ঢাকা থেকে সরাসরি নিউ জলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) আন্তঃদেশী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেন চলবে ১লা জুন থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে হলদিবাড়ী চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে। ট্রেনটির প্রথম যাত্রা হবে ভারতের পশ্চিম বাংলার উত্তর বঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের নিকট নিউ জলপাইগুড়ি (এনজিপি) ষ্টেশন হতে। বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার চিলাহাটি ও ভারতের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ী সীমান্ত দিয়ে এই রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে এবং তা চলবে ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে। গত বছর ২৭ শে মার্চ এই ট্রেনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে করোনার পরিস্থিতির কারনে এই রেল পথের ট্রেন চালু করা সম্ভব হয়নি। ট্রেনটি বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ভার্চুয়াল মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা উদ্বোধন করবেন ভারতের দিল্লি থেকে। রেলপথ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ির দুরত্ব ৫৯৫ কি.মি এর মধ্যে ভারতের অংশে ৬৯ কি.মি.। মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেন ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে ১লা জুন রবিবার দুপুর ১২.১০ মিনিটে, চিলাহাটি এসে ট্রেনটি ৩০ মি. যাত্রা বিরতি দিয়ে ঢাকা ক্যান্টম্যান্টে পৌছবে রাত ১০.৩০ মিনিটে। পরের দিন সোমবার মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা সেনানিবাস ষ্টেশন থেকে রাত ৯.৫০ মি: ছেড়ে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি পৌছবে সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে। ট্রেনটি ভারত থেকে সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার এবং বাংলাদেশ থেকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার চলাচল করবে। ট্রেনটি দিনের বেলায় ৪৫৬ আসন এবং রাতে ৪০৮ আসন নিয়ে চলাচল করবে। মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকছে ১০ টি তাপানুকুল কোচ এর মধ্যে ৪ করে ৮ এসি ফাস্টক্লাস ও এসি চেয়ার কোচ থাকবে বাকি দুইটি জেনারেটর ও ব্রেকআপ ভ্যান থাকবে। ৫ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ৫ বছরের কমবয়সী যাত্রীর ক্ষেত্রে ২০ কেজি ওজনের মালামাল বহন করতে পারবে। ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ভ্রমন কর সহ ভাড়া নির্ধরন করা হয়েছে,এসি বাথ ৪৯০৫ টাকা,এসি ছিট ৩৮০৫,এসি চেয়ার ২০৭৫ টাকা, চিলাহাটি থেকে নিউ জলাপাইগুড়ি ১২৫০ টাকা। এই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে বাংলাদেশ অংশে ঢাকা,কমলাপুর, চট্টগ্রাম ও নীলফামারীর চিলাহাটি ষ্টেশনে। ভারতের অংশে টিকিট মিলবে কলকাতার ফেয়ারলী প্যালেস ও নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে। মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনে চিলাহাটির জন্য আলাদা দুইটি কোচ বরাদ্দ থাকবে,সম্ভবত এই কোচ দুইটিতে ১০০ টি আসন থাকবে। এখানে রংপুর ও দিনজপুর জেলার পাসপোর্ট ধারী যাত্রীরা চিলাহাটি থেকে ভ্রমন করতে পারবেন। ভারত সরকারের প্রট্রোকল অনুসারে ভ্রমনকারী যাত্রার ৭২ ঘন্টা আগে আরপিসি আর কোভিট টেষ্ট কিংবা দুই ডোজ টিকা গ্রহনের সনদ থাকতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা ব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসিম কুমার তালুকদার বলেছেন যে, ভিসাসহ অন্যান্য জটিলতা অবসান হওয়ায় ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে ট্রেন চলাচলের সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ন করেছি। বাংলাদেশের রেল কোচ সংকটের কারনে আপাতত মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতীয় কোচ দিয়ে চলাচল করবে। মিতালী এক্সপ্রেসের নাম্বার করা হয়েছে ভারত থেকে আসার সময় ৩১৩১ ও ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ৩১৩২। বাংলাদেশ-ভারতের এই রুটে ট্রেন চলাচল করতো ব্রিটিস আমল থেকে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর মালবাহী গাড়ি ও পাসপোর্ট ধারী যাত্রীদের নিয়ে একটি ট্রেন চিলাহাটি- হলদিবাড়ীর মধ্যে যাতায়াত করতো, ১৯৬৫ সালে যুদ্ধের সময় তাহা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরেও এমিগ্রেশন কাষ্টম চালু ছিল পাসপোর্ট ধারী যাত্রীদের জন্য, কিন্তু ২০০৪ সালে ভারত সরকার তা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ ৫৮ বছর পর আবার সেই বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী এলাকার মানুষ আজ আনন্দিত, এই ট্রেন চালু হলে দুই দেশের সর্ম্পক আরো গভীর হবে এবং দুই দেশের মানুষ যাতায়াতের মাধ্যেমে দেখা সাক্ষাত মিলবে, গড়ে উঠবে গভীর সম্পর্ক। তাছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের একটি দাবী পুরন হতে যাচ্ছে, তাই দুই দেশের সীমান্তের মানুষের মধ্যে উৎসাহ আনন্দ ও সাজ সাজ রব পড়েছে। প্রকাশ থাকে যে,মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তৃতীয় যোগাযোকারী ট্রেন। করোনা ভাইরাসের কারনে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ২০২০ সালের ১৫ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২৯ মে চালু হতে যাচ্ছে মৈত্রী ও বন্ধন।