বিএনপি সরকারে এসে গাছ কেটে মাছের ঘের শুরু করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (৫ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২২ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২’- এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে সোনাদিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যে সমস্ত গাছগুলো হয়েছিল, সেগুলো কেটে বিএনপি যখন সরকারে আসে সেখানে মাছের ঘের করা শুরু করে। এমনকি সুন্দরবনের ভেতরে খাল, যেখানে ঘাষিয়াখালী চ্যানেল এটা জাতির পিতারই খনন করা; সেটা পশুর নদী থেকে সাগরে গিয়ে পড়েছে- সেটাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মোংলা পোর্টও বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার। প্রায় ২৫০টি খালের মুখ বন্ধ করে সেখানে চিংড়ি চাষ করা হতো। সেখান থেকে আমরা প্রায় ১০০ কাছাকাছি খাল উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আমি আহ্বান করবো, বাকি খালগুলো যেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নদীটা, এখানে ডলফিন রয়েছে। সেখানে পশুরাও পানি খায়। আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারও ওই নদীতে পানি খায়। আমাদের জীববৈচিত্র্য ওখানে রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ঘাষিয়াখালী বন্ধ করে দিয়ে জাহাজগুলো ওই শ্যালা নদী দিয়ে যাতায়াত শুরু করে। সরকারে আসার পরে দ্বিতীয় দফা সেই ঘাষিয়াখালী আবার আমরা কেটে দিয়েছি। কিন্তু ঘাষিয়াখালী টিকে থাকবে তখনই যখন বাকি খালগুলো সুন্দরবনের ভেতর থেকে সেগুলো উন্মুক্ত করা হবে। সরকার প্রধান বলেন, ‘এখানে আমাদের বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা… আমাদের উপমন্ত্রীও আছেন। তিনি ওই এলাকারই সংসদ সদস্য। তাকে আমি বলবো এ ব্যাপারে যেন আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমাদের যে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আছেন তাদেরও বলবো, বাকি যে খালগুলো আছে সেগুলি উন্মুক্ত করে দেওয়া। তাহলে এই খালটার নাব্যতা থাকবে এবং আমাদের সুন্দরবনের জন্য সেটা ভারসাম্য রক্ষা করবে। আমরা বিভিন্নভাবে এ সব উদ্যোগ নিচ্ছি।’
চরাঞ্চলে বৃক্ষরোপনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নদীগুলি ড্রেজিং করে পদক্ষেপ নিয়েছি। অনেক নদী ড্রেজিং করছি। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর ভেতর থেকে আমরা অনেক ভূমি উত্তোলন করতে সক্ষম হচ্ছি। এই ভূমি উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বনায়ন করা এবং পরবর্তী সময়ে সেগুলো আমরা শিল্পায়নের জন্য ব্যবহার করতে পারি, বসতির জন্য ব্যবহার করতে পারি। চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করতে পারি। সেগুলো কিন্তু আমরা করে যাচ্ছি। এটা আরও ব্যাপকভাবে কর্মসূচি আমাদের নিতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও আমরা মুক্তি পাবো। লবণাক্ততা থেকেও আমরা মুক্তি পাবো এবং আমাদের মৎস্য সম্পদ বা জলসম্পদ সেটাও বৃদ্ধি পাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
বন সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের আরেকটা বিষয়ে মানুষ খুব উৎসাহিত হচ্ছে, ছাদ বাগান। ইতোমধ্যে একজন পুরস্কারও পেয়েছেন। এ ধরনের উদ্যোগগুলোকে আরও উৎসাহিত করা উচিত। ছাদ বাগানটাও ব্যাপকভাবে কাজে লাগছে।’
করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর উপরে আবার এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার ফলে আজকে আমাদের যে সমস্ত খাদ্য আমদানি করতে হয়। পণ্য আমদানির যেমন ভাড়া অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য পাওয়াটাও কষ্টকর হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জমি উর্বর, আমাদের জনশক্তি আছে। আমাদের নিজের ফসল নিজে ফলাতে হবে। আমাদের নিজের খাদ্য নিজে গ্রহণ করতে হবে। যে সব জিনিস আমাদের প্রয়োজন, তা আমরাই উৎপাদন করবো। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে পাশাপাশি আমরা পরনির্ভরশীলতাও কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বন আমরা ইতিমধ্যে ২২ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। এটা মাত্র ১১ ভাগ পেয়েছিলাম ৯৬ সালে যখন সরকারে আসি। বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে আজকে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সামাজিক বনায়নের বিষয়টাও ব্যাপকভাবে করে যেতে হবে। এতে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠী লাভবান হয়। তারা নিজেরা গাছ শুধু লাগায় না, গাছগুলো চমৎকারভাবে পাহারা দেয়। সেটা আমি নিজে দেখেছি। আমাদের বনভূমি বৃদ্ধি করা পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নের কাজও করে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আগামী ১৫ জুন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠন। আমাদের কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, আমাদের যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ সকল সহযোগী সংগঠন; তারাও কিন্তু ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করে। এটা শুধু করেই না, করার সাথে সাথে আবার আমাকে তারা ছবিও পাঠায়। এটা বাধ্যতামূলক।’