রুহুল আমিন বাবু অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী করে কখনো ভ্যান চালিয়ে কোন মতে যখন জীবিকা নির্বাহ করতেন সরকারের সহায়তায় পাওয়া নেপিয়ার ঘাঁস চাষ করে তিন বছরেই ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। ঘাঁস বিক্রি করে এখন পাকা বাড়ি, গরুর খামার করাসহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েও বছরে ৫ লাখ টাকা আয় করে স্বচ্ছলভাবে মাথা উচুঁ করে চলছেন সমাজে।
জেলার পাঁচবিবি উপজেলার সমসাবাদ গ্রামের দিনমজুর রুহুল আমিনের সফলতা দেখে আশপাশের অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন এই উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাঁস চাষে। তিন বছর আগে মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত উন্নতজাতের (হাইব্রিড) নেপিয়ার ও পাকচং ঘাঁস চাষ শুরু করেন। এখন তিনি আশপাশের আট বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এই ঘাঁস চাষ করছেন। ঘাঁস চাষের পাশাপাশি করেছেন দুধেল গরুর খামার। এই সাফল্য দেখে প্রতিবেশী ফেরদৌস, আব্দুল হাকিম, জিন্নাত আলী, শফিকুল সহ অনেকেই উপজেলা থেকে ওই উন্নতজাতের ঘাঁস সংগ্রহ করেন। তারাও এই ঘাঁস চাষ করে স্বাবলস্বী হয়েছেন বলে জানান।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জেলার বিপুলসংখ্যক অসহায় ও দরিদ্র মানুষ সরকারের সহায়তায় পাওয়া উন্নতজাতের ওই ঘাঁস চাষের সঙ্গে করেছেন গরুর খামার এভাবেই সফলতা পেয়েছেন ক্ষুদ্র দুধ ব্যবসায়ী হিসেবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্র বাসস’কে জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় তালিকাভুক্ত ঘাঁস চাষের মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলায় ১৮০ বিঘা, পাঁচবিবি উপজেলায় ৩৫০ বিঘা, আক্কেলপুরে ৪৫ বিঘা, কালাই উপজেলায় ৪২ বিঘা ও ক্ষেতলাল উপজেলায় ১৫ বিঘা। এসব জমিতে পাকচং, নেপিয়ার ও জার্মান ঘাঁস চাষ হচ্ছে।
পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি গ্রামের মাহফুজার রহমান জানান, এই গ্রামে ২০০ বিঘা জমিতে ঘাঁস চাষ হচ্ছে বর্তমানে। এ ছাড়াও পাঁচবিবি উপজেলার বিরনগর, বাগজানা, বালিঘাটা, পাটাবুকা, সমসাবাদ, নাসেরাবাদ, ফেনতারা, চরাকেশবপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ঘাঁসের চাষ দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বল্প পরিসরে ঘাঁস চাষ করে অনেকেই বড় খামারী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখন।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান জানান, জয়পুরহাটে নেপিয়ার জাতের ঘাঁস চাষে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় বিকল্প হিসেবে উন্নত জাতের ঘাঁস চাষের চাহিদাও রয়েছে বাজারে। কৃষকদের সহায়তা করার জন্য বর্তমানে ঘাঁসের কাটিং (মুথা) সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।