বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

সীতাকুণ্ডে মালিকপক্ষকে বাদ দিয়ে দুর্বল ধারায় মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বি এম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ প্রায় অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনায় মালিকপক্ষের লোকজনকে বাদ দিয়ে আটজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এনিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। জার্মান বার্তা সংস্থা ডি ডব্লিউ’র এর প্রতিবেদনে এপ্রসঙ্গে বিস্তারতি তুলে ধরা হয়েছ। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মামলার ধারা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হত্যা মামলা না করে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অপরাধে মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদি সীতাকুণ্ড মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. আশরাফ ছিদ্দিক ডয়চে ভেলেকে বলেন,”ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে তারা যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবেই মামলা করেছি৷ মামলার ধারা ঠিক করেছেন ওসি সাহেব।” আইন বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে মামলাটিকে দুর্বল ও প্রভাবশালী মালিকদের রক্ষা করা হয়েছে।
মামলায় আসামি নয় মালিকপক্ষের কেউ: ঘটনার চার দিন পর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় মামলা হয়। মামলা যে আট জনকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন বি এম কনটেইরার ডিপোর ডিজিএম(অপারেশন) নুরুল আক্তার, ম্যানেজার(অ্যাডমিন) খালেদুর রহমান, সহকারী অ্যাডমিন ম্যানেজার আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ(আ্যাডমিন এন্ড কমপ্লায়েন্স) মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক(ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো, আইসিডি) আব্দুল আজিজ, সিএফএস ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, সিএফএস এক্সিকিউটিভ নজরুল ইসলাম খান এবং জিএম (সেলস এন্ড মার্কেটিং) নাজমুল আক্তার খান৷ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো কর্মকর্তা-কর্মচারীর কথা বলা হলেও বি এম ডিপোর এমডি চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানসহ মালিকপক্ষের কাউকে আসামি করা হয়নি৷
মামলার দুর্বল ধারা: মামলাটি করা হয়ছে দন্ডবিধির ৩৩৭,৩৩৮,৩০৪(ক) এবং ৪২৭ ধারায়। ৩৩৭ ধারায় অবহেলা বা বেপরোয়াভাবে আঘাতের অপরাধ। সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচশ’ টাকা জরিমানা। ৩৩৮ ধারায় গুরুতর আঘাতের অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে।
৩০৪(ক) ধারায় অবহেলা জনিত মৃত্যুর অপরাধ। শাস্তি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ তবে উদ্দেশ্য না থাকলে ১০ বছরের কারাদণ্ড। ৪২৭ ধারায় ৫০ টাকা বা তার বেশি ক্ষতি করার অপরাধ। সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড। ‘যাদের আসামি হওয়ার কথা তাদের আসামি না করে মামলাটি দুই দিক থেকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে’
প্রতিটি ধারাই আসলে অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য। কিন্তু মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন করায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মারা গেছেন। নিহতের সংখ্যাও বেড়েছে। আর ডিপোতে অনেক কেমিকেল ছিলো। কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নি নিরাপত্তা এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মচারী ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত নিরপত্তা সুবিধা।
তাহলে মামলায় কর্তৃপক্ষ হিসেবে মালিকপক্ষের কাউকে আসামি কেন করা হলো না? আর অভিযোগে তো জেনে শুনেই ডিপো অনিরাপদ রাখার বিষয়টি স্পষ্ট। তাহলে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা কেন হলো না? এর জবাবে বাদী সাব-ইন্সপেক্টর মো. আশরাফ ছিদ্দিক বলেন,”তদন্ত করে পরে নতুন আসামি করা যাবে। অজ্ঞাত আসামির বিষয়টি তো এজাহারে আছে। আর প্রমাণ হলে ধারাও পরিবর্তন করা যাবে।”
কিন্তু এখন মালিকপক্ষকে আসামি করে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা করে তদন্তে প্রমাণ না হলে তখনো তো তা পরিবর্তন করা যেত। এর জবাবে তিনি বলেন,” হ্যাঁ তাও করা যেত। কিন্তু আমি আমরা হায়ার অথরিটির সাথে কথা বলে মামলা করেছি। তারা যেভাবে বলেছেন সেভাবেই করেছি। আর মামলার ধারা ওসি সাহেব ঠিক করে দিয়েছেন। ”
সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল কবীর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,” আমরা কোনো রাজনৈতিক চাপে বা প্রভাবের কারণে মালিকপক্ষকে আসামি করিনি তা নয়। সরকারের আরো কয়েকটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আমরাও তদন্ত করছি। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে তাদেরও এজাহারভুক্ত করা যাবে৷ আর হত্যার উদ্দেশ্যে যদি এই ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ধরাও পরিবর্তন করে ৩০২ করা যাবে৷ আইনে সেই সুযোগ আছে। ”
আইনজীবীরা যা বলেন
