বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মনের ঔদার্য ও ঐশ্বর্য

জাফর আহমাদ
  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

মানুষের খুবই মূল্যবান ও অত্যন্ত বিরল দুটো গুণ। এই দুটো গুণ যার মধ্যে আল্লাহ দান করেছেন সে পৃথিবীর নিয়ামতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। ঔদার্য অর্থ হলো, উদার, উদারতা, মহানুভবতা, বিনয় ও অকৃপণতা। আর ঐশ্বর্য অর্থ হলো, ধন, বিপুল সম্পদের মালিক, প্রভাব প্রতিপত্তি, বৈভব।
মনের ঐশ্বর্য হলো-বাস্তবে প্রচুর সম্পদের মালিক নয় কিন্তু মনের দিক থেকে যিনি ঐশ্বর্যশালী বা ধনী। তাকে আল্লাহ যে হালতে রেখেছেন তাতেই সে সন্তুষ্ট। সে কখনো খাই-খাই করে না এবং কখনো কৃপণতা করে না। এ ধরনের গুণসম্পন্ন ব্যক্তিরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো মুখাপেক্ষী হয় না। যে ঐশ্বর্যশালী বা ধনী চরম অভাবের সময়েও অন্যের অভাবে বা অন্যের প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসে।
উল্লিখিত দুটো গুণই যখন মানুষের মনের মধ্যে প্রবেশ করে, তখন এগুলো তার চরিত্রকে ভিন্নভাবে সাজায়। অর্থাৎ মহানুভবতা তার চরিত্রকে সুন্দর করে। মানুষের মধ্যে বিরল এই দুটো গুণকে বুঝতে হলে নিচের হাদিস ভালোভাবে জানতে হবে।
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত- এক লোক নবী সা:-এর খেদমতে এলো। তিনি তার স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। তারা জানালেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, কে আছো যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সাথে খাওয়াতে পারো? তখন এক আনসারি সাহাবি (আবু তালহা রা:) বললেন, আমি। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর মেহমানকে সম্মান করো। স্ত্রী বললেন, শিশুদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারি বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত করো, বাতি জ্বালাও এবং শিশুরা খাবার চাইলে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জ্বালাল, শিশুদের ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল তা উপস্থিত করল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মতো শব্দ করতে থাকলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে গেলেন, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কা- দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশি হয়েছেন এবং এ আয়াত নাজিল করেছেন। ‘তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদের অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদের অন্তরের কৃপণতা হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সূরা হাশর-৯) (বুখারি-৩৭৯৮, মুসলিম-২০৫৪)
রাসূলুল্লাহ সা:-এর হিজরত পরবর্তী আনসারদের এ গুণগুলো পৃথিবীর ইতিহাসকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে। মুহাজিররা মক্কা ও অন্যান্য স্থান থেকে নিজেদের বাড়িঘর, জমিজমা, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু ফেলে একেবারেই কপর্দকহীন অবস্থায় হিজরত করে মদিনায় এলে মদিনার আনসাররা যেই ঔদার্য ও ঐশ্বর্যের পরিচয় দিলেন, তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে প্রস্তাব দিলেন, আমাদের বাগ-বাগিচা ও খেজুর বাগান দিয়ে দিচ্ছি। আপনি এগুলো আমাদের ও এসব মুহাজির ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিন। নবী সা: বললেন, এসব লোক তো বাগানের কাজ জানে না। তারা এমন এলাকা থেকে এসেছে যেখানে বাগান নেই। এমনকি হতে পারে না, এসব বাগ-বাগিচা ও খেজুর বাগানে তোমরাই কাজ করো এবং উৎপন্ন দ্রব্যের অংশ এদের দাও। তারা বলল, আমরা মেনে নিলাম। (বুখারি, ইবনে জারির) এতে মুহাজিররা বলে উঠলেন, এ রকম আত্মত্যাগী মানুষ তারা আর কখনো দেখেনি। এরা নিজেরা কাজ করবে অথচ আমাদেরকে অংশ দেবে। আমাদের তো মনে হচ্ছে, সব সাওয়াব তারাই লুটে নিয়েছে। নবী সা: বললেন, তা নয়, যতক্ষণ তোমরা তাদের প্রশংসা করতে থাকবে এবং তাদের কল্যাণের জন্য দোয়া করবে ততক্ষণ তোমরাও সাওয়াব পেতে থাকাবে। (মুসনাদে আহমাদ)
এরপর বনি নাজির এলাকা বিজিত হলে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, এখন একটা বন্দোবস্ত হতে পারে এভাবে যে, তোমাদের বিষয়-সম্পদ এবং ইহুদিদের পরিত্যক্ত ফল-ফলাদি ও খেজুর বাগান মিলিয়ে একত্রিত করে সবটা তোমাদের মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া যাক। আরেকটা বন্দোবস্ত হতে পারে এভাবে যে, তোমরা তোমাদের বিষয়-সম্পদ নিজেরাই ভোগদখল করো আর এসব ভূমি মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া যাক। আনসারগণ বললেন : এসব বিষয়-সম্পদ আপনি তাদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করে দিন। আর আপনি চাইলে আমাদের বিষয়-সম্পদেরও যতটা ইচ্ছা তাদের দিয়ে দিতে পারেন। এতে হজরত আবু বকর চিৎকার করে উঠলেন- ‘হে আনসারগণ! আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।’
রহম বা দয়া মানবতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। দয়াবিবর্জিত হৃদয় সাধারণত উৎপীড়ক ও অত্যাচারী হয়ে থাকে। দয়ার্দ্র হৃদয় মহান দয়ালুরই করুণার দান। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের ওপর দয়া করে না, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিও রহমত বর্ষণ করেন না। (বুখারি) রাসূল সা: বলেছেন,‘দয়ালুদের প্রতি আল্লাহ দয়া প্রদর্শন করেন। তোমরা পৃথিবীবাসীদের দয়া করো, আকাশের মালিক তোমাদের দয়া করবেন।’
এই দুটো গুণ কেউ বাহুবলে লাভ করতে পারে না। ঔদার্য ও ঐশ্বর্য আল্লাহর কাছে চাইতে হয়। এগুলো আল্লাহর এমন এক নিয়ামত যা আল্লাহর দয়া ও করুণায়ই কেবল কারো ভাগ্যে জুটে থাকে। রাসূলুল্লাহ সা: আল্লাহর কাছে তা প্রার্থনা করতেন- ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই হিদায়াত, তাকওয়া সচ্ছলতা ও সংযম শালীনতা।’ (মুসলিম-৬৭৯৭)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com