ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার টিলাভূমি সমৃদ্ধ লাল মাটিতে এ বছর লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় খুশি বাগান মালিকসহ ক্রেতা-বিক্রেতারা। কৃষি বিভাগ বলছে সব ঠিক থাকলে এই তিন উপজেলা থেকে ২৯ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হবে। এদিকে তিনি উপজেলার লিচু বাগনগুলোতে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন। ছবি তোলা, ঘোরাঘুরি ও খাওয়ার পাশাপাশি স্বজনদের জন্যও বাগান থেকেই লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী পাহাড়ি লালমাটি সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলার ৫৩০ হেক্টর জমিতে চায়না থ্রি-বোম্বে এবং পাটনাইয়া জাতের লিচুর আবাদ হয়েছে। আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানের গাছে গাছে রসালো লিচু ছেয়ে গেছে। এর মধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলায় বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, আউলিয়া বাজার, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া,পাহাড়পুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারের পাশাপাশি বাগানেও লিচু বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে খুশি বাগানিরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সুশান্ত সাহাস বলেন, মাটি ও আবহাওয়ার কথা চিন্তা করলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এরমধ্যে বিজয়নগর কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় অধিকাংশ লিচু বাগান রয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মৌসুম শুরুর প্রথম থেকেই সার ব্যবস্থাপনাসহ পরিচর্যার বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় অন্তত দুই হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৯ কোটি টাকা।
বিষ্ণুপুর এলাকার বাগান মালিক মাসুদ মিয়া বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। আমার লিচু বাগানে স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ভিড় করছেন। মধুমাসকে কেন্দ্র করে বাগানগুলো হয়ে উঠেছে মিনি পর্যটন কেন্দ্র। ফলন নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে মাসুদ মিয়া আরও বলেন, বাগানে এবার যে ফলন হয়েছে, আশা করছি অন্তত ৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবো। তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আগামীতে আরও ভালো এবং বেশি পরিমাণ জায়গা নিয়ে লিচু চাষ করা সম্ভব। মো. মুখলেছুর রহমান আবু তালহা নামে আরেক বাগান মালিক বলেন, গত বছর থেকে এ বছর আমরা লিচুগাছের পরিচর্যায় বেশি সময় দিয়েছি। সেজন্য ফলনও খুব ভালো হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও বেশি লিচু বাগান গড়ে তোলা সম্ভব বলে জানান তিনি। এদিকে বাজারে রসালো ও সুস্বাদু লিচু হাতের নাগালে পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। পাপাপাশি খুচরা বাজারে লিচুর ভালো পেয়ে খুশি বিক্রেতারাও।
আখাউড়া সড়ক বাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা মোবারক মিয়া বলেন, আমরা আনোয়ারপুর ও বিষ্ণুপুর থেকে লিচু কিনে এনে বিক্রি করি। এখানে আমরা সর্বনি¤œ লাভে লিচু বিক্রি করি। বাগান থেকে আমরা প্রতিহাজার লিচু ২৩শ’ টাকায় কিনে এনে ২৫শ’ টাকায় বিক্রি করছি। এ বছর ফলন ভালো হওয়ার কমদামে লিচু পাওয়া যাচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই খুশি। মো. আমীর আলী নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, আমরা বিজয়নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে লিচু কিনে আনি এবং খুবই সীমিত লাভে বিক্রি করি। এই এলাকার লিচু প্রতিশ’ হিসাবে ঠিক থাকায় ক্রেতারা ঠিকঠাক মতো লিচু পান। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলামিন বলেন, আমাদের অঞ্চলের লিচুগুলো খুব ভালো হয়। এগুলো বেশ রসালো ও সুস্বাদু। রাজশাহী অঞ্চল থেকেও আমাদের এলাকার লিচুগুলো এবার ভালো হয়েছে। অপর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিচু বাগানের ছবি ছড়িয়ে পরায় প্রতিদিন শতশত মানুষ ভিড় করছেন বিজয়নগর, আখাউড়া অঞ্চলের লিচু বাগানগুলোতে। ভ্রমণ পিপাসুরা বাগানের সৌন্দর্য ঘুরে দেখার পাশাপাশি লিচু খাওয়ার সনুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া বাগান থেকে স্বজনদের জন্য টাটকা লিচু কিনে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে তারা বেশ খুশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা থেকে বাগান দেখতে যাওয়া শিপ্রা বিশ্বাস বলেন, লিচুর জন্য বিজয়নগর এলাকা খুবই বিখ্যাত। কিন্তু পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে বাগানের লিচু দেখে খুবই ভালো লাগছে। এরকম লিচুর বাগান আমরা কোথাও দেখিনি। দিপ্তী রায় নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আমার বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। বিয়ের পর এখানে আমার প্রথম আসা। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। লিচুর বাগান এর আগে আমি কখনও দেখিনি। চন্দন বিশ্বাস নামে আরেক দর্শনাথী বলেন, বেশ কয়েক বছর আমি দেশের বাইরে ছিলাম। দেশের বাইরে এ রকম লিচু বাগান আমি কখনও দেখিনি। লিচু খেয়েও খুব ভালো লেগেছে। এখানকার খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। বিজয়নগর বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ইসহাক মোল্লা বলেন, আমাদের এলাকার লিচুর গুণগত মান অনেক ভালো। সেজন্য এখানকার বাগানে অনেক মানুষ এসে ভিড় জমান। বাগানে যাওয়ার রাস্তা আমি নিজ দায়িত্বে করে দিয়েছি, যেন লোকজন এসে কষ্ট না করে। সাধারণ মানুষ লিচু বাগানে ঘুরতে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত।-বাংলাট্রিবিউন