তাঁদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। হামলায় সংগঠনটির অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে ও দোয়েল চত্বরে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেয় ছাত্রদল। পরে ছাত্রলীগ পাল্টা ধাওয়া দিলে ছাত্রদল ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রতিবাদে টিএসসি চত্বরে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবারের ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আসতে পারেন এমন ধারণা থেকে ক্যাম্পাসের মধুর ক্যানটিন, টিএসসি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় স্টাম্প, কাঠ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। সঙ্গে দেখা যায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেলের ‘শোডাউন’।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত ছাত্রদল কর্মী হাসপাতালে: ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের আহত এক কর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর নাম শাহাবুদ্দিন শিহাব। তিনি নিজেকে ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শাহাবুদ্দিন শিহাব বলেন, তাঁরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। হাইকোর্ট মোড় পার হওয়ার সময় ছাত্রলীগের ১০০ থেকে ১৫০ নেতা-কর্মী অতর্কিতে তাঁদের ওপর হামলা করেন। ছাত্রলীগের হামলায় তিনি মাথায় আঘাত পান। মাথায় আঘাত পাওয়ার পর তিনি দৌড়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের ভেতরে ঢোকেন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, শাহাবুদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর মাথার আঘাত গুরুতর। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে অগ্রসর হয়। দোয়েল চত্বর এলাকায় আগে থেকে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদলের মিছিলটি দোয়েল চত্বর এলাকায় ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। ছাত্রদল প্রথমে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদল কিছুদূর অগ্রসর হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পাল্টা ধাওয়া দেন। ছাত্রলীগের পাল্টা ধাওয়ায় ছাত্রদল পিছু হটে।