মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে টেন্ডারবাজি করেননি মোহতেশাম: হাইকোর্ট

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ (এলজিইডি) এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর টেন্ডারবাজি করেননি। তার কারণে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয়, টাকা পাচারের মূলহোতাও মোহতেশাম হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এসব কথা বলেন। এসময় আদালত প্রশ্ন রাখেন এ ধরনের আসামিদের জামিন কেন দেওয়া হবে? মোহতেশাম হোসেনের জামিনের বিষয়ে রুলের শুনানি হয়। শুনানিতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আসামি মোহতেশাম স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফের ভাই। শুনানিতে আসামি ও আইনজীবীকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, আপনি একজন মন্ত্রীর (এলজিআরডির সাবেক মন্ত্রী) ভাই। আপনার একটা লিডারশিপ রয়েছে। এলজিইডি থেকে শুরু করে এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে আপনি টেন্ডারবাজি করেননি। এসময় মোহতেশাম হোসেন বাবরকে ফরিদপুরে দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মূলহোতা বলেও উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সংঘটিত অপরাধের মাস্টারমাইন্ড ও রিং লিডার মোহতেশাম। তিনি অন্যান্য আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। ছিলেন তাদের পরামর্শদাতা। তার কারণে সরকার ও দেশের মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ ধরনের আসামিদের জামিন দেবো কেন? এরপর আদালত তার জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন। এসময় আদালতে মোহতেশামের আইনজীবী বলেন, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তার চাঁদাবাজি করার কোনো দরকার নেই। তার শ্বশুর মন্ত্রী ছিলেন। পারিবারিকভাবে তারাও ধনী। তখন আদালত বলেন, যার আছে সেই তো করে। বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট।
আদালত আরও বলেন, এজাহার ও অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পারছি, আপনি (আসামি) একজন মন্ত্রীর ভাই। আপনার লিডারশিপ রয়েছে। এলজিইডি থেকে শুরু করে এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে টেন্ডারবাজি করেননি। তখন মোহতেশামের আইনজীবী বলেন, মন্ত্রীর ভাই ঠিক আছে। কিন্তু তিনি অপপ্রচারের শিকার। মিডিয়া দিয়ে বিচার করলে হবে না। এসময় আদালত বলেন, আপনি (মোহতেশাম) অপরাধী কিনা সেটা বিচারে প্রমাণিত হবে। কিন্তু নথিতে প্রাথমিক অপরাধের উপাদান রয়েছে। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, অর্থ পাচার তো একটা অর্গানাইজড ক্রাইম। এই অপরাধের পেছনে প্রধান হোতা হচ্ছেন মোহতেশাম। তার নেতৃত্বে এ সিন্ডিকেট চলেছে। তখন আদালত মামলার নথি দেখে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, উনি তো মুল নেতৃত্বে।
শুনানি শেষে আদালত আদেশ দিতে চাইলে বাবরের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান নট প্রেস রিজেক্ট (উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ) করার আবেদন জানান। পরে আদালত তার আবেদনটি ডিসচার্জ ফর নন প্রসিকিউশন করে আদেশ দেন। এর আগে মোহতেশাম বাবরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে গত ২৪ মার্চ আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক নজরুল ইসলাম। দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৬ জুন বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরে এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বরকত ও রুবেল। এছাড়া মাদক ব্যবসা ও ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন তারা। ২৩টি বাস, ট্রাকসহ বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়েছেন ওই দুই ভাই। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন তারা। রাজবাড়ীতে ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর এক আইনজীবী খুন হন। সেই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন বরকত ও রুবেল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com