সাবেক বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু বলেন,” যাদের আসামি হওয়ার কথা তাদের আসামি না করে এবং ৩০২ ধরায় মামলা না করে শুরুতেই মামলাটি দুই দিক থেকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। এজাহারে বি এম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ বলা হয়েছে। আইনে ডিপোর মালিকপক্ষ বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ। তাই মালিকপক্ষের লোকজন আসামি হবেন। কিন্তু করা হয়নি। আর ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা না করে অবহেলা জনিত মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে৷ যা ঠিক হয়নি। ৩০২ ধারায় মামলা হওয়ার দুইটি শর্ত আছে জ্ঞাতসারে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে ( নলেজ এন্ড ইনটেনশন)। এর যেকোনো একটি থাকলেই হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষের মৃত্যু হতে পারে এটা তো জানা বিষয়। মানুষকে মৃত্যুর মুখে রাখা এবং সেই পরিস্থিতিতে মৃত্যু তো সরাসরি হত্যার অপরাধ। আবার জানার পরও রাসায়নিকের তথ্য গোপন করা হয়েছে। ফলে এখানে ৩০২ ধরায়ই মামলা হওয়া উচিত ছিলো৷ চাইলে এখনো সুযোগ আছে।”
সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন,”এর আগে আমরা দেখেছি রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনের ঘটনায় মালিককে আসামি করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ কিন্তু সীতাকুণ্ডের ঘটনায় মালিককে আসামি করা হয়নি। এর কারণ হলো রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস-এর মালিক সরকার সমর্থক ছিলেন না আর বি এম কন্টেইনারের মালিক সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা। আইনে এখানে মালিকপক্ষের লোকজনই আগে আসামি হয়। কিন্তু তাদের বাঁচিয়ে দেয়া হলো৷ আপনারা সাংবাদিকরাও হাসেম ফুডস-এর আগুনের সময় বলেছেন মালিককে কেন আসামি করা হচ্ছেনা, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কিন্তু এখন তো সেভাবে বলছেন না।”
তিনি আরো বলেন,” সীতাকুণ্ডের ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা করে পরে তদন্তে প্রমাণ না হলে ৩০৪ ধরায় নেয়া যেত। কিন্তু আগেই ৩০৪ ধরায় করে সুবিধা করে দেয়া হলো। তবে আমাদের আইনেও সমস্যা আছে। জেনেশুনে অবহেলা আর না জেনে অবহেলার মধ্যে পার্থক্য আছে। কিন্তু আইনে সেই পার্থক্য করা হয়নি।”
কবে বাড়ি ফিরবেন রোগীরা? চট্টগ্রামের সীতাকু-ে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের বাড়ি ফেরা নিয়ে অনিশ্চতায় রয়েছেন স্বজনেরা। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত ৫ দিনের চিকিৎসায় রোগীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন, তা এখনও জানা যাচ্ছে না। গত শনিবার (৪ মে) রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকার বেসরকারি এই কনটেইনার ডিপোটিতে দুর্ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুই শতাধিক মানুষ আহত হলেও বর্তমানে ৮০ জনের বেশি রোগী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের বৃহস্পতিবারের তথ্যানুযায়ী, সেখানে চিকিৎসাধীন ২০ জন রোগীর মধ্যে লাইফ সাপোর্টে থাকা একজনসহ তিন জন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউতে রয়েছেন। বাকিরা পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড বা পিওডব্লিউতে চিকিৎসাধীন। এসব রোগীর বেশিরভাগের দগ্ধের পাশাপাশি চোখে সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এতে চিকিৎসার সময় প্রলম্বিত হওয়ায় রোগী নিয়ে স্বজনদের বাড়ি ফেরার অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে।
দুই ফায়ার সার্ভিস কর্মী গাউসুল আজম ও রবিনসহ আইসিইউতে রয়েছেন মাকফারুল ইসলাম নামে এক রোগী। এই তিন জনসহ পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে থাকা অপর রোগী ফরমানুল ইসলামের অবস্থাও ‘ভেরি ক্রিটিক্যাল’ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করে কেবল বলেন, চিকিৎসায় উন্নতি হওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
‘ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায় রয়েছেন ফারুক, নজরুল, সজিব, মহিব্বুল্লাহ, রুবেল, এস কে মইনুল হক, বদরুজ্জামান রুবেল ও শরীফ। তাদের মধ্যে প্রথম তিন জনের স্বজনেরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নজরুলের তিনটি ও সজিবের একটি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। ফারুকের ড্রেসিং করা হয়েছে। তাদের সবারই পোড়া ও চোখের সমস্যার উন্নতির কথা জানানো হয়েছে। তবে কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন।
এ ছাড়া ‘স্টেবল’ অবস্থায় থাকা সাত জন হলেন এসআই কামরুল হাসান, আমিন, ফারুক, মাসুম মিয়া, সুমন হাওলাদার, জসিমুদ্দিন ও ইমরুল কায়েস। তাদের মধ্যে একাধিকজনের স্বজনরা বলেন, প্রিয় মানুষটির সুস্থতার অপেক্ষায় আছেন তারা। কবে নাগাদ তাদের নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন, এখনও অনিশ্চিত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. আবুল কালাম বলেন, রোগীদের সার্বিকভাবে শারীরিক উন্নতি হয়েছে। আলাদা করে বললে, দগ্ধ রোগীদের কারও অপারেশন হচ্ছে, কারও ড্রেসিং হচ্ছে। তারা কবে ছাড়পত্র পাবেন তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে চোখের সমস্যা সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দেখতে আসা চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, এখানে ভর্তি প্রত্যেক রোগীর চোখেও সমস্যা রয়েছে। এরমধ্যে কর্নিয়াসহ অন্য সমস্যাও আছে। আশা করি সবাই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে, আগামী সাত দিনের মধ্যে অনেক উন্নতি হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com